প্রায় ৬-৭ মাস পূর্বে এক শীতের সকালে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বাড়ই খাল ব্রিজের পাশে গাড়ি থামিয়ে ৫৫-৬০ বছরের এক বৃদ্ধাকে ফেলে রেখে যায় এক নারী। পেছন থেকে বৌ মা বৌ মা আমারে রাইখা যাইওনা বলে কাঁদতে থাকে বৃদ্ধা। কিন্তু বউ মা আর থামে না। স্থানীয় অনেকেই সেই দৃশ্য দেখেছেন কিন্তু কাছে যাওয়ার আগেই স্থান ত্যাগ করেন বৃদ্ধার বৌ-মা ওই নারী। এভাবেই বৃদ্ধার করুন ঘটনার বর্ণনা দেন তাকে দীর্ঘ সময় আশ্রয় দেয়া মালেকা বেওয়া।
সেই থেকে বৃদ্ধার ঠিকানা কখনো গাছের নিচে, কখনো রাস্তার পাশে, কখনো আবার ব্রিজের নিচে। বর্তমানে তার ঠিকানা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর বাইপাস এলাকার আন্ডারপাসের নিচে। গতকাল সকাল ৮টায় সেই বৃদ্ধাকে খাইয়ে দিতে দেখা যায় সেখানে অবস্থান করা একজন পাগলকে। বৃদ্ধা বর্তমানে কোনো কথা বলতে পারেন না, শারীরিক অবস্থাও খুব মুমূর্ষু।
দীর্ঘ সময় ওই বৃদ্ধাকে দেখভাল করা মালেকা বেওয়া জানান, বৃদ্ধাকে রাস্তায় ফেলে যাওয়ার পর তিনি তাকে তার বাড়িতে রেখেছিলেন দীর্ঘদিন। যাকাত হিসেবে পাওয়া ৫টি কাপড় বিক্রি করে, মানুষের কাছে হাত পেতে, কখনো আবার নিজের পঙ্গু ও ভিক্ষাবৃত্তি করা ছেলের থেকে টাকা নিয়ে ওই বৃদ্ধাকে লালন পালন করেছেন। কিন্তু বাড়ির মালিক ঝুঁকি মনে করায় ওই বৃদ্ধার দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হয় তাকে। তিনি আরো জানান, বৃদ্ধা নিজের নাম ভালমতো বলতে না পারলেও ঢাকার রাঙ্গামাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার নাতি-নাতনি লেখাপড়া করে বলে তার (বৃদ্ধার) কাছ থেকে তিনি জেনেছেন। ওই বৃদ্ধার একটি মাত্র ছেলে সন্তান ছিল সে জীবিত নেই বলেও ওই বৃদ্ধার কাছ থেকে জানা গেছে বলে তিনি জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মালেক জানান, খবর পেয়ে একবার ওই বৃদ্ধাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন তিনি। সেখানে কয়েক মাস চিকিৎসা করানো হয়েছে তাকে। তবে তার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তিনি অবগত নন উল্লেখ করে বৃদ্ধার বিষয়ে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা করা যায় কিনা সে ব্যাপারে তিনি চেষ্টা চালাবেন বলে জানান