গুলশানের যে ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, সেই ফ্ল্যাটে মুনিয়ার লিখা ৬টি ডায়েরি পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, মুনিয়ার লিখা ৬টি ডায়েরিই তীব্র অভিমান আর ক্ষোভে ঠাসা। ডায়েরিগুলোর পাতায় পায় লিখে রেখেছেন জীবনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনাবলি। বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের সঙ্গে কিভাবে পরিচয়, পরিচয় থেকে কিভাবে প্রণয় এবং সবশেষ করুণ পরিণতির কারণও ডায়েরিতে লিখে গেছেন মুনিয়া।
গত সোমবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গুলশান ২ নম্বরের ১২০ নম্বর সড়কের ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সোমবার রাতেই রাজধানীর গুলশান থানায় ৩০৬ ধারায় ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়া’র অভিযোগে বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীর বিরুদ্ধে মামলা করেন মোসারাতের বড় বোন নুসরাত জাহান। মামলা নম্বর-২৭। এরপরই এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়। এরইমধ্যে আদালত সায়েমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুলিশের গুলশান জোনের উপকমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ওই ফ্ল্যাট থেকে তরুণীর মৃতদেহ উদ্ধারের পর সেখান থেকে তার মোবাইলসহ বিভিন্ন ধরনের আলামত উদ্ধারের সাথে ৬টি ডায়েরি পাওয়া গেছে। এসব ডায়েরিতে কী লিখা আছে, তা যাচাই করা হচ্ছে।’
মুনিয়ার বোনের করা মামলার অভিযোগে বলা হয়, সায়েম সোবহান আনভীরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল মুনিয়ার। গুলশানের ওই বাসায় আনভীরের যাতায়াত ছিল। তবে এসব বিষয়ে সায়েমের কোনও বক্তব্য এখনও গণমাধ্যমে আসেনি।
ডিসি সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, ওই ফ্ল্যাটে মুনিয়া একা থাকার কথা বলা হলেও কে কে আসা যাওয়ার মধ্যে থাকতো, তা জানতে ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া ডায়েরির সাথে সেগুলো যাচাই চলছে।
মুনিয়ার মৃত্যু কী হত্যা নাকি আত্মহত্যা, তা নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছি। আপাতত হ্যাংগিং মনে হলেও প্রতিবেদন থেকে জানা যাবে, কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে। এরপরই তদন্তের গতি নির্ধারণ হবে। এখন আমরা অ্যাভিডেন্স কালেকশন করছি।’
গতকাল ময়নাতদন্তের পর মরদেহ গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় নেয়া হয় এবং সেখানে বাবা-মায়ের কবরের পাশেই মুনিয়াকে দাফন করা হয়।
মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া কুমিল্লায় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মুনিয়া ডায়েরি লিখতো। সেখান থেকে অনেক তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
মুনিয়া ঢাকার একটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান। মেয়েটির পরিবার কুমিল্লায় থাকে। এখানে গুলশানের ওই ফ্ল্যাটে তিনি একাই থাকতেন।
পুলিশ জানায়, মুনিয়া যে ফ্ল্যাটটিতে থাকতেন চুক্তিপত্র অনুযায়ী ওই ফ্ল্যাটটির মাসিক ভাড়া ১ লাখ টাকা। সেখানে অগ্রিম দেয়া হয়েছে ২ লাখ টাকা। এরইমধ্যে দুই মাসের ভাড়া পরিশোধ করা হয়েছে।
এদিকে মুনিয়ার লাশ উদ্ধারের ঘটনায় করা মামলার আসামি বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক শহিদুল ইসলাম। একইসঙ্গে ৩০ মে’র মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করারও আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আসামি সায়েম সোবহান যাতে দেশ ছাড়তে না পারেন সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে গতকালই জানিয়েছেন পুলিশের গুলশান জোনের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।
তবে সায়েম সোবহান আদৌ দেশে আছেন কি না, তা নিয়েও এখন সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে ডিসি সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘সায়েম সোবহান দেশের বাইরে চলে গেছেন কিনা, এ ব্যাপারে আমাদের পক্ষ থেকে ইমিগ্রেশনে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে সায়েম দেশের বাইরে যাননি।’