শুক্রবার দুপুরে (৭ ডিসেম্বর) কিশোরগঞ্জে সুইসাইড নোট লিখে মাস্টার্স ফলপ্রত্যাশী এক তরুণী আত্মহত্যা করেছেন। নিহত তরুণীর নাম ফৌজিয়া খানম অন্তু (২৩)।
কিশোরগঞ্জের জেলা শহরের রাকুয়াইল এলাকার নিজ বাসায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন ফৌজিয়া। আত্মহত্যার আগে সুইসাইড নোটে তিনি উল্লেখ করেন প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে।
ফৌজিয়া খানম অন্তু কুয়েতপ্রবাসী ফরিদ উদ্দিন খান এর মেয়ে। তিনি সরকারি গুরুদয়াল কলেজ থেকে ভূগোল বিষয়ে অনার্স পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হিসেবে উত্তীর্ণ হওয়ার পর মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তিন বোন ও এক ভাই এর মধ্যে ফৌজিয়া সুলতানা অন্তু সবার বড়।
শনিবার দুপুরে শহরের রাকুয়াইল এলাকার বাসায় গেলে দেখা যায় এক হৃদয়বিদারক পরিবেশ। ময়নাতদন্ত শেষে নিহত ফৌজিয়া খানম অন্তু’র লাশ এনে রাখা হয়েছে বাসা সংলগ্ন ফাঁকা জায়গায়।
পর্দাঘেরা লাশকে ঘিরে মাতম চলছে পরিবারের সদস্য, সহপাঠি ও আত্মীয়স্বজনের। ভীড় জমিয়েছেন এলাকাবাসী ও কৌতূহলী নারী-পুরুষ ও শিশু-বৃদ্ধরাও। সবার চোখেই জল। মা সুলতানা খানম বার বার মূর্চ্ছা যাচ্ছেন। এইচএসসি পড়ুয়া ছোট দুই বোন ফারিয়া খানম শান্তু ও মরিয়ম খানম ইতু’র কান্না আর আহাজারি যেন থামছেই না। এসএসসি পরীক্ষার্থী একমাত্র ছোট ভাই ওবায়দুল হক খান তানভীরের বেদনার্ত চোখে কেবলই অশ্রু।
স্বজনেরা জানান, শুক্রবার দুপুরে মা সুলতানা খানম ছোট দুই মেয়ে ও ছোট ছেলেকে নিয়ে শহরের গাইটাল এলাকার অতিথি কমিউনিটি সেন্টারে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। অনেকবার বলেও সেখানে বড় মেয়ে অন্তুকে তিনি বিয়ের অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতে পারেননি। মেয়ের কথামতোই বাইরে থেকে বাসায় তালা দিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানটিতে যোগ দিতে গিয়েছিলেন তাঁরা। বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে বিকালে বাসায় ফিরে ফ্যানের সাথে মেয়ের নিথর দেহ ঝুলতে দেখেন সুলতানা বেগম। পাশেই পড়ে ছিল পেন্সিল দিয়ে ডায়েরির পাতা ছিঁড়ে লেখা একটি চিরকুট।
চিরকুটে লেখা ছিল, “আমার মৃত্যুর জন্য সহকারী জজ সুমন মিয়া (গাইবান্ধা) দায়ী। সে আমার সব কিছু জেনেও আমাকে স্বপ্ন দেখাইছে। আমার সাথে অনেক দূর পর্যন্ত আসছে। এখন আমি তার যোগ্য না খারাপ মেয়ে বলে ছেড়ে দিল। বাট এখন আর খাইরুল ইসলাম (ভূগোল পরিবেশ) মাস্টার্স আমার ক্লাস মেট তার সাথে আমার এক সময় একটা এফেয়ার ছিল। তারে আমি হেল্প করতে গিয়ে নিজের ইমেজ নষ্ট করল। সব সময় হেল্প করেছি। আর সে আমার নামে এতো খারাপ খারাপ ছড়ায়। আর খাইরুল চিনে এই ছেলেকে। সে আমার নামে অনেক মিথ্যা কথা বলেছে। কোন দিন তার সাথে এফেয়ার ছিল না। তারপরও এমন কথা বলছে, যা মুখে বলাও পাপ।
আমার আম্মা তোমারে অনেক জ্বালিয়েছি ছোটবেলা থেকে। তুমি পারলে আমাকে ক্ষমা কর। অন্তু” চিরকুটের নিচে আরো লেখা ছিল, “আমার লাশটি কাটাছিঁড়া করতে দিও না।”
এছাড়া চিরকুটের আরেক পৃষ্ঠায় লেখা ছিল, “আম্মা কোনদিন এদের ছেড়ে দিও না। দাদার কাছে গিয়ে হলেও এর বিচার যেন হয়। তোমার কাছে এই অনুরোধ।” স্বজনদের সাথে কথা বলে চিরকুটে উল্লেখ করা সহকারী জজ সুমন মিয়া (গাইবান্ধা) সম্পর্কে তেমন নির্দিষ্ট কিছু জানা যায়নি। এছাড়া সহপাঠী খাইরুল ইসলাম সম্পর্কেও একইভাবে সুনির্দিষ্ট কিছু তারা জানাতে পারেননি। এলাকায় দারুণ মেধাবী মেয়ে হিসেবে পরিচিত ফৌজিয়া এভাবে আত্মহননের পথ বেছে নেয়ায় সবাই হতবাক। তারা এই আত্মহত্যার প্ররোচণাকারীদের বিচার দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করবেন বলেও জানান।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আহসান হাবীব জানান, তদন্তের জন্য তারা নিহত ফৌজিয়ার সুইসাইড নোট এবং তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি জব্দ করেছেন।