কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় পরকীয়ার অপবাদ দিয়ে চার সন্তানের এক জননীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছে চার দেবর।
গৃহবধূকে মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। চার দেবরের হাতে ভাবি নির্যাতনের দৃশ্যটি সালিশদারসহ সবাই দেখলেও কেউ কোনো প্রতিবাদ করেনি। দেবরদের যোগসাজশে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে গৃহবধূকে লাঠি দিয়ে এমন নির্যাতন করা হয়।
গত ১ আগস্ট দাউদকান্দি উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নের বেকিসাত পাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার ওই নারী গ্রামের সামছু বেপারীর ছেলে প্রবাসী কবির হোসেনের স্ত্রী।
এ ঘটনায় ওই নারীর বোন বাদী হয়ে পাঁচজনকে আসামি করে দাউদকান্দি মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন। ইতোমধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নির্যাতিত গৃহবধূ চার সন্তানের জননী। তার এক ছেলে কোরআনে হাফেজ, আরেক ছেলে মাদরাসায় পড়ে, অন্য দুইজনের একজন কেজির ছাত্র এবং ছোট ছেলের বয়স চার বছর।
গত ৩১ জুলাই রাত ১০টার দিকে পরকীয়ার অপবাদ দিয়ে পাশের বারপাড়া গ্রামের আলম নামের এক ব্যক্তিকে ডেকে জোর করে গৃহবধূর ঘরে আটকে রাখে দেবররা।
পরে আটক দুইজনের ওপর রাতভর দফায় দফায় নির্যাতন চালায় দেবর সাইফুল, বাবুল, মিন্টু, মোস্তাক ও আরেক ভাই খোকনের স্ত্রী। পরদিন সকালে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসেন তালুকদারের উপস্থিতিতে সালিশের আয়োজন করা হয়। সালিশ বৈঠক চলাকালে প্রতিবেশী মিন্টু মাতব্বরদের নির্দেশে লাঠি দিয়ে ওই নারীর ওপর নির্যাতন চালানো হয়। সেইসঙ্গে আলমকেও বেধড়ক পেটানো হয়।
নির্যাতনের ঘটনায় ৩ আগস্ট ওই গৃহবধূর বোন বাদী হয়ে দাউদকান্দি থানায় মামলা করেন। পাশাপাশি গৃহবধূকে নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ভাইরাল হয়ে যায়।
এ মামলায় অভিযুক্ত দেবর সাইফুল ও বাবুলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মামলার অন্য আসামিরা হলো- মিন্টু, মোস্তাক ও নির্যাতনের শিকার ওই নারীর দেবর খোকনের স্ত্রী শিল্পী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত বারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির হোসেন তালুকদার বলেন, বিষয়টা তাদের পারিবারিক ষড়যন্ত্রের অংশ। কবিরের চার ভাই ও এক ভাবি মিলে এ কাণ্ড ঘটিয়েছে। ওই দিন সকালে বৈঠক শুরুর পর হঠাৎ করেই কবিরের এক ভাই এসে তার ভাবিকে মারধরের নির্দেশ দেয়। পরে আমার ইউনিয়নের তিনজন সদস্য ও আশপাশের লোকজন মিলে আহত দুইজনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দাউদকান্দি মডেল থানা পুলিশের ওসি মো. আলমগীর হোসেন বলেন, খুবই অমানবিক একটি ঘটনা। দেবরদের হাতে এমন নির্যাতন কল্পনাও করা যায় না। এ মামলায় প্রধান আসামি সাইফুল ও বাবুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।