শিশুর জন্মের পর প্রথম আধা ঘণ্টা তার মায়ের দুধ টেনে খাওয়ার ক্ষমতা খুব বেশি থাকে। তাই জন্মের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করা দরকার। কোনো অবস্থাতেই পানি, মিসরি পানি, মধু বা অন্য দুধ দেয়া উচিত নয়। শিশু বাড়িতে হোক বা হাসপাতালে, নরমাল হোক বা সিজারিয়ান, জন্মের পরপরই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে মায়ের দুধ টানানো উচিত।
সঠিকভাবে বুকে ধরা
বসা অবস্থায় : মা যে দিকের দুধ খাওয়াতে চান সেই দিকের হাতের কনুইয়ের ভাজে শিশুর মাথা রাখবেন এবং হাতের তালুতে শিশুর পাছা ধরবেন। তারপর বুকের সামনে শিশুকে আড়াআড়িভাবে ধরবেন যাতে শিশুর ঠোঁট মায়ের দুধের বোঁটার কাছে পৌঁছায়। এ অবস্থায় মা অন্য হাত দিয়ে তার স্তন নিচের দিক থেকে আলতো করে তুলে ধরবেন। যাতে স্তনের বোটা শিশুর ঠোঁট স্পর্শ করে।
এ সময়ে তাড়াহুড়ো না করে একটু অপেক্ষা করতে হবে। প্রয়োজন হলে মা হাত দিয়ে চেপে সামান্য দুধ শিশুর ঠোঁটে লাগাতে পারেন। মুখে বোঁটার ছোঁয়া লাগলে শিশু দুধ খুঁজবে এবং হা করবে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। এ সময়ে জোর করে বোঁটা তার মুখে ভরার চেষ্টা না করে লক্ষ করতে হবে যে, সে মোটামুটি একটু বড় হা করেছে কিনা। বড় হা করার সাথে সাথে শিশুকে আলতো করে স্তনের সাথে মিশিয়ে ধরতে হবে। শিশু এই সময়ে মায়ের দিকে ফেরানো থাকবে। তার পেট মায়ের পেটের সাথে লাগবে। নাক এবং থুঁতনি মায়ের স্তনের সাথে ছোঁয়া লাগবে। মায়ের বোঁটা এবং বোঁটার পাশের কালো অংশের বেশির ভাগ শিশুর মুখের ভেতরে থাকবে। মুখ থাকবে বড় করে হা করা। এ অবস্থায় মায়ের বুকে ধরতে পারলে মায়ের দুধ পেতে শিশুর কোনো অসুবিধা হয় না।
শোয়া অবস্থায় : মা যেদিকের দুধ খাওয়াবেন সেদিকে কাত হয়ে শোবেন। শিশুকে তার বুকের কাছে টেনে আনবেন যাতে স্তনের বোঁটা শিশুর ঠোঁটে লাগে। শিশু বড় হা করলে তাকে আরো বুকের সাথে মিশিয়ে ধরতে হবে যাতে বোঁটা এবং বোঁটার পাশের কালো অংশের বেশির ভাগ তার মুখের ভেতরে ঢুকে যায়। তার পেট মায়ের পেটের সাথে মিশে থাকে। মায়ের এক হাত ভাজ করে তার নিজের মাথার নিচে দেবেন অন্য হাতে শিশুকে আলতো করে ধরে রাখবেন।
কতবার খাওয়াবেন : প্রথমদিকে মায়ের বুকে যে শালদুধ থাকে সেটা পরিমাণে কম হলেও গুণে অনেক সমৃদ্ধ। তাই শালদুধ অবশ্যই শিশুকে খাওয়াতে হবে। এই সময়ে যত ঘন ঘন মায়ের বুকে ধরা যায় ততই ভালো। কারণ, এতে শিশুর দুধ টানার অভ্যাসটা চালু হয়। তা ছাড়া বার বার টানার ফলে মায়ের দুধও বেশি করে নামতে শুরু করে। এখানে মনে রাখতে হবে যে, শিশু বোঁটা চুষলে মায়ের শরীরে এক ধরনের সাড়া পড়ে, ফলে দুধ তৈরি হতে শুরু করে। কাজেই দুধ নেই বলে বুকে টানাবেন না- এটা কিন্তু সঠিক চিন্তা নয়। নতুন শিশু সাধারণত একটু বেশি ঘুমিয়ে থাকে। তাই কিছুক্ষণ পরপর তাকে একটু নাড়াচাড়া দিয়ে জাগিয়ে বুকে ধরতে হবে। ঘুমিয়ে থাকলেও একটানা দু’ঘণ্টার বেশি যাতে না খেয়ে থাকে সেদিকে একটু খেয়াল রাখতে হবে। দিনে এবং রাতে উভয় সময়ে বুকের দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে।
