বরগুনার বেতাগী উপজেলার দক্ষিণ হোসনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে আউশ-আমন ধান চাষ করছেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক।
শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা, শরীরচর্চা ও বিনোদনের জন্য নির্ধারিত মাঠে স্কুল কমিটির সভাপতি ব্যক্তিগত লাভের আশায় ধানসহ রবিশস্য চাষ করছেন।
এ ছাড়া বিদ্যালয়ের সভাপতির বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন স্থানীয় বেশ কয়েকজন অভিভাবক।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নে ১৯৭২ সালে ১ একর ২১ শতাংশ জমির ওপর দক্ষিণ হোসনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মাঠে ধান চাষ করছেন জমিদাতাসহ তৎকালীন বিত্তবান ব্যক্তিরা।
বিদ্যালয়ের সামনে সামন্যতম খালি জায়গা নেই। বর্তমানে ১০ শতক জায়গার ওপরে বিদ্যালয়টি অবস্থিত থাকলেও বাকি জমিতে চলছে ধান চাষ। আর এমন কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান ও প্রধান শিক্ষক জলিল আহম্মেদ।
বিদ্যালয়ে ৫ শিক্ষক ও ৩৮ ছাত্রছাত্রী রয়েছে। দেখা যায়, পঞ্চম ও চতুর্থ শ্রেণিতে সাত শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছে এবং ৩য় শ্রেণিতে বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় ছয়জন থাকলেও উপস্থিত ছিল দুজন।
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ছিল খালি শ্রেণিকক্ষ। শিক্ষার্থীদের জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও ক্রীড়া-বিনোদনের জন্য বিশাল মাঠ থাকলেও সভাপতির নেতৃত্বে বর্তমানে সেটি আমন ক্ষেত। মাঝেমধ্যে কোনো জাতীয় অনুষ্ঠান হলে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের অনুষ্ঠান বিদ্যালয়ের বারান্দায় কোনো রকমে দায়সারাভাবে সেরে নেয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা পরিদর্শনে যান না বললেই চলে আর সেই সুযোগেই এমন দায়সারাভাবে চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানিক কার্যক্রম ও বেপরোয়া হয়ে নিদের্শনা প্রদান করছেন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি।।
বেতাগী উপজেলা শিক্ষা অফিসসূত্রে জানা যায়, বিগত দুই মাস আগে বিদ্যালয়ের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য বরাদ্দকৃত ৩৬ হাজার ৬০০ টাকা পেয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।
কিন্তু সরেজমিন দেখা যায়, কাজ তো দূরের কথা বিদ্যালয়ের নামে ফলক পর্যন্ত নেই। পুরো বরাদ্দকৃত অর্থই উধাও, কিন্তু কাজের পূর্ণতা না দেখে বিল কাগজে শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষর করল কিভাবে এ প্রশ্ন অনেকের মনে।
তবে প্রধান শিক্ষক বলেন, পুরো অর্থের হিসাব সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জানেন।
বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, তারা বিগত দিনগুলোতে মাঠে খেলাধুলা করতে পারেনি এবং বর্তমানেও পারে না। এ বিদ্যালয়ে ঠিকমতো ক্লাস না হওয়ায় পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়গুলোতে গিয়ে ভর্তি হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়ের পাশে একটি টিনের ঘর আছে, তবে সেখানে গরু-ছাগল পালন করা হয় বিদ্যালয়ের সভাপতির নির্দেশে। এসব অনিয়মের কারণে এ বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী কমে যাচ্ছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে বেশ কয়েকজন বলেন, প্রতিষ্ঠানের সভাপতি রাতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মহিষ বেঁধে রাখে, যার ফলে নষ্ট ও নোংরা হয় বিদ্যালয়ের পরিবেশ।
আরও বলেন, একবার বিদ্যালয়ের মালামাল কিনে তা বারবার ভাউচার করে অর্থ আত্মসাৎ করছেন বিদ্যালয়ের সভাপতি সিদ্দিক।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম এ ব্যাপারে বলেন, আমি এমন অনিয়মের কথা শুনেছি। অনতিবিলম্বে প্রতিষ্ঠান পর্যবেক্ষণের জন্য অতিরিক্ত শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ প্রদান করেছি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জলিল আহম্মেদ যুগান্তরকে বলেন, বিদ্যালয়ের মাঠে ধান চাষ সভাপতির নির্দেশে হয়েছে। তা ছাড়া আমি এ প্রতিষ্ঠানে চার মাস হয় যোগদান করেছি। আর তাই এ ব্যাপারে সভাপতি ভালো বলতে পারবেন।
বিদ্যালয়ের সভাপতি অভিযুক্ত সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমি কেবল এক বছর হয় সভাপতি হয়েছি। ধান চাষের ব্যাপারে আমি জানি।
টাকার ব্যাপারে বলেন, টাকা দিয়ে অনেক মালামাল কেনা হয়েছে। সেগুলো বিদ্যালয়ের নামফলকে লেখা ছিল কিন্তু মুছে গেছে।
ওই অভিযোগের (তদন্তকারী কর্মকর্তা) অতিরিক্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. ওবায়েদুল হক যুগান্তরকে বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ধান চাষের সত্যতা পাওয়া গেছে। আমি বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেব।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজীব আহসান বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন অনিয়ম এটি মারাত্মক অন্যায়। খুব শিগগির অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসকে নির্দেশ প্রদান করা হবে।