গুপ্তধন নিয়ে হুলস্থুল,গর্ত খুড়ে পেল কি?


বাড়ির নিচে গুপ্তধন রয়েছে এমন তথ্য প্রকাশের পর বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয় এলাকায়। এরপর থেকেই জনমনে জাগে নানান প্রশ্ন? কি মিলল? শনিবার (২১ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিরপুর-১০ নম্বর সেকশনের সি ব্লকের ১৬ নম্বর সড়কের ১৬ নম্বর বাড়িতে নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট আনোয়ারুজ্জামানের নেতৃত্বে ২০ শ্রমিক বাড়িতে খোঁড়া শুরু করেন।

খবর পেয়েই ছুটে আসে শতশত উৎসুক মানুষ। এরপর প্রায় ছয় ঘণ্টা সময় ধরে খননকাজ চলার পরেও রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরের সেই বাড়ি থেকে কোনো গুপ্তধন পাওয়া যায়নি। বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে বাড়ি খননের ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান ঢাকা জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আনোয়ারুজ্জামান। এরপরই বিকেল চারটা থেকে খননকাজ বন্ধ করা হয়।

গত ১৪ জুলাই বাড়িটির বর্তমান মালিক দাবিদার মনিরুল আলম মিরপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সকালে ঢাকা জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেখানে মাটি খনন শুরু হয়।

মিরপুর বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার জানান, ১৯৭১ সালে যখন স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয় তখন এই বাড়িটা ছিল জল্লাদখানা। এই বাড়ির মূল যে অধিবাসী ছিলেন তিনি পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তারই এক আত্মীয় এসে কিছুদিন আগে আমাদের কাছে ‘গুপ্তধন’ থাকার থাকার তথ্য দেন।

খননকাজ বন্ধ করার পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাংবাদিকদের বলেন, বাড়ির অবকাঠামো বেশ দুর্বল। মজবুত কাঠামোর ওপর এই বাড়ির ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়নি। এখানে খননকাজ করা হলে ঘরগুলো ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আজ খননকাজ বন্ধ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বাড়িটি দুই কাঠা জমির ওপর নির্মিত। আপাতত কোনো ভাড়াটিয়া নেই। একজন নিরাপত্তারক্ষী বাড়িটি দেখভাল করেন।

মিরপুরের ওই বাড়িটির আশপাশের অনেক বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, পাঁচ-ছয়বার হাতবদলের পর বাড়িটির বর্তমান দখলদার মনিরুল আলম। তিনি বাড়িটিতে থাকেন না। এমনকি বছরখানেক ধরে ভাড়াটিয়াও নেই ওই বাড়িতে। আট কক্ষের বাড়িতে সুমন নামে মালিক পক্ষের এক যুবক অবস্থান করছিলেন। সুমন জানান, এক সপ্তাহ ধরে শত শত লোক বাড়িটি দেখতে আসছে। সবাই বলাবলি করছে- বাড়িটির মাটির নিচে গুপ্তধন রয়েছে।

জানা যায়, যে পক্ষ থানায় গিয়ে দাবি করেছে ওই বাড়ির নিচে গুপ্তধন রয়েছে, তারা কক্সবাজার ও ঢাকায় জমি বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত। কোনো পক্ষের হয়ে তারা বাড়িটি কৌশলে দখলে নেওয়ার অপচেষ্টা করছে কি-না তা খতিয়ে দেখা জরুরি বলে মনে করছেন স্থানীয়দের কয়েকজন।

বাড়িটির মূল তত্ত্বাবধায়ক শফিকুল ইসলাম বলেন, আড়াই বছর ধরে বাড়ির মূল মালিকের সঙ্গে তার দেখা নেই। শহীদুল্লাহ নামে মালিকের এক ঘনিষ্ঠ লোকের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখেন। বাড়ির ভালোমন্দ সব কিছু তাকে জানান। শহীদুল্লাহ পুলিশের সদস্য বলেও জানান তিনি। তবে শহীদুল্লাহর নম্বরে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। শফিকুল ইসলাম আরও জানান, টিনের চালা নষ্ট হয়ে পড়ায় বছরখানেক ধরে কোনো ভাড়াটিয়া নেই। বাড়িটি মালিক ঠিকঠাকও করেননি।

এ ঘটনায় দায়ের করা জিডির তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আরিফুর রহমান বলেন, গুপ্তধন থাকার বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় যাতে সেখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তাই সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

স্থানীয় কাউন্সিলর জহিরুল ইসলাম মানিক বলেন, ওই বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি। পরে কেউ তা নামজারি করে মালিকানা পেয়েছে কি-না তা জানা নেই। দুই পক্ষই বাড়ির ব্যাপারে আমার কাছে এসেছিল। এরপর তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার পরামর্শ দেন। কক্সবাজার থেকে যে পক্ষটি বাড়িতে গুপ্তধন থাকার কথা বলে যোগাযোগ করেছিল, তাদের উদ্দেশ্য ভালো মনে হয়নি স্থানীয় কাউন্সিলরের। গুপ্তধন থাকার বিষয়টি হাস্যকর বলে তিনি মন্তব্য করেন।

গুপ্তধন পাওয়া গেলেও এর প্রতি কোনো দাবি নেই বলে জানান বাড়ির মালিক মনিরুল আলম। মনিরুল আলম বলেন, ‘গুপ্তধন পাওয়া গেলে সরকারি কোষাগারে জমা হোক এটাই আমি চাই। এর প্রতি আমার কোনো দাবি নেই।’

যদি গুপ্তধন পাওয়া যায়, তাহলে তা বেওয়ারিশ সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে। এ ছাড়া বিধি মোতাবেক তা সরকারি কোষাগারে জমা হবে। জিডির কথা উল্লেখ করে পুলিশের পক্ষ থেকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়।