সৌদি আরবে মালিক ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্যা’তনের শিকার হচ্ছেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের এক তরুণী। তাই দেশে ফিরতে ভিডিও কলে তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি আকুতি জানিয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে কান্নাজড়িত কণ্ঠে দেশে ফেরার সেই আকুতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে।
নির্যা’তনের শিকার তরুণী শিল্পী আক্তার (২৫) জেলার চুনারুঘাট উপজেলার আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের তৈইগাঁও গ্রামের আব্দুল মজিদের মেয়ে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ওই তরুণী কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার মায়ের কাছে বলছেন- ‘তুমরার কাছে আমি ভিক্ষা চাই। আমারে দেশে ফিরাইয়া নেও। তিন বছর ধইরা আমারে আটকাইয়া রাখছে। আমারে ধরে-মারে। মালিকে মারে, মালিকের পুলা-পুইরে মারে। আমারে খানি দেয় না, একবার দিলে- আরেকবার দেয় না। ঘরের ভেতরে তালা মাইরা রাখে। দেশে ফিরাইয়া না নিলে আমারে মাইরালাইব, লাশ কইরা বাংলাদেশে পাঠাইব।’
শিল্পীর মা নূরচাঁন বিবি জানান, ২০১৯ সালের এপ্রিলে সৌদি আরব যায় তার মেয়ে শিল্পী আক্তার। সেখানে যাওয়ার পর একটি বাসায় গৃহকর্মীর চাকরি নেয় সে। কিন্তু সেই বাসাটি সৌদি আরবের কোন এলাকায় সেটি নিশ্চিত নন তিনি। সেখানে যাওয়ার পরই তার ওপর চলে নির্যা’তন। কাজে ছোটখাটো ভুল হলেই মারধরের শিকার হয় শিল্পী। প্রতিনিয়ত তাকে শারীরিক নির্যা’তন করেন বাসার মালিক, ছেলে ও মেয়েরা।
প্রথমে মা-বাবা ও অসচ্ছল পরিবারের কথা চিন্তা করে সব নির্যা’তন নীরবে সয়ে যান শিল্পী। কথা ছিল দুই বছর সেখানে থাকার পর ২০২১ সালের এপ্রিলে তাকে দেশে পাঠিয়ে দেবে। কিন্তু দুই বছর অতিক্রম হলেও তাকে দেশে পাঠানো হয়নি। উল্টো ভিসার মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। দেশে আসার কথা বললে শিল্পীর ওপর নির্যা’তনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। শারীরিক ও মানসিক নির্যা’তনে বর্তমানে শিল্পী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মা-বাবার সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলতে চাইলেও কথা বলতে দেওয়া হয় না।
নূরচাঁন বিবি বলেন, আমি আমার মেয়েকে ফিরে চাই, কিন্তু তারা আমার মেয়েকে দিচ্ছে না। ট্রাভেলসের লোকেরাও আমার মেয়েকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করছে না। তাই বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ আমার মেয়েকে দেশে ফিরিয়ে আনুন।
শিল্পীর বাবা আব্দুল মজিদ বলেন, সংসারে অভাবের কারণে মেয়েকে সৌদি আরব পাঠিয়েছিলাম। এখন আমার মেয়ে খুব কষ্টে আছে। আমি আমার মেয়েকে ফিরে চাই। তিনি বলেন, ঢাকার পুরানা পল্টন এলাকার ‘৪ সাইট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড’র মাধ্যমে সৌদি আরব গিয়েছে শিল্পী।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক খালেদ হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা মেয়েটিকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে এক মাস আগে অভিযোগ দিয়েছি। আশা করি দ্রুতই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব।
এ ব্যাপারে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। তবে এখনো পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাইনি। তারা আমাকে লিখিত অভিযোগ দিলে দূতাবাসের মাধ্যমে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব।