কান আমাদের শরীরের অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি অঙ্গ। এই অঙ্গটির খেয়াল রাখা জরুরি। এবার অনেকে কান পরিষ্কার করতে গিয়ে কানে কটন বাডস, দেশলাই-তুলো ঢুকিয়ে ফেলেন। এর থেকে বড় বিপদের আশঙ্কাই বেশি। তাই সতর্ক থাকুন।
কান আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। এই অঙ্গটির খেয়াল রাখাই আমাদের প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। তবে এরপরও মানুষের মধ্যে এই অঙ্গটিকে নিয়ে উদাসীনতা দেখা যায়। এই কারণেই দেখা দেয় মূল সমস্যা। তাই প্রতিটি মানুষকে অবশ্যই নিজের কান নিয়ে হয়ে যেতে হবে সতর্ক।
এবার অপর একদল মানুষ আবার অনেক বেশি সতর্ক। তাঁরা নিজের কানের খেয়াল রাখার কাজে অন্যদের তুলনায় একধাপ এগিয়ে থাকেন। এই মানুষগুলি সময় বুঝে করতে থাকেন কান পরিষ্কার। এক্ষেত্রে নিয়মিত কান পরিষ্কার করেন এই মানুষগুলি। তাই কানে দেশলাই কাঠি-তুলো থেকে হাল আমলের ইয়ার বাডস সবই ঢুকছে।
এবার প্রশ্ন হল কান পরিষ্কার করার কি আদৌ প্রয়োজন রয়েছে? এই প্রসঙ্গে কালকাতার কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের প্রধান প্রফেসর দ্বৈপায়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, আমাদের কান পরিষ্কার করার কোনও প্রয়োজনই নেই।
কারণ কানে নিজের মতো করে একটা পরিষ্কার করার প্রক্রিয়া রয়েছে। আর এই প্রক্রিয়া ২৪ ঘণ্টা চলে। এক্ষেত্রে সহজে বললে, কানের ভিতর ঝাটার মতো কিছু জিনিস রয়েছে যা ময়লা বের করে দেয়।
এছাড়া কানে রয়েছে জেলির মতো ওয়াক্স। এই জেলির মতো পদার্থেও অনেক বাইরের পদার্থ আটকে যায় এবং তা নির্দিষ্ট সময়ে বাইরে চলে আসে। তাই আলাদা করে কান পরিষ্কারের প্রয়োজন নেই।
বাডস ও দেশলাই দিয়ে কান পরিষ্কার: ডা: মুখোপাধ্য়ায় বলেন, অনেকে এই কাজটা করে থাকেন। যদিও এটা একেবারেই ভুল কাজ। আপনি এভাবে কান পরিষ্কার করতে গিয়ে বড় বিপদ বাধাতে পারেন। সেক্ষেত্রে কানের ভিতরের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমনকী কানে ইনফেকশনও হওয়া সম্ভব।
এছাড়া কোনও কোনও ক্ষেত্রে তো কানের পর্দা পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে এই বাডস। তখন পর্দা ফুটো হয়ে যায়। তাই কান পরিষ্কার করার কোনও প্রয়োজনই নেই। বরং তেমন হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
অনেকে আবার অপেশাদারী মানুষের কাছে কান পরিষ্কার করাতে যান। এটাও কিন্তু খুবই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। এক্ষেত্রেও একটু এদিক-ওদিক হলে কানের পর্দায় চোট লেগে শুনতে সমস্যা হতে পারে। তাই এই কাজটিও এড়িয়ে চলুন।
এছাড়া আর কী কী সমস্যা হতে পারে? কান পরিষ্কার করতে থাকলে অনেক সময় কান নিজের কাজটি ভুলে যায়। অর্থাৎ কান যেভাবে নিজেকে পরিষ্কার রাখতে পারত, সেটা করা ছেড়ে দেয়। তাই কানে ময়লা জমতে পারে।
এর থেকে ইনফেকশন ও অন্যান্য সমস্যা দেখা দেওয়া সম্ভব। এই অবস্থায় কানে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। তাই এমনটা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তবেই ভালো থাকতে পারবেন।
কী করা যেতে পারে? ডা: মুখোপাধ্যায়ের কথায়, কান পরিষ্কার করার কোনও প্রয়োজনই নেই। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কানে ইনফেকশন হয় বা অন্য কোনও কারণে ময়লা জমে যায়।
এবার কানে ময়লা জমলে চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই খুব সহজেই কানও ওয়াশ করে দেওয়া যায়। তবে অনেকের কানে ময়লা পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায়।
এই মানুষগুলির ক্ষেত্রে কানে কিছু ড্রপ দেওয়া হয়। এই ড্রপ এক সপ্তাহ দেওয়ার পর কানের ময়লা নরম হয়ে যায়। এরপর সহজে ওয়াশ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞই এই কাজটা করতে পারেন। নইলে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কান আমাদের অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি অঙ্গ। তাই এই অঙ্গের খেয়াল রাখা প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রে খুবই জরুরি। তবে এরপরও মানুষ অবহেলা করে সমস্যাকে বাড়িয়ে হাসপাতালে আসেন।
তখনই সমস্যা বেশি দেখা যায়। তাই প্রতিটি মানুষকে অবশ্যই চোখের মতোই কানের পরীক্ষা করা দরকার। কারণ কানের ভিতরে কোনও রোগ থাকলে এই চেকআপের মাধ্যমেই সহজেই ধরা পড়ে। তখন চিকিৎসা ঠিকমতো করা যেতে পারে। অন্যথায় সমস্যা দেখা দেয়।
বিদ্র: প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।-এই সময়