বিজিবি ও বিএসএফের যৌথ টহলদারির ফলে বেনাপোল ও শার্শা সীমান্তের ১৬০ কিলোমিটার সীমান্ত এখন প্রায় সুরক্ষিত। অপরাধ প্রবনতা কমে মানুষ হত্যা, চোরাচালান, মাদক, অস্ত্র ও মানবপাচার প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে।
আগে যেখানে এই সীমান্তে মানুষ হত্যা, মাদক, অস্ত্র ও মানব পাচার ছিল নিত্যনৈমিতিক ব্যাপার। প্রতিদিন এই সীমান্ত দিয়ে শতশত নারী শিশু পাচার হয়ে যেত ভারতে। হাজার হাজার গরু ভারত থেকে পাচার হয়ে আসতো বাংলাদেশে। সীমান্তে বিজিবি ও বিএসএফের নিয়মিত যৌথ টহল সীমান্তে বসবাসরত মানুষের মধ্যে সচেনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ ধরনের অপরাধ প্রবনতা কমতে শুরু করেছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এসব এলাকায় ৮ কিলোমিটার সীমান্ত ক্রাইম ফ্রি জোন ঘোষণা করে বিজিবি ও বিএসএফের যৌথ নজরদারি বৃদ্ধির ফলে সীমান্তে অপরাধ প্রবনতা প্রায় শূন্যের কোঠায় নামতে শুরু করেছে।
সরেজমিনে বেনাপোলের পুটখালী, অগ্রভুলোট, দৌলতপুর ও সাদিপুর সীমান্তে গিয়ে দেখা যায়, গরুর খাটালগুলো প্রায় শুন্য। অনেকেই চোরাচালান পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। পুটখালি গ্রামের হজরত আলী জানান, এই সীমান্তে এখন আর আগের মত চোরাচালান হয় না। ভারত থেকে গরু আসাও এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে।
এই পরিস্থিতিতে হয়তো সীমান্ত এলাকার মানুষ কিছুটা আর্থিকভাবে অভাব অনাটনে আছে। কিন্তু এখন আর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে কোন বাংলাদেশি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় না। বিজিবি এ ধরনের তৎপরতা বৃদ্ধি করায় চোরাচালানীরা সরে পড়েছে অন্যত্র। ক্রাইম ফ্রি জোনে বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক টাওয়ার, সার্ভিলেন্স ডিভাইস ও সিসি ক্যামেরা যা সীমান্ত দিয়ে কোন মানুষ পাচার ও চোরাচালানীর ঘটনা ঘটলেই সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে তাৎক্ষণিক বিজিবি টহল দলের কাছে সংবাদ পৌঁছে যাবে। ফলে ধরা পড়ছে অপরাধীরা।
বিজিবি সুত্র জানায়, ২০১৭ সালে এই সীমান্ত দিয়ে ১৫০ কোটি টাকার পন্য আটক করেছে বিজিবি। এ সময় ১৩ কেজি সোনা, ৬৮টি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেআস্ত্র ও ২ কোটি ৮ হাজার টাকার মাদক দ্রব্যসহ ১২৪ জন অপরাধীকে আটক করা হয়। ভারতে পাচারকালে ৪৩৩ জন নারী শিশু ও পুরুষকে উদ্ধার করা হয় পাচারকারীদের কাছ থেকে। অন্যদিকে ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই পর্যন্ত ৫৫ কোটি টাকার মালামাল আটক করা হয়।
সীমান্তবর্তী বারোপোতা গ্রামের মিনা আলী জানান, বিজিবি-বিএসএফের যৌথ টহল ব্যবস্থার কারণে এখন চোরাচারান পেশা ছেড়ে দিয়ে মুদি দোকানের ব্যবসা শুরু করেছি। আগের চেয়ে এখন অনেক ভালো আছি পরিবার পরিজন নিয়ে।
যশোর ৪৯ বিজিবির কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল আরিফুল হক জানান, বিজিবি-বিএসফের যৌথ টহল ব্যবস্থা চালু করায় দু দেশের মধ্যে চোরাচালান, মাদক, অস্ত্র ও মানবপাচার প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। সেই সাথে ক্রাইম ফ্রি জোন ঘোষণা ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করায় সীমান্তে অপরাধ প্রবনতা বন্ধে সুফলাতা এসেছে।