আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কলাচাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। এতে জেলায় কলাচাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জেলার কলাচাষীর সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেকার যুবকদের কাছে কলা চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর ফলে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতাও এসেছে তাদের। কৃষকরা এখন পুরাতন ধ্যান-ধারণা পাল্টে লাভজনক ফসল হিসেবে কলা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় সহস্রাধীক কলা বাগান।
‘কলা রুইয়ে না কাটো পাত, তাতেই কাপড় তাতেই ভাত’ প্রবাদ বাক্যটি যেন সাতক্ষীরার কলা চাষীদের মাঝে বাস্তবে রূপ নিয়েছে। একদিন যাদের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরাতো আজ তারা স্বাবলম্বী। অনেকটা সোনার সংসার। অভাবের সংসার কাটিয়ে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। সন্তানদের লেখাপড়া করাচ্ছে। এমন তথ্য জানালেন সাতক্ষীরা পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের ঘুটেরডাঙ্গী গ্রামের কয়েকজন কলাচাষী।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলাতে ৭২১ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে কলা চাষ হয়েছে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা সদরে ১৫০ হেক্টর জমিতে, কলারোয়ায় ৭৫ হেক্টর, তালায় ৭৮ হেক্টর, দেবহাটায় ৮ হেক্টর, কালিগঞ্জে ৩৮০ হেক্টর, আশাশুনিতে ২৫ হেক্টর এবং শ্যামনগরে ৫ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়েছে।
এবছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৫৯২ মেট্রিকটন। এরমধ্যে সাতক্ষীরা সদরে ২৭শ’ মেট্রিকটন, কলারোয়ায় ১৬৫০ মেট্রিকটন, তালায় ১৭৬৭ মেট্রিকটন, দেবহাটায় ৮০ মেট্রিকটন, কালিগঞ্জে ২৬৯৫ মেট্রিকটন, আশাশুনিতে ৬২৫ মেট্রিকটন এবং শ্যামনগরে ৭৫ মেট্রিকটন। এছাড়া বসতবাড়িসহ ব্যক্তি পর্যায়ে জেলায় ব্যাপকভাবে কলা চাষ হয়েছে।
সদরের ঘুটেরডাঙ্গী গ্রামের কলা চাষী আনারুল ইসলাম বলেন , সাতক্ষীরায় হাইব্রিড জাতের সাগর কলা চাষ করে তারা লাভবান হচ্ছেন। অন্য ফসলের চেয়ে বেশি লাভ হওয়ায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে কলা চাষ হচ্ছে। দিন দিন এর পরিধিও বাড়ছে। অন্যদিকে বাজারে কলার ব্যাপক চাহিদা থাকায় দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান তারা।
বাশদহা গ্রামের কলা চাষী পলাশ মন্ডল জানান, ৮ থেকে ১০ বছর ধরে তিনি সাগর কলা চাষ করছেন। চলতি বছরেও প্রায় ৭ বিঘা জমিতে এ জাতের কলা চাষ করেছেন। অন্য যে কোনো ফসলের তুলনায় অধিক লাভজনক হওয়ায় তার প্রথম পছন্দ কলা চাষ।
তিনি আরো জানান, প্রতি বিঘা জমিতে সাগর কলা চাষ করতে খরচ হয় ৩৫-৪০ হাজার টাকা। আর বিক্রি করা যায় ১ লাখ ২৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
ঘুটেরডাঙ্গী গ্রামের কলাচাষী রহুল আমিন বলেন,আমি দীর্ঘ দু বছর ধরে কলা চাষ করছি। এক সময় আমার সংসার অনেক অভাব অনাটনে কাটেেতা ।এখন আমি কলা চাষ করে আমার সংসারে সচ্ছালতা ফিরাতে সক্ষম হয়েছি ।
কৃষি কর্মকর্তা দিপক কুমার রায় জানান, ঘুটেরডাঙ্গী গ্রামের অধিকাংশ কৃষক কলা চাষ করছেন। তিনি আরো জানান, প্রতি বিঘা জমিতে এসব কৃষক ৩০-৩২ টন পর্যন্ত কলা উৎপাদন করছেন। তিনি বলেন, সাতক্ষীরার অন্য যে কোনো ফসলের তুলনায় অর্থকরী ফসল হিসেবে কলা চাষ করে ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
তালা উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের বারুইপাড়ার পরিতোষ দাশের ছেলে মিলন দাশ(৪৭) কলা চাষ করে সাবলম্বী হয়েছেন। বর্তমানে তার জমিতে ৪শত এর অধিক কলা গাছ আছে। মিলন দাশ আরও বলেন,আমার কলা বাগানের সফলতা দেখে এলাকাতে অনেকেই কলাবাগান করতে শুরু করেছে ।
দেবহাটার কলা চাষে অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছে কৃষক রমেশ স্বর্নকার। চিংড়ি চাষের পাশা পাশি তিনি কলা চাষ করেন। তার বাগানের কলার আকাঁর,আকৃতি স্বাদে গুনে স্থানীয় কলাকে হার মানিয়েছে। তিনি জানালেন,মাছের চেয়ে কলাতে লাভ তুলনামুলক বেশি। তাই তার এলাকাতে কলা চাষে জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
জেলাতে অমৃত সাগর, সবরি অনুপম, চাম্পা, কবরি, নেপালি, মোহনভোগ মানিকসহ বিভিন্ন জাতের কলা চাষ হয়ে থাকে। তবে সবরি, মানিক মেহের সাগর ও নেপালি কলার চাহিদা অনেক বেশি। কারণ হিসেবে জানা গেছে, ধান, পাট ও আখসহ প্রচলিত অন্যান্য ফসলের তুলনায় কলা চাষে শ্রম ব্যয় খুবই কম। বিক্রির ক্ষেত্রেও ঝামেলা নেই। কলার বাজার দরেও সহজে ধস নামে না। তাই ঝুকি কম থাকায় চাষীরা কলা চাষে আগ্রহী হচ্ছে।
সাতক্ষীরা জেলা কাঁচামাল ব্যবসায়ী জামাল জানান, সাতক্ষীরার উৎপাদিত কলার চাহিদা ব্যাপক। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও এটি এখন জেলার বাইরেও সরবরাহ করা হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আব্দুল মান্নান জানান, সব উপজেলায়ই কমবেশি কলা চাষ করা হয়। তবে সদর উপজেলার ঘুটেরডাঙ্গী গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে সাগর কলা চাষ হচ্ছে। তিনি বলেন, জেলার মাটি ও আবহাওয়া সব ধরণের ফসলের উপযোগী। এখানে বারো মাসই বিভিন্ন ধরণের ফসল ফলে। তারমধ্যে অর্থকরী ফসল হিসেবে এখন কলা চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কৃষি খামার বাড়ির পক্ষ থেকে কলাচাষীদের সার্বিক সহযোগীতা করা হচ্ছে।