জমিদার বাবার মেয়ে ছিলেন রাজলক্ষ্মী। হয়তো এ কারণেই তার নাম রাজলক্ষ্মী। এক সময় রাজ কন্যার মতো থাকলেও আজ ভূমিহীন আর অভাব নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন শতবর্ষী রাজলক্ষ্মী। স্বামী আর মেয়েকে হারিয়ে বর্তমানে একমাত্র ছেলেকে নিয়েই সরকারি জমিতে কুঁড়ে ঘর করে থাকেন তিনি। রাজলক্ষ্মীর কথায় তার জীবন এখন অলক্ষ্মী!
পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের পরিঘাটা গ্রাম। যে গ্রাম থেকেই সুন্দরবনের বাঘের গর্জন শোনা যায়। সরানন হালদারের স্ত্রী তিনি। স্বামী মারা গেছেন ১০ বছর আগে। একমাত্র মেয়ে বিয়ে দেয়ার ২ মাসের মাথায় মৃত্যু হয়। তিনবার বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় নিজেদের জমিসহ সর্বস্ব হারিয়ে আজ সরকারি জমিতে কুঁড়ে ঘরে থাকেছেন বহু বছর ধরে।
একমাত্র ছেলের দিন মজুরির টাকা দিয়ে সংসার চলে না। অভাবের তাড়নায় বৃদ্ধ বয়সেও কখনো দু-এক বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। স্বামীহারা, মেয়েহারা, বার্ধক্যজনিত নানা রোগ আর ভিটেমাটি ছাড়া জীবনটা অলক্ষ্মী ছাড়া আর কিছুই নয়। সব মিলিয়ে রাজলক্ষ্মীর জীবনই যেন অলক্ষ্মীতে পরিণত হয়েছে।
দুপুর ঘনিয়ে আকাশের সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়েছে তখন দুপুরের খাবার খাওয়াতো দূরের কথা, রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছেন রাজলক্ষ্মী। ঘরের সামনে বসে কি করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে রাজলক্ষ্মী বাংলানিউজকে বলেন, পুঁই শাকের বিচি (আটি) রান্না করবো। ভাত হয়ে গেছে, রান্নার কিছুই নাই। ওয়াপদার পাশে বুড়া পুঁইশাকের আটি রান্না করবো আর আলু ভর্তা দিবো।
সরকারি ভাতা পান কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বাবারে চেয়ারম্যানের কাছে যাইতে পারি না। আমার কপালডাই অলক্ষ্মী, না হইলে এতো কষ্ট ক্যা আমার কপালে?
কান্নাজড়িত কণ্ঠে রাজলক্ষ্মী বাংলানিউজকে বলেন, তিনবার ওয়াপদা ভাঙছে, আমার সবকিছু শেষ হইয়া গেছে। জমি শেষ, বাড়ি-ঘর শেষ, স্বামী-মেয়ে নেই। সরকারি জমিতে থাইক্যাও পাইনা বয়স্ক ভাতা। আমার কপালডাই পোড়া।
এ বিষয়ে কাঠালতলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, রাজলক্ষ্মী যদি বয়স্ক ভাতা বা বিধবা ভাতা না পেয়ে থাকেন তাহলে খুব শিগগিরই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।