“অন্তঃসত্ত্বা পুত্রবধূকে নিয়ে ঘর বাঁধলেন শ্বশুর”

নিজের স্ত্রী সন্তান রেখে ছেলের অন্তঃসত্ত্বা বউকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করলেন বাবর আলী নামে এক ব্যক্তি। ঘটনাটি ঘটেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ধাইনগর ইউনিয়নে। অভিযোগ উঠেছে, এ অমানবিক ঘটনায় সহায়তা করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তাবারিয়া চৌধুরী।

জানা গেছে, মহেষপুর গ্রামের বাবর আলীর ছেলে ইউসুফ আলীর সঙ্গে একই ইউনিয়ের জাবড়ি কাজিপাড়া গ্রামের মৃত জোবদুল হক জোবুর মেয়ে সাথী খাতুনের প্রায় তিন বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর একই বাড়ীতে সবাই বসবাস করত। এরপর পূত্রবধূর দিকে কু-নজর পড়ে শ্বশুর বাবর আলীর। প্রায় দুই মাস আগে পূত্রবধূকে নিয়ে আত্মগোপনে চলে যায় শ্বশুর বাবর আলী।

খবর পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান তাবারিয়া চৌধুরী লোক পাঠিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বারঘোরিয়া হতে তাদের আটক করে ধাইনগর ইউপি কার্যালয়ে আটকিয়ে রাখে। পরে গত ২২ শে জুন স্থানীয়ভাবে শালিস বসানো হয়।

শালিসে স্ত্রী তিন সন্তানের জননী নাসীমা বেগমকে দিয়ে বাবর আলীকে তালাক দেয়া হয়। এরপর ছেলে ইউসুফ আলীকে স্ত্রী সাথী খাতুনকে তালাক দিতে বাধ্য করা হয়। এরপর পরই দেড় লাখ টাকা মোহরে পূত্রবধূ সাথীর সঙ্গে শ্বশুর বাবর আলীর বিয়ে পড়ানো হয়। তালাক এবং বিয়ের কাজটি সম্পূর্ণ করেন একই ইউনিয়ের গ্রাম পুলিশ (চৌকিদার) আনারুল ইসলাম।

এরপর বাবর তার নববধূকে নিয়ে অবস্থান করছেন মহেষপুর গ্রামের একটি ভাড়া বাড়ীতে। তারপর হতে ছেলে ইউসুফ আলী তার মাকে নিয়ে মামাদের বাড়ীতেই অবস্থান করছেন। ঘটনার পর এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

যার সত্যতা মিলেছে বাবরের স্ত্রী ও ইউসুফের মা নাসিমা বেগমের কথায়। নাসিমা বেগম অভিযোগ করে এই প্রতিবেদককে বলেন, শুক্রবার ৭/৮জন মানুষের সামনে চেয়ারম্যান সাহেব তার অফিস ঘরে প্রথমে আমাকে তালাক দিতে বাধ্য করে আমার স্বামী বাবর আলীকে। তারপরে ছেলে ইউসুফ আলীকে দিয়ে তালাক দেয়ায় তার স্ত্রী সাথী খাতুনকে।

তালাকের পরেই ছেলের বউকে বিয়ে করেন বাবর আলী। তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, আমি যেন কোন ধরনের সুযোগ সুবিধা না পাই। এ জন্য কৌশলে আমাকে দিয়ে স্বামী বাবর আলীকে তালাক দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধাইনগর ইউপি চেয়ারম্যান তাবারিয়া চৌধুরী জানান, প্রায় ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা রয়েছে সাথী খাতুন। তার গর্ভের সন্তান শ্বশুর বাবরের বলে শালিসে উপস্থিত সবাইকে জানায় সাথী।

তিনি আরও জানান, প্রায় ৬ মাস আগে বাবরের স্ত্রী তাকে তালাক দেয় এবং দুই মাস আগে ছেলে ইউসুফ আলী বউ সাথীকে তালাক দেয়। নিয়ম মোতাবেক তালাক হওয়ায় মানবিক কারণে তিন কাঠা জমি ও দেড় লাখ টাকা মোহর ধার্য করে বাবর ও সাথীর বিয়ে পড়নো হয়। তবে স্থানীয় কাজী মো. সেতাউর রহমান জানান, প্রায় একমাস আগে ইউসুফ তার মাকে সঙ্গে নিয়ে তালাকের জন্য আমার অফিসে আসে। বিষয়টি জটিল দেখে আমি সে পথে এগুতে পারিনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিকাহ রেজিস্টার সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুল বারী জানান, তাৎক্ষণিক তালাক দিয়ে তথাকথিত বিয়ে পড়ানো হয়েছে। যা ইসলামী শরীয়াহ কোনভাবেই সমর্থন করে না।

এ বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি লোকমুখে শুনেছি। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেনি। যদি কেউ অপরাধ করে থাকে তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।