ভোলার মনপুরা উপজেলায় মানুষের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছে মায়াবী হরিণ রিউ।
উপজেলার উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত চর নিজাম গ্রামে মানুষ ভালোবেসে হরিণটিকে খাবার দেয়।
ক্ষুধা লাগলে গৃহস্তের ঘরের রান্না ঘরে চলে আসে হরিণ রিউ।
স্থানীয়দের কাছে জনপ্রিয় এ হরিণটি দিন-রাত বন প্রহরীদের সাথে বন পাহারা দেয়। ব্যতিক্রম এ হরিণ মানুষ দেখেলে ভয় পায় না কিংবা পালিয়ে যায় না। হরিণটির এমন কা** দেখার জন্য জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও অন্য জেলা থেকে মানুষ ছুটে আসে।
চর নিজাম (কালকিনি) বিট কর্মকর্তা মোঃ এস এম আমির হোসেন জানান, প্রায় ২ বছর আগে পানিতে ভেসে আসে এ হরিণটি। তখন সে খুব অসুস্থ ছিল। আমরা চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলি। তারপর বনে অবমুক্ত করি। কিন্তু সে তারপরই আবার আমাদের অফিসের সামনে যেখানে তার চিকিৎসা করা হয় সেখানেই চলে আসে।
তিনি বলেন, তারপর আবারও তাকে বনে ছেড়ে দিয়ে আসলেও সে চলে আসে। এরপর থেকে এখানে রয়ে যায় রিউ। আমাদের বন প্রহরীদের সাথে গহীণ বনে যায়। আবার ফিরে আসে। বলা যায় সে বন প্রহরিদের সাথে বন পাহারা দেয়। আমরা এটির রিউ নাম দেই। সে নাম ধরে ডাকলেই চলে চলে আসে। এলাকার মানুষ হরিণটিকে অনেক ভালবাসে। ধারণা করা যাচ্ছে সে মানুষের ভালবাসায় মুগ্ধ হয়ে লোকালয়ে রয়ে গেছে।
বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, ভোলার মনপুরা উপজেলার উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত চর নিজাম। কেউ বা চর নিজামকে কালকিনির চর বলে। চর নিজামের চার দিকে বঙ্গোপসাগ। বর্তমানে এ চরে প্রায় ৬ হাজার মানুষের বসবাস রয়েছে। এখানে ৫ হাজার ২৩৮.৭৩ একর বন রয়েছে। এ বনে প্রায় ৩ শতাধিক হরিণ রয়েছে। তবে মায়াবী হরিণ রিউ সবার থেকে আলাদা।
চর নিজাম এলাকার বাসিন্দা মোঃ রফিক, সাজাহান ও কামাল হোসেন জানান, হরিণ রিউ বন প্রহরীদের সঙ্গে বন পাহারা দেয়। পাহারা শেষ হলে মানুষের ঘরের আঙ্গীনায় ঘুরে বেড়ায়। সবাই তাকে ভালবেসে খাবার দেয়। তার নাম ধরে ডাক দিলেই সে ছুটে আসে। তার আচারণে মনে হয় সে মানুষের ভালোবাসা বোঝে। কেউ যদি তাকে রাগ করে কথা বলে তাহলে চলে যায়। আবার কেউ যদি তাকে ভালবেসে ডাকে তাহলে তার কাছে চলে আসে। সাবাই হরিণটিতে অনকে ভালবাসে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন জানান, হরিণটির ক্ষুধা লাগলে যদি কেউ খাবার না দেয়। তাহলে লোকজনের বাড়ির রান্না ঘরে ঢুকে বসে থাকে। ভাত দিলে খেয়ে আবার চলে যায়।
স্থানীয় মালেক মিয়া বলেন, চর নিজামের বনে অনেক হরিণ আছে। রিউ নামের হরিণটির সাথে অন্য হরিণের দেখা হয়। তাদের সাথে পানি ও খাবারও খায় কিন্তু সে তাদের সাথে কখনো চলে যায়নি। এলাকার মানুষের ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে হরিণটি বনে না থেকে লোকালয়ে থাকছে।
শহরের সদর রোড এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় সাংবাদিক জুয়েল সাহা বলেন, আমি হরিণটির এমন আচরণের কথা শুনে সরেজমিনে দেখতে যাই। গিয়ে আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। বনের হরিণ যে এমনভাবে মানুষের সাথে মিশতে পাড়ে তা আসলেই বিস্বয়কর ব্যাপার। সূত্র: বাসস