একবারে কতক্ষণ খাওয়াবেন : শিশুকে একবারে একদিকের দুধ খাওয়াতে হবে। প্রতিবারে দু’দিকেরই খাওয়াতে হবে, এ ধারণা সঠিক নয়। তবে একদিকের দুধ শেষ করে যদি তার পেট না ভরে তাহলে অন্য দিকেরটাও খাওয়ানো যেতে পারে। এভাবে অদল বদল করে দিনরাত একবার ডান একবার বাম আবার ডান আবার বাম এই নিয়মে খাইয়ে যেতে হবে। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর কোনো সময় নেই। যখন খুশি তখন মা তার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন এবং যখন খুশি তখন শিশুও তার মায়ের দুধ খেতে পারে। তবে শিশু যদি সারাক্ষণই মায়ের দুধ টানতে চায় তখন খেয়াল করতে হবে সে বুকে ঠিকমতো লেগেছে কিনা।
যে নারীরা নিয়মিত ফাস্টফুড খান কিন্তু ফলমূল কম খান, তারা গর্ভধারণ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে পারেন বলে নতুন একটি গবেষণায় বলা হয়েছে।
৫৫৯৮ জন নারীর ওপর একটি গবেষণার পর দেখা গেছে, যারা ফাস্টফুড খান না, তাদের তুলনায় যারা সপ্তাহে চার বা আরো বেশিবার ফাস্টফুড খান, তাদের গর্ভধারণে অন্তত একমাস সময় বেশি লাগে।
তাদের সন্তান ধারণ করতেও বেশি সময় লাগে বলে ওই গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা প্রমাণ করছে যে, ভালো খাবার খেলে গর্ভধারণের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য আর আয়ারল্যান্ডের নারীদের কাছে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, প্রথম সন্তান ধারণের কয়েক মাস আগে তারা কোন ধরণের খাবার খেয়েছিলেন।
গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, যে নারীরা মাসে তিনটার কম ফল খেয়েছেন, তাদের গর্ভধারণে নিয়মিত ফলাহারীদের তুলনায় দেড় মাস সময় বেশি লাগে।
তারা দেখেছেন, যারা ফল কম খায় বা ফাস্টফুড বেশি খাচ্ছেন, তাদের অনেকে পুরো বছর জুড়ে চেষ্টা করেও গর্ভধারণ করতে পারেননি।
তবে কোন যুগলের পুরুষ সঙ্গী যদি ফাটিলিটি চিকিৎসা নিয়ে থাকেন, তাদের এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
গবেষণা দলের প্রধান, ইউনিভার্সিটি অব এডিলেডের অধ্যাপক ক্লারি রবার্টস বলছেন, ‘এই পর্যবেক্ষণ বলছে যে, ভালো মানের খাবার খাওয়া আর ফাস্টফুড এড়িয়ে চলতে পারলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায় এবং তাড়াতাড়ি গর্ভধারণ করা যায়।’
তবে অনেকে এর সমালোচনা করে বলছেন, এই গবেষণায় অল্প কিছু খাবারকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।
কিন্তু গর্ভধারণে হয়তো আরো অনেক বিষয়ের প্রভাব থাকতে পারে।
এমনকি বাবাদের খাবারের বিষয়ে এখানে তথ্য সংগ্রহ করা হয়নি।
তারপরেও এই গবেষণাটির অনেক গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত নন, ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডের অধ্যাপক জিনো পেকোরারো বলছেন, ‘সারা বিশ্বের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যা মনে করেন, এই গবেষণা সেটিকেই সমর্থন করেছে যে, যে যুগলরা সন্তান নিতে চান, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার তাদের জন্য সহায়ক হতে পারে।’
আরো পড়ুন : মেয়েদের অনিয়মিত পিরিয়ড
ডা: রুমানা নুশরাত চৌধুরী
