ইন্দোনেশিয়ার ফুটবল মাঠে রীতিমতো তুলকালামই হয়ে গেছে। ম্যাচকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দাঙ্গায় পদদলিত কমপক্ষে ১২৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ফুটবল লিগই ১ সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাতে জাভানিজ ডার্বিতে মুখোমুখি হয়েছিল আরেমা আর পার্সেবায়া। দারুণ উত্তেজনা ছড়িয়ে ম্যাচটি শেষ হয় ৩-২ গোলে, শেষ পাঁচ ম্যাচে এই নিয়ে তৃতীয় হারের কবলে পড়ে আরেমা।
এরপরই শুরু ‘আসল’ ঘটনার। ম্যাচের ফলাফলে অসন্তোষ নিয়ে সমর্থকরা নেমে আসেন মাঠে, বাঁধে সংঘর্ষও। এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার পর পদদলিত হয়ে বিপুল প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া এই ঘটনায় আরও প্রায় ২০০ জন আহত হয়েছেন। রোববার (২ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার একটি ফুটবল ম্যাচ চলাকালে সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এসময় দাঙ্গাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করার পর ব্যাপক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় এবং পদদলিত হয়ে হতাহতের এই ঘটনা ঘটে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বিবিসির ভাষ্য, ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব জাভাতে আরেমা এফসি নামে একটি ফুটবল ক্লাব প্রতিদ্বন্দ্বী পার্সেবায়া সুরাবায়ার কাছে হেরে যাওয়ার পর এই ঘটনা ঘটে।
ম্যাচ শেষে আরেমা ক্লাবের ভক্তরা মাঠে নেমে আসেন। পার্সেবায়ার খেলোয়াড়রা শিগগিরই মাঠ ছেড়ে যান। ওদিকে আরেমার বেশ কিছু খেলোয়াড় যারা মাঠ ছাড়তে দেরি করেছিলেন, যার ফলে তারা ভক্তদের আক্রোশের শিকার হন। নিরাপত্তাকর্মীরা এরপর পরিস্থিতি সামাল দিতে কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়েন সমর্থকদের ওপর। যা ত্রাসের সৃষ্টি করে স্টেডিয়ামে। যার ফলেই মূলত পদদলিত হওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে।
বার্তাসংস্থা এপি জানাচ্ছে, মৃতের সংখ্যা এখন ১২৭। আরও বেশ কিছু অসমর্থিত সূত্রের ভাষ্যমতে, এই সংখ্যাটা ১৫০ ছাড়িয়ে গেছে ইতোমধ্যেই। এছাড়া সংঘর্ষ ও পদদলিত হয়ে আরও প্রায় ১৮০ জন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনার বেশ কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এসব ভিডিওতে চূড়ান্ত বাঁশি বাজানোর পরে ভক্তরা পিচের দিকে দৌড়াতে দেখা যায়। পুলিশ তখন টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে, যার ফলে ভিড়ের মধ্যে পদদলিত এবং শ্বাসরোধের ঘটনা ঘটে বলে পূর্ব জাভার পুলিশ প্রধান বলেছেন। নিহতদের মধ্যে দুই পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন।
এখানেই শেষ নয়। ক্ষুব্ধ ফুটবল ভক্তরা এখানেই ক্ষান্ত হননি। মাঠের বাইরে ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে, পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগও করেছেন সমর্থকরা।
ইন্দোনেশিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (পিএসএসআই) বলেছে, এই ঘটনায় তারা তদন্ত শুরু করেছে। এছাড়া এই ঘটনাটি ‘ইন্দোনেশিয়ার ফুটবলের মুখকে কলঙ্কিত করেছে’ বলেও উল্লেখ করেছে তারা। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আগামী এক সপ্তাহ ইন্দোনেশিয়ার ফুটবল লিগ স্থগিত থাকবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে ফুটবল লিগ কর্তৃপক্ষ।