বোমা হামলা নিয়ে দুই বিএনপি নেতার কথোপকথন! (অডিও)


রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রচারে বোমা হামলার ঘটনায় টেলিফোন আলাপের একটি অডিও রেকর্ড প্রকাশ হয়েছে। পুলিশ দাবি করছে, হামলা চালানোর পর এই কথোপকথন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু ও রাজশাহী জেলার সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুর মধ্যে হয়েছে।

এতে যাকে মণ্টু নামে দাবি করা হচ্ছে, তিনি টিপুকে বলেছে, ভাইয়ার (তারেক রহমান) কাছে ক্রেডিট নেয়ার জন্য দুই জনকে দিয়ে এই বোমা হামলা চালানো হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে টিপু বলেন, এই ধরনের কোনো কথা বলেছেন কি না, সেটি তার মনে নেই। আর মণ্টুর সঙ্গে তার কথা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কত মানুষের সাথেই তো কথা হইতেছে।’

এরই মধ্যে রাজশাহী বিএনপির নেতা মণ্টুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে রাজশাহী মহানগরী থেকেই মন্টুকে গ্রেপ্তার করে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ। রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলছেন, যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার পরই তাকে ধরা হয়েছে।

ইফতেখায়ের বলেন, এ ঘটনায় এর আগে হিমেল নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে তার রিমান্ড চাওয়া হয়েছে যদিও এখন শুনানি হয়নি। মণ্টুকেও আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হবে। আর কে কে জড়িত তা জানতে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন।

‘আগামীর রাজশাহী’ নামে একটি ফেসবুক পেইজে কথোপকথনের রেকর্ডটি প্রকাশ পাওয়ার পর এ নিয়ে রাজশাহীতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ অভিযোগ করছে, বিএনপি এই নির্বাচন নিয়ে চক্রান্ত করছে।

গত ১৭ জুলাই রাজশাহীর সাগরপাড়া মোড়ে বিএনপির পথসভায় হাতবোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। সভা চলাকালে চারটি মোটরসাইকেলে আটজন যুবক ঘটনাস্থলে গিয়ে পরপর তিনটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যান।

এতে বাংলাভিশনের সাংবাদিক পরিতোষ চৌধুরী আদিত্যসহ দুইজন আহত হন। ওই পথসভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু উপস্থিত ছিলেন। এই হামলার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছে বিএনপি।

যদিও ঘটনার দিনই আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন, এটি বিএনপিই ঘটিয়েছে। লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের নির্দেশে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু।

গত ২৬ জুন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের আগের দিনও এক অডিও রেকর্ড প্রকাশ হয় একটি ইউটিউব চ্যানেলের পাশাপাশি ফেসবুকে। সেখানে ভোটের দিন নৌকার ব্যাচ পরে নাশকতা করার বিষয়ে কথা হয়।

এই রেকর্ড প্রকাশের পর পুলিশ বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মিজানুর রহমানসহ পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের অভিযোগ অনুযায়ী মিজানুর রহমান আশুলিয়া থানা যুবদলের এক নেতাকে কয়েকটি সাহসী ছেলে যোগাড় করে তাদেরকে প্রশিক্ষণ ও যন্ত্রপাতি দেয়ার কথা বলেন। তারা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নির্দেশনা মতো কাজ করবে-এমন কথা বলা হয়।

আইসিটি আইনে মামলায় মিজানুর এখনও কারাগারে। যদিও বিএনপি এই কথোপকথনকে সাজানো বলেছে।

রাজশাহী হামলার ঘটনায় কথোপকথনে যা আছে

-ভাই…(টিপু বলে চিহ্নিত)

-ভাল আছ? (মণ্টু হিসেবে চিহ্নিত)

-আছি ভাই। (টিপু বলে চিহ্নিত)

-এই কালকে কাজ-কাম করেছি, প্রচ- রোদের তাপে। জিয়াউর অসুস্থ। তো গত পরশু দিন যে ঘটনা ঘটেছে, শুনছো তো নাকি? (মণ্টু হিসেবে চিহ্নিত)

-এই একটু শুনেছি, বেশি শুনি নাই। বোম্ব মেরেছে এইটা তো? (টিপু বলে চিহ্নিত)

-হ্যাঁ, (মণ্টু হিসেবে চিহ্নিত)

-সেটা তো জানি। (টিপু বলে চিহ্নিত)

-কারা করলো, এটা কি জান? (মণ্টু হিসেবে চিহ্নিত)

-অ্যা? (টিপু বলে চিহ্নিত)

-কারা করেছে এটা কি জানো? (মণ্টু হিসেবে চিহ্নিত)

-তা জানি না (টিপু বলে চিহ্নিত)

-যাক, আমি যে কথা বলবো ওটা হজম করবা, জাগা মতো পারলে বলবা। দুই ভাই জড়িত। (মণ্টু হিসেবে চিহ্নিত)

-অ্যা? (টিপু বলে চিহ্নিত)

-আমাদের দুইজন জড়িত। যে দুইজনকে দিয়ে কাজ করানো হয়েছে, ভাইয়ার কাছে ক্রেডিট নেওয়ার জন্যে, এই বোম্ব ফেলেছে। হ্যাঁ? ঠিক আছে? (মণ্টু হিসেবে চিহ্নিত)

-কোন দুই ভাই? (টিপু বলে চিহ্নিত)

-তোমার নাটোর আর আমার খালেক। ওই যে শাহীন শওকত (বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক)। (মণ্টু হিসেবে চিহ্নিত)

-এইটা আমার বিশ্বাস হয়। (টিপু বলে চিহ্নিত)

-জাবেদ হলো, আমার শাহীন শওকত ভাইয়ের লোক, জাবেদ। এবং… (মণ্টু হিসেবে চিহ্নিত)

-না, ঠিক আছে। এটা আমার বিশ্বাস হয়। (টিপু বলে চিহ্নিত)

-এইটা হওয়ার সাথে সাথে, প্রায় সব ঠিক হয়ে গেছে। সব ঠিক করেছি…। (মণ্টু হিসেবে চিহ্নিত)

টিপু যা বলেছেন

মণ্টু গ্রেপ্তার থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি। তবে বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই অডিওর ব্যাপারে আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম। আগে শুনিনি। বিষয়টা আমি দেখছি।’

এই হামলার বিষয়ে মণ্টুর সঙ্গে কথা হয়েছে কি না-জানতে চাইলে টিপু বলেন, ‘‘ভাই, আমি বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক। কত মানুষের সাথেই তো কত কথা হইতেছে। এখন কারটা কোনটা আর কোনটা কীভাবে কারা সেট করসে সেটা তো জানি না। মানুষের কথা তো একজন আরেকজনের সঙ্গে সেট করতেছে। এইটা কেমনে আমি বলব? এই রকম কোনো কথা আমি বলসি বলে মনে নাই।”