অনিয়মিত পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব নারীদের একটি সাধারণ সমস্যা। আপনি জেনে অবাক হবেন, অনেক নারীই প্রজনন বছরজুড়েই অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যায় পড়েন। ঋতুস্রাব চক্রের এ অনিয়ম কিংবা রক্তস্রাব কম হওয়াকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, অলিগোমেনোরিয়া বলা হয়। আরো নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে ৩৬ দিনের ব্যবধানে (দুই ঋতুচক্র বা প্রতি বছর আটটি চক্রের কম সময়) পিরিয়ড হওয়াকে অনিয়মিত পিরিয়ড বলে। ২০১১ সালে জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল এন্ডোক্রোনোলজি অ্যান্ড মেটাবলিজমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রায় পাঁচ শতাংশ বয়স্ক নারীদের অনিয়মিত পিরিয়ড একটি সাধারণ সমস্যা।
অনিয়মিত পিরিয়ড সাধারণ তিনটি কারণ সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। আসুন কারণগুলো জেনে নিই-
অতিরিক্ত শরীরচর্চা
আমরা প্রত্যেকেই জানি সুস্থ জীবনধারার জন্য নিয়মিত শরীরচর্চা করা প্রয়োজন। কিন্তু খুব বেশি শরীরচর্চা থাইরয়েড অ্যয়াড্রিনাল এবং পিটুইটারি গ্রন্থীগুলোতে অতিরিক্ত চাপ দিয়ে থাকে। তাই যেসব নারী অতিরিক্ত শরীরচর্চা করেন তাদের ক্ষেত্রে হঠাৎ কইে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। অতিরিক্ত শরীরচর্চায় যে পরিশ্রম হয় তাতে স্ট্রেস লেভেল বা চাপের মাত্রা বেড়ে যায়। সেই সাথে যৌন হরমোন নিয়ন্ত্রণে শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তি নিঃশেষ করে। যেসব নারীরা দৌড়ান অথবা বেলিড্যান্সের মতো শারীরিক কসরত অনুশীলন করেন তাদের অনিয়মিত পিরিয়ড দেখা দেয়।
নিম্নমানের ডায়েট : নিম্নমানের ডায়েট মানে যেসব খাবারে পুষ্টিগুণ কম এবং উচ্চমাত্রার উদ্দীপক যুক্ত। এসব খাবার অ্যাড্রিনাল এবং থাইরয়েড গ্রন্থির ক্ষতি করতে পারে। উচ্চমাত্রার চিনি, চর্বি এবং পেস্ট্রি সাইড খাবার থাইরয়েড এবং অ্যাড্রিনালের অবসাদে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এগুলো অবসাদ গ্রন্থের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। বেড়ে যাওয়া অবসাদের মাত্রা অপটিমাল ফাংশনের প্রয়োজনীয় হরমনে বাধা দেয়। ফলে পিরিয়ড হতে দেরি হতে পারে। যেসব নারীরা অনিয়মিত পিরিয়ড সমস্যায় ভোগেন তারা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, উচ্চমাত্রাসম্পন্ন চর্বি এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান। যদি কারো ওজন কম হয় তবে উচ্চক্যালরিযুক্ত সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন।
মাত্রাতিরিক্ত মানসিক চাপ : দীর্ঘ দিন ধরে চাপের প্রভাবে আপনার শরীর ডিম্বাশয়ের বিকাশনা করে শক্তি সংরক্ষণ করে। এছাড়াও অ্যাড্রিনালের অধিক পরিমাণ কাজের কারণ হতে পারে কোনো আঘাতজনিত ঘটনা। এতেই ইস্ট্রোজেনের মতো অন্যান্য প্রজনন হরমন উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কম হলে শরীর গর্ভধারণে সক্ষম হয় না। ফলে অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা দীর্ঘায়িত হয়।