জেলার চৌগাছা উপজেলার সাথী খাতুন নামে এক গৃহবধূর পলিথিনে মোড়ানো লাশ উদ্ধার ও দাফনের ১১ দিন পর তাকে জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার জেলার সদর উপজেলার জলকর গ্রামের আজিজুর লস্করের বাড়ি থেকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়।
সাথী খাতুন চৌগাছার নয়ড়া গ্রামের আমজেদ আলীর মেয়ে এবং একই উপজেলার চাঁদপাড়া গ্রামের গোলাম মোস্তফার স্ত্রী। তাদের এহসান নামে ছয় বছরের একটি পুত্রসন্তান রয়েছে।
সাথীর পরিবার সূত্রে, গত ১৪ জুলাই সাথী বাইরে কাজে যাচ্ছি, বিকালে ফিরে আসবো বলে স্বামীর বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর থেকে তার কোনো সন্ধান ছিল না।
সাথী নিখোঁজ হওয়ার পর তার বাবা আমজাদ আলী বাদী হয়ে চৌগাছা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছিলেন।
এদিকে, ২৯ আগস্ট রাতে যশোরে সরকারি সিটি কলেজ এলাকা থেকে পলিথিন মোড়ানো অজ্ঞাতপরিচয় এক তরুণীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই লাশ উদ্ধারের খবরে পরদিন ৩০ আগস্ট যশোর কোতোয়ালি থানায় ছুটে যান চৌগাছার নয়ড়া গ্রামের আমজাদ আলী।
তিনি অজ্ঞাতপরিচয় লাশটি তার মেয়ে সাথী খাতুনের বলে সনাক্ত করেন। কিন্তু পরবর্তীতে এ নিয়ে তদন্ত হলে তিনি জানতে পারেন তার ভুল হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া সাথী খাতুন জানায়, স্বামী নির্যাতন করতো। তাই নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে ১৪ জুলাই স্বামীর বাড়ি ছেড়ে যশোরে চলে আসি। শহরের নিউ মার্কেটে বাসে নেমে এক ঘন্টা বসেছিলাম। এক পর্যায়ে মালয়েশিয়া প্রবাসী প্রতিবেশি মান্নুকে ফোন দিই। তিনি ধৈর্য্য ধরতে বলেন। যেন আত্মহত্যা না করে, সেই পরামর্শ দেন।
এক পর্যায়ে সদরের ফতেপুর ইউনিয়নের জলকর গ্রামে যাই। যাওয়ার পথে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি ভেঙে পানিতে ফেলে দিই। এরপর ওই গ্রামের আজিজ লস্করের বাড়িতে আশ্রয় নিই। গত পরশু আজিজ লস্কর পত্রিকার পাতায় আমার মৃত্যুর সংবাদ দেখেন। তারপর থেকে তিনি আমাকে আর আশ্রয় দিতে রাজি হননি।
এরপর গতকাল বাড়িতে আব্বার মোবাইল নম্বরে (মুখস্থ ছিল) কল করি। পুলিশকেও বিষয়টা জানাই। পরে পুলিশ উদ্ধার করেছে।
যদিও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিরুজ্জামান বলছেন ভিন্ন কথা। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে তিনি খুঁজে পান চাঞ্চল্যকর এক তথ্য।
এসআই আমিরুজ্জামান বলেন, মেয়েটির সঙ্গে মোবাইল ফোনে বিভিন্ন সময়ে একাধিক ছেলের সম্পর্ক ছিল। তদন্ত করতে গিয়ে পরিবারের লোকজন জানালো গত ১৬ মার্চ সাথী খাতুন ভারতে গিয়েছিল চিকিৎসার জন্য। এক মাস ১১ দিন পর চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরে। তবে সাথী একাই গিয়েছিল ভারতে।
বিষয়টি আমার সন্দেহ হয়। এরপর সাথীর পাসপোর্ট বইটি যাচাই করি। এতে দেখা যায় সাথী ১৬-২৪ মার্চ ভারতে ছিল। কিন্তু পরিবারের লোকজন বলছে ১ মাস ১১ দিন। তাহলে বাকী দিন কোথায় ছিল?
ভারতে থাকাকালীন সাথী ভারতের একজনের মোবাইল নম্বর থেকে কথা বলেছিল। সেই নম্বর জোগাড় করি। কথা বলে জানতে পারি, সাথী ভারতে প্রবেশ করার এক ঘন্টা আগে মালেশিয়া প্রবাসী চাঁদপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মান্নু ওপারে (ভারতে) হাজির হয়। সেখান থেকে তারা দুজন ভারতে চিকিৎসার জন্য যায়। পরে চিকিৎসা শেষে ২৪ মার্চ সাথী ও মান্নু দেশে আসে।
মান্নু মালয়েশিয়া থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে ঢুকলেও পরিবারের কেউ জানতো না। ২৪ মার্চ থেকে এক মাসের বেশি সময় সাথী ও মান্নু যশোর সদর উপজেলার জলকর গ্রামের আজিজ লস্করের বাড়িতে অবস্থান করেন।
সর্বশেষ গত ১৪ জুলাই সাথী স্বামীর বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে যান। এরপর সদর উপজেলার জলকর গ্রামে পূর্ব পরিচিত আজিজ লস্করের বাড়িতে আশ্রয় নেন। রোববার সকালে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে।