প্রায় সপ্তাহখানেক আগে সুমাইয়া খাতুনের (২১) সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছিল রাজন শেখের (৩২)। সোমবার (১৫ জুলাই) যথারীতি উৎসবমুখর পরিবেশে বর-কনে কবুল পাঠ করে একে অপরকে জীবনসঙ্গী করে নিলেন। মনের ভেতরে অজানা অনেক স্বপ্ন বুনে নতুন জীবনে পা রাখলেন তারা। নব-দম্পতির চোখজুড়ে যখন একের পর এক সোনালী স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছিল নিয়তি তখন আড়াল থেকে মিটিমিটি হাসছিল।
কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে স্বপ্নগুলো পড়ে রইলো স্বপ্নের জায়গায়। রইলো না স্বপ্ন বোনার মানুষগুলো। একটি ভয়ংকর দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন বর-কনে দু’জনেই। একই সঙ্গে প্রাণ গেলো বিয়ে উৎসবের সফরসঙ্গী আট জনের। দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ করতে হলো আরও চারজনকে। আর নিয়তির এ নিষ্ঠুর খেলায় বিয়ে হলেও ফুলশয্যা হলো না রাজন আর সুমাইয়ার। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কান্দাপাড়া গ্রামের আলতাফ হোসেন ও উল্লাপাড়া উপজেলার মৃত গফুর শেখের বাড়িতে এখন উৎসবের পরিবর্তে চলছে শোকের মাতম।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকালে কান্দাপাড়া গ্রামের আলতাফ হোসেন বাড়িতে গেলে দেখা যায় হাজারও মানুষের ভিড়। সবারই চোখ ছিল অশ্রুসজল। হাজার লোকের ভিড়েও একটি শোকাবহ নিস্তব্ধতা পুরো গ্রামজুড়ে।দাফনের জন্য মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: বাংলানিউজ
আলতাফ হোসেনের ছেলে রাজন শেখের বাসরঘরটি এখনও তরতাজা ফুলে সজ্জিত। তবে তাতে ছিল না কোনো সুভাষ। কিন্তু হায়! এ খাটে যাদের ঘুমানোর কথা ছিল আজ তারা শেষ বিদায়ের খাটিয়ায় চড়ে মাটির বিছানা চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন। সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় কান্দাপাড়া গ্রামের জোয়াদ আলী, অনিক, রুবিয়া খাতুন, ঝর্ণা খাতুন বাবলু শেখসহ প্রতিবেশীদের সঙ্গে।
তারা বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ আগে উল্লাপাড়া উপজেলার এনায়েতপুর গুচ্ছগ্রামের মৃত গফুর শেখের মেয়ে সুমাইয়ার সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় রাজনের। সোমবার (১৫ জুলাই) দু’টি মাইক্রোবাসে প্রায় ৩০ জন বরযাত্রী নিয়ে যান তারা। উৎসবমুখর পরিবেশে খানা-পিনা শেষে কলেমা পড়ে বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিকেলে নব-দম্পতিকে নিয়ে কনের বাড়ি থেকে কামারখন্দ-উল্লাপাড়া আঞ্চলিক সড়ক পথে আনন্দের সঙ্গে ফিরছিলেন তারা। এ পথেই বেতকান্দি এলাকায় অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয় বর-কনেবাহী মাইক্রোবাসটি। আর এ দুর্ঘটনাতেই পরিসমাপ্তি ঘটে নব-দম্পতি রাজন-সুমাইয়ার জীবনের।
স্থানীয়রা জানান, এরইমধ্যে রাজন ও তার মামাতো ভাই আলিফের (৯) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। দুপুরের পর উল্লাপাড়ায় সুমাইয়া ও তার ভাইয়ের স্ত্রী মমতার মরদেহ দাফন করা হবে। এছাড়াও নিহত বাকিদের মরদেহ নিজ নিজ গ্রামে দাফনের প্রক্রিয়া চলছে।