লক্ষ্মীপুরের কমলনগর মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধে আবারো ধ্বস দেখা দিয়েছে। ভেঙে গেছে বাঁধের দক্ষিণ অংশ। হুমকির মুখে রয়েছে পুরো বাঁধ। বর্ষার শুরুতেই বাঁধে ধস দেখা দেওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। দ্রুত সংস্কার ও ভাঙন রোধে পর্যাপ্ত বাঁধ নির্মাণ না হলে নির্মাণাধীন বাঁধসহ বিস্তীর্ণ এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই কার্যকরী উদ্যোগ না নেয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।
উপজেলার মাতাব্বর হাট এলাকায় নির্মাণাধীন মেঘনা তীর রক্ষা বাঁধে ধ্বস নামে। এতে নদীতে ভেঙে পড়েছে ব্লক বাঁধের প্রায় দুইশ’ মিটার। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু না হওয়ায় বাঁধের দুই পাশের এলাকায় অব্যাহতভাবে ভাঙছে। আশপাশের এলাকায় ভাঙনের কারণে বাঁধ ধসে পড়েছে। গত বর্ষা মৌসুমেও ওই বাঁধে পাঁচ বার ধ্বস নামে। অনিয়মের মধ্য দিয়ে নিন্মমানের কাজ করায় বারা-বার বাঁধে ধস নামছে বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে।
রোববার বিকেলে তীর রক্ষা বাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এক কিলোমিটার নির্মাণাধীন বাঁধের দুই পাশে মেঘনা অব্যাহতভাবে ভাঙছে। ভাঙন বাঁধের সীমানা পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়েছে। এতে করে বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়েছে।
যে কারণে বাঁধে ধ্বস নামছে। ধ্বস ঠেকাতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বালু ভর্তি কিছু জিও ব্যাগ ডাম্পিং করতে দেখা গেছে।
এদিকে বর্ষার শুরুতেই নদীর তীর রক্ষা বাঁধে ধস দেখা দেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
আতঙ্কিত বাসিন্দারা জানান, কমলনগরে নদী ভাঙন রোধে মাত্র এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ হয়েছে। এই উপজেলা রক্ষায় তা যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন আরও ৮ কিলোমিটার বাঁধ। যেটুকু বাঁধ হয়েছে তাতেও নানা অনিয়ম হয়েছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাঁধের ভেতরে (নদীতে) ৪৫ মিটার জিও ব্যাগ (বালু ভর্তি বিশেষ ব্যাগ) ও ব্লক যথাযথভাবে ডাম্পিং না করেই বাঁধ নির্মাণ করে। এতে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্মমানের বালু ও জিও ব্যাগ। এসব কারণে গত বছর বাঁধে ৫ বার ধস নামে। এছাড়াও অন্যত্র থেকে মাটি সংগ্রহ করে বাঁধ নির্মাণ করার কথা থাকলেও নদীর তীর থেকে মাটি উত্তোলন করে বাঁধ নির্মাণ করায় বার-বার বাঁধে ধস নামছে। এবার বর্ষার শুরুতেই ফের ধস দেখা দেয়।
ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে আক্ষেপ করে স্থানীয় লোকজন বলেন, পাশের রামগতি উপজেলা সদর আলেকজান্ডারে সেনা বাহিনীর মাধ্যমে সাড়ে তিন কিলোমিটার বাঁধ সফলভাবে নির্মাণ হয়েছে। এতে রক্ষা পেয়েছে উপজেলা সদরসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। কিন্তু কমলনগর মাত্র এক কিলোমিটার বরাদ্দ হয়েছে। তা সেনাবাহিনীকে দিয়ে না করিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করিয়েছে। যে কারণেই বাঁধে বার বার ধস নামছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এজিএম মাসুদ রানা বলেন, কমলনগরের মেঘনার ভাঙন প্রতিরোধে মাত্র এক কিলোমিটার বাঁধ যথেষ্ট নয়। তীর রক্ষা বাঁধের দুই পাশেই ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এতে করে নির্মাণাধীন বাঁধের ওপর প্রভাব পড়েছে। এছাড়াও নদীতে জোয়ার ও পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব পরিস্থিতির কারণে বাঁধের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাৎক্ষণিক সংস্কার শুরু করেছি।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুসা বলেন, বাঁধ ধসের খবর পেয়েছি। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ের বাঁধ নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু তা অনুমোদন না হওয়ায় কাজ হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের জন্য ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। বরাদ্দকৃত টাকায় কমলনগরে এক কিলোমিটার, রামগতির আলেকজান্ডারে সাড়ে তিন কিলোমিটার ও রামগতিরহাট মাছঘাট এলাকায় এক কিলোমিটার বাধ নির্মাণ হওয়ার কথা। ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ১৯ ইঞ্জিনিয়ারি কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন আলেকজান্ডার এলাকায় ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করে সাড়ে তিন কিলোমিটার সফলভাবে বাস্তবায়ন করে।
এদিকে ওই বরাদ্দের ৪৮ কোটি টাকায় কমলনগরে এক কিলোমিটার কাজ পায় নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লি.। অর্থ বরাদ্দের দুই বছর পর ২০১৬ সালের শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানটি ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংকে দিয়ে কাজ শুরু করে।
ওই বছর নিম্মমানের বালু ও জিও ব্যাগ দিয়ে কাজ শুরু করায় স্থানীয়দের চাপের মুখে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। অনিয়মের প্রতিবাদে ও যথাযথভাবে কাজ করার দাবিতে ওই সময় মানববন্ধন করে স্থানীয় এলাকাবাসী। পরবর্তীতে একই বছরের ২৩ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বাঁধ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়।