চট্টগ্রাম নগরের জামাল খান সড়কে কখনো জলাবদ্ধতা দেখা যায়নি। কিন্তু ২১ মে মাত্র ১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিতেই সেখানে হাঁটুপানি জমে। তার ওপর নগরের পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার বিভিন্ন সড়কে সংস্কারকাজ করা হয়েছে। সেখানেও ওইদিন অল্প বৃষ্টিতেই প্রায় সব সড়কে হাঁটুপানি জমেছে। এভাবে বর্ষা মৌসুমের আগেই অল্প বৃষ্টিতে নগরবাসীকে জলাবদ্ধতার তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
নগরবাসীর অভিযোগ, আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) অন্তত খাল, নালা, ড্রেন পরিষ্কার করত। কিন্তু এবার চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ফলে চসিক আর নালা-নর্দমা সংস্কার করেনি। এ কারণে বৃষ্টির পানি দ্রুত নেমে যেতে পারছে না। এখন চসিক-চউকের রশি টানাটানির তিক্ত খেসারত দিতে হচ্ছে নগরবাসীকে। চসিকসূত্রে জানা গেছে, গত ৭ জানুয়ারি থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত ৫৭টি খালকে ছয়টি জোনে ভাগ করে খননকাজ শুরু করে চসিক। এর মধ্যে চাক্তাই খাল, মহেশ খাল, হিজাড়া খাল, শীতল ঝরনা খাল, ত্রিপুরা খাল, মির্জা খাল, নয়া মির্জা খালে দৈনিক ২৫০ থেকে ৩০০ শ্রমিক কাজ করেছিলেন। খননকাজে ছিল ২০টি স্কেবেটর। চসিকের খরচ হয় প্রায় ৩ কোটি টাকা। কিন্তু পরে সিডিএ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি এলে দ্বৈত কাজ হওয়ায় চসিক মাটি খননকাজ বন্ধ করে। চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী সুদীপ বসাক বলেন, ‘বর্তমানে জলাবদ্ধতা নিরসনে চউক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তাই জলাবদ্ধতার বিষয়টি এখন আর চসিকের আওতায় নেই। তবে চসিক নিয়মিত নালা-ড্রেন পরিষ্কারের কাজ অব্যাহত রেখেছে। প্রতিদিনই পরিচ্ছন্নতা বিভাগের অধীনে শ্রমিকরা নালা-ড্রেন পরিষ্কার করে যাচ্ছেন। ফলে কোথাও পানি স্থায়ী হওয়ার সুযোগ কম।’ নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘চউকের মেগা প্রকল্প দেরিতে শুরু করায় এ বছর হয়তো এর সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই পুরোপুরি বর্ষা শুরুর আগে যদি ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ কাজ শেষ করা যায়, তাহলে হয়তো জলাবদ্ধতার সমস্যা কিছুটা লাঘব হবে। অন্যথায় আগামী বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসীর রক্ষার কোনো পথ নেই।’ সরেজমিন দেখা যায়, গত দুই দিনের বর্ষণে নগরের অধিকাংশ নিম্নাঞ্চলে পানি উঠেছে। তবে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, পোর্ট কানেকটিং রোড, বেপারিপাড়া, মুহুরীপাড়া, গুলবাগ, দাইয়াপাড়া, উত্তর আবাসিক এলাকা, পানওয়ালাপাড়া এবং বৃহত্তর বাকলিয়া এলাকার মিয়াখান নগর, রাজাখালী, নয়া চাক্তাই, তুলাতলীর মানুষ। এর সঙ্গে নগরের বাদুড়তলা, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, প্রবর্তক মোড়, জিইসি মোড়সহ বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে ঈদে বাজারগামী মানুষেরও এখন নাভিশ্বাস চরমে। শিশু, বৃদ্ধ ও নারীদের এ দুর্ভোগ অতিমাত্রায় পোহাতে হচ্ছে। তা ছাড়া এসব এলাকার মানুষকে সীমাহীন কষ্টের মধ্যে সাহরি খেতে হয়। তবে গতকাল বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি নামলেও দুপুর-বিকালের বৃষ্টিতে ফের কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। শুধু তাই নয়, চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বৃহত্তম দুই প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল এবং আগ্রাবাদ মা-শিশু ও জেনারেল হাসপাতালেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ফলে রোগী, স্বজন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে চরম দুশ্চিন্তা ভর করছে। পুরোদমে বৃষ্টি না কমলে অবস্থা আরও খারাপ হওয়ার শঙ্কাও করছেন তারা। চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সরকারি এই হাসপাতালের বারান্দাগুলো অনেক বড়। তাই বৃষ্টি পড়লে ছিটকে পড়া পানি বারান্দা দিয়ে ঢুকে যায়। এ ছাড়া কোনো কোনো ওয়ার্ডে পানি ছাদ চুইয়েও পড়ে। ফলে হাসপাতালের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় ফ্লোরে থাকা রোগীদের চরম কষ্ট পোহাতে হয়। দ্বিতীয়-তৃতীয় তলার একাধিক রোগী বলেন, গত রবিবার রাতে প্রবল বর্ষণে তৃতীয় ও চতুর্থ তলার ফ্লোরে পানি জমে যায়। এ সময় রোগীর স্বজনদের অনেক কষ্ট পোহাতে হয়। চমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম বলেন, ‘পানি পড়লে ফ্লোরে থাকা রোগীদের ওয়ার্ডের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়। রবিবার হয়তো রাতের বেলায় বৃষ্টির কারণে তাদের ভিতরে নেওয়া হয়নি।’ এদিকে, চট্টগ্রাম নগরের আরেক বেসরকারি বৃহত্তম স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান মা-শিশু ও জেনারেল হাসপাতালের নিচতলায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। দুর্ভোগে পড়তে হয় রোগীদের। জলাবদ্ধতার কারণে নিচতলার রোগীদের উপরে স্থানান্তর করা হয়।
- ব্রেকিংবিডিনিউজ২৪ / ১২ জুন ২০১৮ / তানজিল আহমেদ