গুরুতর হেপাটাইটিসের রহস্যময় একটি প্রজাতি বিশ্বের অন্তত ১১টি দেশে ছড়িয়েছে। রহস্যময় এই ভাইরাসে আক্রান্ত এক শিশুর মৃত্যুও ঘটেছে। আক্রান্তদের রক্তে প্রচলিত হেপাটাইটিসের জীবাণু না মেলায় বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, বিশ্বের ১১টি দেশে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১৬৯ জন শিশুর এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের বয়স এক মাস থেকে ১৬ বছর। আক্রান্তদের বেশিরভাগই অর্থাৎ ১১৬ জন ব্রিটেনের। যুক্তরাজ্যে প্রথম রহস্যময় এই ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া যায় গত জানুয়ারিতে।
যুক্তরাজ্য ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, ডেনমার্ক, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস এবং স্পেনেও এ রোগে অল্প কয়েকজন আক্রান্ত শিশুর সন্ধান পাওয়া গেছে। ডব্লিউএইচও বলছে, ‘তীব্র, গুরুতর’ হেপাটাইটিস প্রজাতিতে আক্রান্ত হয়ে এক শিশু মারা গেছে। এছাড়া আরও ১৭ শিশুর লিভার প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন।
অতীতে শিশুদের ‘মৃদু হেপাটাইটিসে’ আক্রান্তের ঘটনা খুব বেশি শোনা না গেলেও সুস্থ শিশুদের মধ্যে ‘গুরুতর হেপাটাইটিস’ বিরলই ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে রোগ সৃষ্টিকারী এজেন্টও শনাক্ত করা যায়নি। তবে অ্যাডেনোভাইরাসকে সম্ভাব্য এজেন্ট হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে। রোগ সৃষ্টিকারী এজেন্ট শনাক্তে তদন্ত চলমান রয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রোগ প্রতিরোধ সংস্থা ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (ইসিডিসি) ও ডব্লিউএইচও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাধারণত জন্ডিস বা হেপাটাইটিস হলে রোগীর গায়ে জ্বর থাকলেও নতুন এই হেপাটাইটিসে আক্রান্ত শিশুদের অধিকাংশই এই উপসর্গ বোধ করেনি। বরং জন্ডিস, ডায়রিয়া, বমি, ক্ষুধামন্দা, শরীরের জোড়ায় ব্যথা এবং লিভারে প্রদাহের কারণে পেটব্যথার উপসর্গ দেখা গেছে আক্রান্তদের মধ্যে।
ডব্লিউএইচও বলেছে, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ অথবা অন্যান্য দেশের সাথে সংশ্লিষ্টতারও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিশ্বে এ পর্যন্ত ৫টি হেপাটাইটিস ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে— এ, বি, সি, ডি ও ই। কিন্তু এসব ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের কারো ক্ষেত্রেই এ পর্যন্ত লিভারে প্রদাহের মতো উপসর্গ দেখা যায়নি।
ইসিডিসির কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘আক্রান্ত শিশুদের নমুনা বিশ্লেষণ করে প্রচলিত কোনো হেপাটাইটিস ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। করোনা টিকা নেওয়া কিংবা খাদ্য, পানীয় অথবা ব্যক্তিগত কোনো অভ্যাসের কারণে এই রোগ হয়েছে— এমন প্রমাণও আমরা পাইনি।’
‘ঠিক কী কারণে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে, তা এখনও আমাদের কাছে অস্পষ্ট। তবে ইসিডিসি ইতোমধ্যে এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে, যেসব দেশে এই হেপাটাইটিস দেখা দিয়েছে, তারাও পৃথকভাবে বিষয়টির অনুসন্ধান করছে।’
বার্সেলোনার হেপাটোলজি অধ্যাপক এবং ইউরোপিয়ান এসোসিয়েশন অব দ্য স্টাডি অব দ্য লিভারের পাবলিক হেলথ কমিটির চেয়ারম্যান মারিয়া বুটি বলেছেন, আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখনও অনেক কম, কিন্তু এই রোগীরা শিশু। এটিই আমাদের প্রধান উদ্বেগের বিষয় এবং অন্যটি হল এর তীব্রতা।