“বৃদ্ধ ভিক্ষুকের ১৯ হাজার টাকা ছিনতাই, কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে বার বার মূর্ছা” শিরোনামে অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ প্রকাশের পর ফেনীর সেই অসহায় বৃদ্ধের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন রাসেল গাজী (৩৫) নামে এক ইতালি প্রবাসী।
দুবেলা-দুমুঠো ভাতের যোগান দিতে বাধ্য হয়ে ভিক্ষা বৃত্তিকে বেছে নেওয়া শত বছরের কাছাকাছি কঙ্কাল সদৃশ্য বৃদ্ধ লাতু মিয়াকে ২০ হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছেন প্রবাসী রাসেল গাজী (৩৫)।
শুক্রবার (১৪ জুন) বিকালে সময়ের কণ্ঠস্বরের সাব-এডিটর রবিউল ইসলামকে মুঠোফোনে কল দিয়ে সুদূর ইতালি থেকে বৃদ্ধকে এই সহায়তা পাঠান মানবতার সেবক রাসেল গাজী।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১১ জুন) রাতে ফেনী হাসপাতাল মোড়ে অভিনব কায়দায় ভিক্ষুকের কাছে থাকা প্রায় ২০ হাজার টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ওই বৃদ্ধ গতকাল বুধবার সারাদিন টাকার জন্য কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে বারবার মুর্চ্ছা যান।
এ ঘটনা সাব-এডিটর রবিউল ইসলামের নজরে আসলে তিনি নিজ উদ্যোগে ফেনী মডেল থানাসহ বিভিন্ন স্থানে মুঠোফোনে তথ্য সংগ্রহ করে বৃহস্পতিবার দুপুরে সময়ের কণ্ঠস্বরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। শুধু তাই নয় ফেনী প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ রিয়েলের মাধ্যমে এদিন সন্ধ্যায় বৃদ্ধের সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়।
ভিডিওটি প্রকাশ হওয়ার পর ইতিমধ্যে সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৩ লক্ষের বেশি মানুষ ভিডিওটি দেখেছেন। এছাড়া ১২ হাজার লাইক ও চার হাজার ফেসবুক ইউজার এটি শেয়ার করেছেন।
এদিকে মানুষের কাছে হাত পেতে দু’এক টাকা করে তিলে তিলে জমানো বৃদ্ধের টাকাগুলো ছিনতাই হওয়ার সংবাদ দেখে শুক্রবার দুপুরে সময়ের কন্ঠস্বরের নিউজ রুমে যোগাযোগ করেন মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী প্রবাসী রাসেল গাজী।
পরে সাব-এডিটর রবিউল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে বৃদ্ধ লাতু মিয়াকে তার হারানো পুরো ২০ হাজার টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেন এবং সন্ধ্যা গড়ানোর আগেই মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে সেই টাকা পাঠান।
প্রবাসী রাসেল গাজী মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানার ভাগ্যকুল মান্দ্রা গ্রামের মৃত গাজী আক্কেল আলীর পুত্র। তিনি দীর্ঘ একযুগ ধরে ইতালির রোমে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন।
পেশায় ব্যবসায়ী গাজী রাসেল আট ভাইয়ের মধ্যে তিনি সপ্তম, আর ভাই-বোনদের মধ্যে তিনি ১৪তম। ২০০৬ সালে বাবার মৃত্যুর পর তার স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বৃদ্ধা মা নিজ গ্রামেই আছেন। তবে তার বয়স হয়ে যাওয়ায় ইচ্ছে থাকলেও ভিসা জটিলটায় নিজেদের কাছে নিতে পারছেন না ছেলে রাসেল গাজী।
জানতে চাইলে রাসেল গাজী জানান, আপন ভাইদের কাছে প্রতারণার শিকার হয়ে আমি আমাদের সব জমি-সম্পদ হারিয়েছি ৷ আমি বুঝি হারানোর কষ্ট কতটা বেদনার। ভিক্ষুক চাচাও আজ হয়তো তার শেষ সম্বল ২০ হাজার টাকা হারিয়ে তার মনে কষ্টের ঝড় বইছে।
তিনি বলেন, প্রায় শত বছরের একজন বৃদ্ধ শহরে ভিক্ষা করেন, আবার তারই টাকা কিনা কিছু মানুষ রূপি অমানুষ ছিনতাই করে নিয়ে যায়। সময়ের কণ্ঠস্বরে নিউজটি দেখেই তাকে সহায়তা করতে মন ছটফট করছিল। এমন যেন না হয় চাচামিয়া তার তিলে তিলে জমানো ২০ হাজার টাকার শোকে কষ্টে মারা যায়, আর সেটা মনে করেই আমি টাকাগুলো পাঠিয়েছি।
প্রবাসী রাসেল গাজী নিজের ও তার বৃদ্ধা মাসহ স্ত্রী-সন্তানদের সকলের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
এদিকে শুধু গাজী রাসেলই নয়, সৌদি প্রবাসী নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজারের কবির হোসেন ও নোয়াখালী সেনবাগের শহীদ মিলে পাঠিয়েছেন ৫ হাজার টাকা, সিলেট থেকে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন ৫ হাজার, ঢাকার এক কলেজছাত্র ১০০ টাকা ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট আবু আক্তার হোসেন খান বুলু ১,৯৬০ টাকা সহায়তা পাঠিয়েছেন পাঠিয়েছেন।
উল্লেখ্য, সহায়তা পাওয়া টাকাগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে শিগগিরই ওই বৃদ্ধের কাছে হস্তান্তর করবে সময়ের কণ্ঠস্বর পরিবার।