মৌলভীবাজারে মনু নদীর পানি কমলেও বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে কুশিয়ারা নদীর পানি। ফলে রাজনগর উপজেলার কালাইকুনা এলাকায় বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, বাঁধটি ভেঙে গেলে হাওর পাড়ের গ্রামগুলো বড় ধরনের বন্যার কবলে পড়বে।
ওয়াকিবহাল সূত্র বলছে, এর আগেও কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভাঙা এলাকা দিয়ে পানি প্রবেশ করা শুরু হয়েছিল এবং তখন পানি উন্নয়ন বোর্ড জায়গাটি মেরামত করেছিল। কিন্তু এখন আবার নতুন করে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। গতকাল সরেজমিনে রাজনগর উপজেলার বন্যায় তলিয়ে যাওয়া আকুয়া, কামারচাক, কোনাগাঁও, মহলালসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকার কৃষকদের রোপণকৃত ধানি ফসল ও আমন ধানের বীজতলা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। আকুয়া গ্রামের আবদিন খান, শাহাজান খানসহ অনেকেই জানান, বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আউস ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। আমন ধানের বীজতলাও নষ্ট হয়েছে। এখন কৃষকরা বিপাকে রয়েছেন, কারণ তাদের হাতে বীজও নেই। একই এলাকার নজিম মিয়া বলেন, ঘরে যে বীজ ছিল তা বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এখন আমরা বীজ কোথায় পাব, কীভাবে কৃষিখেত করব— তা নিয়ে দিশেহারা অবস্থায় রয়েছি। মহলাল গ্রামের আজাদ মিয়া জানান, ভয়ংকর বন্যায় তার ৬ বিঘা আউস খেত নষ্ট হয়ে গেছে। এদিকে মনু নদীর ভাঙন এলাকা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া পানি এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি ও রাজনগরের কাউয়াদিঘিতে গিয়ে পড়ায় হাওরাঞ্চলেও অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানা গেছে। জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, অকাল বন্যায় জেলার ৪ টি উপজেলায় ফসলি জমি ও বীজতলা মিলিয়ে মোট ৩৪২০ হেক্টর তলিয়ে গিয়েছিল। এখনো পানির নিচে রয়েছে ১৪৬০ হেক্টর জমি। এর মধ্যে রয়েছে কুলাউড়া উপজেলায় ৬০০ হেক্টর, রাজনগর উপজেলায় ৪৫০ হেক্টর, কমলগঞ্জ উপজেলায় ২৫০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ১৬০ হেক্টর। এ বছর আউশের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৯৮০৯ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৪৯৪৪০ হেক্টরে। ১৫০ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন সবজি তলিয়ে গিয়েছিল, এখনো পানির নিচে রয়েছে ৪৫ হেক্টর জমি। এ ব্যাপারে, জেলা কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কাজী লুত্ফুল বারী বলেন, আমরা আশাবাদী দুই-এক দিনের মধ্যে পানি আরও কমে গেলে তলিয়ে যাওয়া অর্ধেকের বেশি ফসল রক্ষা পেতে পারে। ধারণা পাওয়া গেছে, টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ভারতের পাহাড়ি ঢলে মনু নদ ও ধলাই নদীর বাঁধ ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে মৌলভীবাজার পৌরসভা, মৌলভীবাজার সদর উপজেলাসহ, জেলার কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, রাজনগর উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নের মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নষ্ট হয়েছে তাদের আউস ধান, আমন ধানের বীজ তলাসহ সবজি খেত। আকস্মিক বন্যায় অনেকেই হারিয়েছেন তাদের বসতভিটা।