খুলনা সিটিতে বিজয়ের পর এবার প্রথম চোখ গাজীপুরে। এরপর রাজশাহী, সিলেট ও বরিশালে জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামবে আওয়ামী লীগ। গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে অভ্যন্তরীণ যে সংকট সৃষ্টি হয়েছিল তা ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিভেদ ভুলে নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা না থাকলেও ইফতার ও কর্মিসভার মাধ্যমে ভিন্ন আমেজে চলছে গণসংযোগ ও প্রচারণা। জয়ের প্রধান টার্গেট নিয়ে ঈদের পর ২৫ কেন্দ্রীয় নেতা মাঠে নামছেন। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক ও কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খানকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দায়িত্ব পেয়ে দুই নেতা তাদের মিশন শুরু করেছেন। মিশন হলো— খুলনার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গাজীপুরে ‘অর্জিত জয়ের বার্তা’ তিন সিটিতে আসন্ন নির্বাচনী বার্তাবরণে পৌঁছে দেওয়া। আগামী ৩০ জুলাই সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটিতে ভোট হওয়ার কথা। উল্লেখ্য, গত ১৫ মে গাজীপুর সিটিতে ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সীমানা নিয়ে জটিলতায় একটি রিটের কারণে প্রথমে উচ্চ আদালত ভোট স্থগিত করে। পরবর্তীতে রিট করা হলে আগামী ৩০ জুন নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেয় আদালত। এরপর নির্বাচন কমিশন ২৬ জুন ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে। সূত্রমতে, গাজীপুর সিটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে শীর্ষে ছিলেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম। আজমত উল্লাহ খান গতবার দলের সমর্থনে সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হন। সে সময় জাহাঙ্গীর আলম প্রার্থী হন। পরে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ালেও আজমত উল্লাহর পরাজয়ের পেছনে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জাহাঙ্গীরকেই দায়ী করেন সে সময়। এবার মনোনয়ন যুদ্ধে আজমত উল্লাহ ছিটকে পড়েন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে আজমত উল্লাহ খানকে প্রধান সমন্বয়ক করা হয়। কিন্তু আজমত উল্লাহকে সক্রিয় করার ব্যাপারে জাহাঙ্গীরের তেমন ভূমিকা ছিল না। এ ছাড়া দলীয় মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমের ‘একলা চল’ নীতিতে ক্ষুব্ধ হন দলের হাইকমান্ড। যে কারণে তাকে গণভবনে ডেকে কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্দেশ দেন দলের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে। কেন্দ্রীয় নেতাদের গাজীপুরে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচারণা চালানো এবং স্থানীয় নেতা-কর্মীদের বিভেদ দূর করার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সংসদে দলের দুজন সিনিয়র নেতাকে ডেকে কথা বলেন। এরপর গাজীপুরের যারা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন। সূত্রমতে, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি নির্বাচনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালনকারী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক ও কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খানকে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তাদের মূল দায়িত্ব হচ্ছে গাজীপুরের শীর্ষ নেতা এবং কেন্দ্রীয় টিমকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া। গত মঙ্গল ও বুধবার এই দুই নেতা পৃথক পৃথকভাবে আজমত উল্লাহ খানের সঙ্গে কথা বলেছেন। রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় এবং টঙ্গীতে তাদের কথা হয় বলে সূত্র জানিয়েছে। এ ছাড়াও গত কয়েক দিন আজমত উল্লাহ টঙ্গীতে জাহাঙ্গীরের পক্ষে জোর নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও দফায় দফায় গাজীপুরে ইফতার মাহফিল ও কর্মিসভায় যোগদান করছেন। স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, সিটি নির্বাচনের শুরু থেকে যে দূরত্ব ছিল তা নিরসন হতে চলেছে। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন।
সূত্রমতে, গাজীপুর সিটিতে স্থানীয় এমপিদের মধ্যে আ ক ম মোজাম্মেল হক, মেহের আফরোজ চুমকি ও জাহিদ আহসান রাসেল ইতিমধ্যে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামার নির্দেশ দিয়েছেন। বিভিন্ন জায়গায় কর্মিসভা, ইফতার মাহফিলে যোগ দিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট চাইছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতারুজ্জামান। ঈদের পর কেন্দ্রীয় ২৫ জন নেতা গাজীপুর সিটি এলাকায় নৌকা মার্কায় ভোট প্রার্থনা করবেন। একই সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমন্বয় করবেন তারা।
গত বুধবার আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছিলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে তাকেসহ আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুককে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনা নিয়ে তারা গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আজমত উল্লাহ খানের সঙ্গে কথা বলেছেন। দলীয় প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমও তাদের জানিয়েছেন, দলের ভিতরে যে মান-অভিমান ছিল তা নিরসন হচ্ছে। নেতা-কর্মীরা সবাই ঐক্যবদ্ধ।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় টিমের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা বরাবরই বলে আসছি, প্রার্থী কোনো বিষয় নয়-আওয়ামী লীগের কাছে প্রতীকটাই মুখ্য বিষয়। আওয়ামী লীগ যখনই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তখনই বিজয় এসেছে। খুলনাতে ঐক্যবদ্ধ ও উন্নয়নের কারণে বিজয় এসেছিল-গাজীপুরেও তাই আসবে।’ তিনি বলেন, ‘গাজীপুরে শুরুর দিকে ছোটখাটো সমস্যা ছিল-কিন্তু এখন তা নেই। গাজীপুর আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত।’