এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করে বৃহস্পতিবার তিন জেলায় তিন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। তাদের মধ্যে নোয়াখালী ও পঞ্চগড়ের দুইজন ছাত্রীই ইংরেজিতে ফেল করে এবং গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। এদিকে রাজশাহী ও টাঙ্গাইলে পরীক্ষায় ফেল করায় আত্মহত্যার চেষ্টা করে ৭ জন। তারা সবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে বলে জানা গেছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা
পরীক্ষায় ফেল করায় ইঁদুর মারার ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করেছ ছাত্র লুৎফর রহমান। জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সনগাঁও গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
লুৎফর রহমান সনগাঁও গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে। মোহাম্মদ আলী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) চাকুরি করেন।তিনি বর্তমানে চট্টগ্রামে কর্মরত আছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে লুৎফর বালিয়াডাঙ্গীতে একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে কম্পিউটার শিখতে যায়। দুপুরে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। ফলাফল সীটে তার রোল নাম্বার না থাকায় সে ইঁদুর মারার গ্যাসের ট্যাবলেট খায়। এতে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় লোকজন তাকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির জন্য নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত লুৎফর রহমান বালিয়াডাঙ্গী সমিরউদ্দীন স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র। সে ইংরেজি বিষয়ে ফেল করেছে বলে জানা গেছে।
বালিয়াডাঙ্গী থানার দুওসুও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
পঞ্চগড়
ইংরেজি পরীক্ষায় ফেল করায় পঞ্চগড়েও শাবনুর আক্তার (২১) নামে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। সে পূর্ব জালাশি এলাকার রফিকুল ইসলামের মেয়ে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সে নিজকক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। শাবনুর পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের কর্মাসের ছাত্রী।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, শাবনুর গতবারে ইংরেজি পরীক্ষায় ফেল করে এবার পুনরায় ওই বিষয়ে পরীক্ষা দেয়। কিন্তু এবারও সে ফেল করায় অভিমান করে সে আত্মহত্যা করে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রেজাল্ট খারাপ করায় বৃহস্পতিবার বিকেলে শাবনুর তার বাড়ির সবার অজান্তে নিজকক্ষে গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগালে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত র্কমর্কতা (ওসি) রবউিল হাসান সরকার ছাত্রীর আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করনে।
নোয়াখালী
নোয়াখালীর সদর উপজেলায়ও ফাতেমা আক্তার (২০) নামে এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে পরীক্ষায় পাস করতে না পেরে।
বিকালে নোয়াখালী পৌরসভার কৃষ্ণরামপুর গ্রামের খান বাড়িতে আত্মহত্যার ঘটনাটি ঘটে।
নিহত ফাতেমা আক্তার ওই গ্রামের খান বাড়ির নুরুল ইসলাম খানের মেয়ে এবং সে এবার নোয়াখালী মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেয়।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। পরীক্ষায় ফেল করায় পরিবারের অজ্ঞাতে বিকালে নিজের ঘরের সিলিং এর সাথে ওড়না ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করে। পরিবারের লোকজন ঘরের ভিতরে ঢুকলে ফাতেমার মৃতদেহ সিলিং এর সাথে ঝুলতে দেখে। পরে উদ্ধার করে তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করে।
নোয়াখালী সুধারাম থানার (ওসি) তদন্ত মো. সায়েদ উদ্দিন এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রাজশাহী
এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করায় ৫ পরীক্ষার্থী ট্যাবলেট, বিষপান ও গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ ঘটনায়রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে তাদের ভর্তি করাহয়েছে। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রামেক হাসপাতালপুলিশ বক্সের ইনচার্জ এএসআই রফিকুল ইসলাম রফিক বিষয়টিনিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত রাজশাহীর ৪জন ও নাটোরের ১ জন পরীক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ হওয়ার কারণে বিভিন্নভাবে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।পরে পরিবারের লোকজন জানতে পেরে তাদের উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করেন। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ভর্তিকৃত পরীক্ষার্থীরা হলো রাজশাহী মহানগরীর সাগরপাড়া এলাকার মাহাবুব আলমের মেয়ে ইতি (১৮), কাটাখালী এলাকার আজগর আলীর মেয়ে শিখা খাতুন (১৮), বায়া বাজার এলাকার সোহানের মেয়ে সোহানা (১৮), জেলার বাগমারা উপজেলার লক্ষীথপাড়া এলাকার আমজাদের ছেলে তপু (১৮) এবং নাটোরের বাঁশবাড়িয়া এলাকার সেলিমের সন্তান শ্যামা (১৮)। এদের মধ্যেশ্যামার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
টাঙ্গাইল
পরীক্ষায় ফেল করায় টাঙ্গাইলে ২ শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। বৃহস্পতিবার বিকেল এ ঘটনায় ঘটে। আত্মহত্যাচেষ্টাকারী শিক্ষার্থীদের টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এরা হলেন,বাসাইল উপজেলার কাঞ্চচপুর এলাকার আব্দুল কাশেমের মেয়ে লিজা আক্তার (২০) এবং টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ছোট বাসালিয়ার দেলোয়ারে মেয়ে নুসরাত জাহাস সাথী (১৮)।
জানা যায়, ফলাফল প্রকাশের পর অকৃতকার্য হওয়ায় এ দুইজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরে পরিবারের লোকজন তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত ডা. সুমন চন্দ্র পাল পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, এইচএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে বিষপানে ২ শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করে।পরে তাদেরকে বিকেল টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা সবাই হাসপাতালের নির্ভির পর্যবেক্ষণে রয়েছেন বলে তিনি জানান।