তেলে টালা শুকনো মরিচ, কুচি কুচি করে কাটা পেঁয়াজ আর সঙ্গে ঘানি ভাঙা সরিষার তেল। এগুলো মিশিয়ে তৈরি হয় মরিচের ভর্তাটা। এর সঙ্গে রয়েছে ডালভর্তা। আপনি বললে ওরা দুটো মিশিয়ে একটা ঝাল ঝাল ডালভর্তা বানিয়ে দেবে। আর এই দুটো আইটেমই কমপ্লিমেন্টারি। মামার হোটেলের একরকম অঘোষিত প্রথা এই ভর্তা।
আপন মামা, কংস মামা, শকুনি মামা, চায়ের দোকানের মামা, রিকশাওয়ালা মামাসহ আমাদের অনেক মামা থাকলেও আজকের গল্পটা অন্য রকম এক মামাকে নিয়ে। প্রয়াত কছিম উদ্দিন মামা। মামা কছিম উদ্দিন আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে নিজের এলাকা সাভার ছেড়ে ঢাকায় আসেন। প্রথমে কারওয়ান বাজার, আইসিএমএ ক্যান্টিনে খাবার বিক্রি করতেন। এরপর স্বাধীনতার পর শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সামনে খিচুড়ি বিক্রি করতেন। তারপর গাউসুল আজম মার্কেটের সামনে চটের বেড়া দিয়ে খাবার বিক্রি শুরু করেন। মূলত এখান থেকেই মামা হোটেলের সূচনা করেন কছিম উদ্দিন । তার পর থেকেই মামা নামে তিনি সবার কাছে পরিচিত হয়ে যান। সেখান থেকে আজকে মামা হোটেল মার্কেটের দোতলায়।
কীভাবে যাবেন?
মামা হোটেলটি অবস্থিত নীলক্ষেতের গাউসুল আজম মার্কেটের দ্বিতীয় তলায়। ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে নীলক্ষেতে বাস আসে। যেমন : মিরপুর থেকে বিহঙ্গ, আশীর্বাদ, সেফটি, মিরপুর লিংক এবং অন্যান্য। সাভার থেকে ঠিকানা, গ্রামীণ শুভেচ্ছা, বসুন্ধরা, বারিধারা থেকে উইনার। প্রায় সব রুটের বাসই আসে এই দিকে। নীলক্ষেত পেট্রলপাম্পের কাছে নেমে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে। মার্কেটটি নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির পাশেই অবস্থিত। এ ছাড়া আপনি কাঁটাবন ও শাহবাগ নেমেও রিকশায় যেতে পারেন। ভাড়া যথাক্রমে ২০ ও ৩০ টাকা। দোতলায় দুটি হোটেল, পাশাপাশি মামার হোটেল এবং বিক্রমপুর সুজন মামার হোটেল। আপনার গন্তব্য মামার হোটেল।
কী খাবেন এবং কত দাম?
মামার হোটেলের সবচেয়ে প্রচলিত আইটেম মুরগির ঝালফ্রাই (ঘন ঝোলের সঙ্গে চার/পাঁচ পিস মুরগির মাংস) এবং খাসির মগজ ভুনা। এ ছাড়া রয়েছে মুরগির রোস্ট, হাঁসের ঝালফ্রাই, কবুতর, কোয়েল পাখি, খাসির মাংস। মাছের মধ্যে রুই, কাতলা, চিংড়ি, পাঁচমিশালি মাছ, ভাজা আস্ত ইলিশ এবং আর দশটা সাধারণ হোটেলে যেসব আইটেম পাওয়া যায়, তা সবই পাবেন এখানে। প্রতিটি আইটেমই অনেক সুস্বাদু এবং দামও কম। দুজন মানুষ ২০০ টাকায় পেটপুরে খেতে পারবেন। আর শেয়ার করে খেলে ১২০/১৪০ টাকা।
মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্রে করে গড়ে ওঠা এই হোটেল। হোটেলের বর্তমান পরিচালক রাজু ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে দুবেলা খাবার বিক্রি হয়। কম হলেও প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার শিক্ষার্থী খেতে আসে এই হোটেলে। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে শুরু করে বিকেল ৪টা। আবার ৭টা থেকে চলে রাত ১২টা বা তার চেয়ে বেশি পর্যন্ত। কম দামে ছাত্রদের একটু ভালো খাবার খাওয়ানোই মূল উদ্দেশ্য। ব্যবসার চেয়ে মানুষের সঙ্গে সম্পর্কটাকেই বেশি গুরুত্ব দেন বলে জানালেন কছিম উদ্দিন মামার ছেলে। কোনো এক ছুটির সময়ে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন এই মামার হোটেল থেকে।