সন্ধ্যা নেমে আসলেই কক্সবাজার শহরে জ্বলে উঠে ল্যাম্পপোস্টের আলো। অন্ধকারকে ঢেকে দেওয়া এ আলোর নিচে দাঁড়িয়ে কিছু মানুষ তাদের স্বপ্ন বিক্রি করে। সে স্বপ্নের ফেরিওয়ালারা সমাজে ‘পতিতা’ নামে পরিচিত। এরাই আবার অনেকের কাছে রাতের রজনীগন্ধা।
জীবনের চরম নিয়তি মেনে বেঁচে থাকার তাগিদে এসব পতিতারা ভিড় করে শহরের বিভিন্ন রাস্তার ফুটপাতে, মোড়ে, চেনা-অচেনা গলিতে। এমনই একটা জায়গার নাম কোর্ট বিল্ডিং। এখানে রয়েছে চিপ জুডিশিয়াল মেজিস্ট্রেট আদালত ও জেলা দায়রা আদালত। আছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। সেই আদালত পাড়ার সামনের ফুটপাতে দিনের বেলায় সাধারণ মানুষের অবাধ চলাচল থাকলেও রাতের বেলায় বসে পতিতাদের হাট।
সন্ধ্যার পর শহরের আশপাশের এলাকা থেকে এখানে ছুটে আসে পতিতারা। আদালতের পাশ ঘেঁষে ফুটপাতে এবং লালদীঘির পাড়ে খদ্দেরের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে তারা। তাদের বিভিন্ন আপত্তিকর কর্মকাণ্ডে এলাকাবাসীর পাশাপাশি পথচারীদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।
অভিযোগ রয়েছে, এসব পতিতাদের দ্বারা নিয়মিতই ধোঁকাবাজির স্বীকার হচ্ছে খদ্দেররা। সেই সাথে ঘটছে ছিনতাইয়ের মত ঘটনা। ধোঁকাবাজির স্বীকারের ঘটনা ঘটছে হরহামেশাই। লোক-লজ্জার ভয়ে কেউই এর প্রতিবাদ করে না।
ধোঁকাবাজির বর্ণনা দিতে গিয়ে রিকশাচালক (রিকশা নং-১৭৮) জসিম উদ্দিন জানান, সাধারণত এদেরকে (পতিতা) নিয়ে কোনো (খদ্দের) কোথাও গেলে ভাড়া ইচ্ছেমত হাকানো যায়। তাদের ৫০০ বা ১ হাজার টাকা অ্যাডভান্স দিয়ে রিকশায় তুলতে হয়। রিকশায় কিছু দূর গিয়ে তারা (পতিতারা) লোকসমাগম দেখে রিকশা থামাতে বলে। তখন তারা খদ্দের ফেলে নেমে পড়ে। আর খদ্দেরকে বলে ঝামেলা করলে পুলিশ ডেকে যৌন হয়রানির অভিযোগ দিবে। মাঝে মাঝে তাদের (পতিতা) পছন্দমত জায়গায় নিয়ে (খদ্দেরকে) টাকা-পয়সা, মোবাইল রেখে দেয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলা দায়রা আদালতের সামনে থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পশ্চিম পাশে রেকর্ড রুমের সামনের ফুটপাত পর্যন্ত দাঁড়িয়ে আছে বিভিন্ন বয়সের ২০-৩০ জন পতিতা। তাদেরকে পছন্দ অনুযায়ী টার্গেট করে সামান্য দূরে দাঁড়িয়ে আছে খদ্দেররা। তাদের পাশে দুই একটি ঝালমুড়ি, চানাচুরের দোকান। ফুটপাতের নিচের রাস্তায় খালি রিকশা নিয়ে বসে আছে চালকেরা। পথচারীর চলাচল সেই পাশ দিয়ে একেবারেই সীমিত।
এলাকাবাসী ও আশপাশের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, কোন পথচারী না জেনে সন্ধ্যার পর ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করলে পতিতাদের হেনস্তার শিকার হতে হয়। বিশেষ করে মুরব্বি (দাড়ি ওয়ালা) টাইপের লোকদের। তাদেরকে জামার কলার ধরে টাকা দাবি করা হয়। অনেকের হাতে থাকা ব্যাগও রেখে দেয়া হয়। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মারধর করা হয়। সেই সঙ্গে উচ্চস্বরে গালিগালাজ করা হয়। লোকলজ্জার ভয়ে টাকা দিতে বাধ্য হয় তারা।
ওই এলাকার বাসিন্দা আজমত আলী বলেন, আগে এরা (পতিতা) রাস্তাসহ আমাদের গলির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতো। আমরা মহল্লাবাসী মিলে গলির মুখে গেইট দেয়াতে আর আসে না। মহল্লার সামনের জায়গায় আসলে আমরা তাদের তাড়িয়ে দেই। আদালতের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে আমরা তাদের কিছু বলতে পারি না। তাদের কর্মকাণ্ডে ফ্যামিলি নিয়ে মাঝে মাঝে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।
সেখানকার ঘরোয়া হোটেল কস্তূরী রেস্টুরেন্টের এক কর্মচারী বলেন, তাদের হাতে প্রায়ই পথচারীরা মারধরের স্বীকার হয়। মাঝে মাঝে মানুষের জামা-কাপড় টেনে ছিড়ে ফেলে ওরা। যারা আসে (খদ্দের) তাদেরকে আটকে রেখে টাকা-পয়সা রেখে দেয়। কয়েকদিন পরপর পুলিশ এসে লাঠিপেটা করে তাদের তাড়িয়ে দেয়। পুলিশ যাওয়ার ১০ মিনিট পর আবার চলে আসে।
এ ব্যাপারে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দিন খন্দকার বলেন, নিয়মিতই এদেরকে এখান থেকে উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদের পর দু-একদিন ঠিক থাকে, তারপর আবার চলে আসে। আমাদের কাছে কারও টাকা-পয়সা বা মোবাইল রেখে দেওয়ার কোন অভিযোগ আসেনি।