‘আনভীর তাকে বিয়ে করবেন না, শুধু ভোগ করেছেন। সে তাকে ধোঁকা দিয়েছে। যেকোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।’ দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর সম্পর্কে মোসারাত জাহান (মুনিয়া) মৃত্যুর আগে নিজের বড় বোন নুসরাত জাহানকে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন। গতকাল সোমবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গুলশান ২ নম্বরের ১২০ নম্বর সড়কের ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় সোমবার রাতেই রাজধানীর গুলশান থানায় ৩০৬ ধারায় ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়া’র অভিযোগে বসুন্ধরার এমডি সায়েমের বিরুদ্ধে মামলা করেন মোসারাতের বড় বোন নুসরাত। মামলা নম্বর২৭। গুলশান থানার ওসি আবুল হাসান মামলাটি তদন্ত করছেন। এরইমধ্যে আদালত সায়েমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
মামলার বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, মুনিয়ার সঙ্গে বসুন্ধরার এমডি সায়েমের সম্পর্ক দুই বছরের। সায়েম এক বছর মুনিয়াকে বনানীর একটি ফ্ল্যাটে রাখেন। পরে মনোমালিন্য হলে মেয়েটি কুমিল্লায় চলে যায়। গেল ১ মার্চ মুনিয়াকে ঢাকায় এনে গুলশানের ওই ফ্ল্যাটে রাখেন সায়েম। সেখানে মাঝেমধ্যেই যাতায়াত ছিল সায়েমের।
পুলিশ আরও জানায়, গুলশানের ওই বাসায় গত ২৩ এপ্রিল একটি ইফতার পার্টি হয়। ওই পার্টির ছবি ফেসবুকে আপলোড করা নিয়ে মেয়েটির সঙ্গে ওই এমডির মনোমালিন্য হয়। পরে মেয়েটি তার বোনকে ফোন করে জানান, যেকোনও মুহূর্তে তারা যেকোনও ঘটনা ঘটতে পারে।
মৃত মুনিয়া রাজধানীর একটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান। মেয়েটির পরিবার কুমিল্লায় থাকে। এখানে গুলশানের ওই ফ্ল্যাটে তিনি একাই থাকতেন।
বাদী নুসরাত জাহান মামলার এজাহারে ঘটনার বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন- মোসারাত জাহান (২১) মিরপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। দুই বছর আগে মামলার আসামি সায়েম সোবহান আনভীরের (৪২) সঙ্গে মোসারাতের পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর থেকে তারা বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় দেখা করতেন এবং সব সময় মোবাইলে কথা বলতেন। এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।
সেখানে বলা হয়, ২০১৯ সালে মোসারাতকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে আসামি রাজধানীর বনানীতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। সেখানে তারা বসবাস করতে শুরু করেন। ২০২০ সালে আসামির পরিবার এক নারীর মাধ্যমে এই প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারে। এরপর আসামির মা মোসারাতকে ডেকে ভয়ভীতি দেখান এবং মোসারাতকে ঢাকা থেকে চলে যেতে বলেন। আসামি কৌশলে (বাদী নুসরাতের) বোনকে কুমিল্লায় পাঠিয়ে দেন এবং পরে বিয়ে করবেন বলে আশ্বাস দেন।
এজাহারে বলা হয়, সবশেষ গত ১ মার্চ আসামি মোসারাতকে প্ররোচিত করেন। তিনি বাসা ভাড়া নিতে বাদী নুসরাত ও তার স্বামীর পরিচয়পত্র নেন। ফুসলিয়ে তিনি মোসারাতকে ঢাকায় আনেন। তিনি গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কে বাসা (ফ্ল্যাট-বি-৩) ভাড়া নেন। ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে আসামি ও তার (বাদীর) বোনের স্বামী-স্ত্রীর মতো ছবি তুলে তা বাঁধিয়ে রাখে। আসামি বাসায় আসলে কক্ষটি পরিপাটি করে রাখা হতো।
এজাহারে আরও বলা হয়, গত ২৩ এপ্রিল মোসারাত তাকে (বাদীকে) ফোন করেন। ফোন করে বলেন, আনভীর তাকে বকা দিয়ে বলেছেন, কেন তিনি (মোসারাত) ফ্ল্যাট মালিকের বাসায় গিয়ে ইফতার করেছেন, ছবি তুলেছেন। ফ্ল্যাট মালিকের স্ত্রী ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেছেন। এ ছবি পিয়াসা দেখেছেন। পিয়াসা ফ্ল্যাট মালিকের স্ত্রীর ফেসবুক বন্ধু। এখন পিয়াসা তার মাকে সবকিছু জানিয়ে দেবেন। তিনি (আসামি) দুবাই যাচ্ছেন, মোসারাত যেন কুমিল্লায় চলে যান। আসামির মা জানতে পারলে তাকে (মোসারাতকে) মেরে ফেলবেন।