রাউজানে চা ল্যকর স্বামীকে হত্যার স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্ধি দিয়েছেন ঘাতক স্ত্রী রুনা ও তার প্রেমীক জাহেদ। রাউজান থানার এস আই সাইমুল ইসলাম ১৩ আগষ্ট সকাল জানান, চট্টগ্রাম জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১২ আগষ্ট আাবুল হাশেমকে পরকিয়ার জের ধরে হত্যার কথা স্বীকার করেছে তারা। জানান যায়, আবুল কাশেম ও রুনা দম্পতির দুই পুত্র সন্তান রয়েছে। বড় সন্তানের নাম মো. মাহিম (১০), ছোট সন্তানের নাম রাকিব (০৬)। মাহিম স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র। আগামী জানুয়ারিতে ভর্তি করার কথা থাকলেও রাকিবকে এখনো স্কুলে ভর্তি করানো হয়নি। আবুল হাশেম সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে রংয়ের কাজ করেন। স্ত্রী রুনা আকতার একজন গৃহিনী।
এটি একটি সাজানো সংসার, সুখি পরিবারও বটে। ‘সংসার সুখি হয় রমনীর গুনে’! আর রমনী যখন পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়েন তখন কি আর সুখে থাকা যায়? গত শুক্রবার (১০ আগস্ট) রাতের কোন এক সময়ে স্ত্রী’র হাতে খুন হয়েছেন আবুল হাশেম। স্টোকে মারা গেছে বলে দাফন করার চেষ্টা করলে মৃতদেহ গোসল দেয়ার সময় স্থানীয়রা লাশের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে সন্দেহ করেন। পরে শনিবার বিকাল ৩টায় পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ নিহতের স্ত্রী রুনা আকতার, নিহতের শ্বাশুরী আমেনা ও নিহতের চাচাতো ভাই জাহেদকে আটক করে। দুই ফুটফুটে পুত্র সন্তান ঘরের সামনে বসে থাকেন। এ প্রতিবেদক যখন সংবাদ সংগ্রহের জন্য সেখানে যান তখন ছোট্ট শিশু রাকিব কাঁন্না করতে করতে বলেন ‘আমি জেলে যাবো না’। বড় সন্তান মাহিম বলেন, ‘বাবা ১৫দিন আগে বিদেশ থেকে দেশে এসেছেন।
বিদেশ থেকে আসার পর থেকে এক সপ্তাহ মতো ঠিকঠাক ছিল। এরপর মা-বাবার মধ্যে ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে বাবা বটি নিয়ে মাকে খুন করে জেলে যাবেন বলে হুমকি দেয়। সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে খুনের শিকার হন আবুল হাশেম। প্রেমিক জাহেদকে নিয়ে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর পর ওরনা দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে খুন করেছে, ঘাতক গৃহবধূ রুনা আকতার এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই আবুল কাশেম (৫২) বাদি হয়ে রুনা আকতার ও জাহেদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা নিহতের শ্বাশুরীকে ছেড়ে দেয়া হলেও রুনা আকতার ও জাহেদকে রোববার (১২ আগস্ট) কোর্টের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করেছে পুলিশ। এদিকে রোববার বিকেল সাড়ে ৪টায় নিহত আবুল কাশেমকে রাউজান উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের এয়াছিন নগর গ্রামে নামাজে যানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে। কিছু কিছু ঘটনা বিবেকবান মানুষদের মনে দাগ কাটে। বিশ্লেষণ করেন ঘটনার বিভিন্ন রহস্য নিয়ে। কেউ কেউ হয়তো ভাবছেন মায়ের পরকীয়ার জন্য খুন হলো বাবা। খুনের দায়ে মাকে যেতে হলো কারাগারে। আবুল হাশেম ও রুনা দম্পতি দুই সন্তানকে রেখে গেছেন অনিশ্চিত ভবিষ্যতে।
ওরা হয়তো আত্মীয়-স্বজন কিংবা প্রতিবেশীদের ¯েœহ, মমতায় বড় হবে। বাবা-মা দুজনের শূণ্যতা কি কখনো পূর্ণতা পাবে? মাহিম ঘটনার কিছু রহস্য বুঝতে পারলেও রাকিবের সে বুঝ এখনো আসেনি। সে কিছুক্ষণ মাকে আবার কিছুক্ষণ বাবাকে খুঁজছে! সে বুঝতে পারছেনা ওদের বাবা কবরে, মা কারাগারে। অবুঝ দুই পুত্র সন্তানের ভবিষ্যৎ কি? মা-বাবার আদর-¯েœহ, মায়া-মমতা থেকে বি ত দুইজনের জীবন স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠবে? নাকি অন্ধকার গলির ভেতরে হারিয়ে যাবে ওদের স্বাভাবিক জীবন! নিঃসন্দেহে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ!
রাউজান থানার সেকেন্ড অফিসার নুর নবী বলেন, পরকিয়ার জের ধরে হত্যার ঘটনায় নিহতের ভাই আবুল কাশেম বাদি হয়ে শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় এজাহার (মমালা নং-০৪, তাং-১১-০৮-২০১৮ইং) দায়ের করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক ৩ জনের মধ্যে আমেনা বেগমকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ঘাতক স্ত্রী ও তার প্রেমিক জাহেদকে কোর্টের হাজির করা হলে দুইজনেই আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্ধি দিয়েছে। পরে তাদেরকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। রাউজান থানার ওসি কেপায়েত উল্লাহ জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে থানা হাজতে ঘাতক স্ত্রী ও তার প্রেমিক জাহেদ দুজনই খুনের ঘটনায় জড়িত বলে স্বীকার করেছেন। তারা বলেছে প্রথমে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়। পরে ওরনা দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে খুন করা হয়।