আতঙ্কের নাম ওসি দীপক, পুরুষশূন্য গ্রাম

সিরাজগঞ্জে উল্লাপাড়া থানার ওসি দীপক কুমার দাসের ডাকে সাড়া না দেয়ায় পুলিশি হয়রানিতে বেতবাড়ী গ্রাম এখন পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ সাতমাস যাবত ওসির অত্যাচারে অতিষ্ঠ দলীয় নেতা কর্মীসহ সাধারণ মানুষ।

এ যেন কক্সবাজারের আলোচিত ওসি প্রদীপকে হার মানিয়ে নিজের অবস্থান তৈরি করতে মরিয়া ওসি দীপক। পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ সুপার।

সরেজমিন জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার পঞ্চক্রোশী ইউনিয়নের পূর্ব বেতবাড়িয়া গ্রামে ৭ মাস পূর্বে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার পর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক বেতবাড়ী গ্রামের হবিবর রহমান হবিকে দুই পক্ষের লোকজনকে নিয়ে থানায় আসতে বলে ওসি। রাত হওয়ায় থানায় যায়নি হবি। এরপর থেকেই হবিকে ধরতে মরিয়া ওসি দীপক।

সেই ঘটনার জের ধরে প্রতি রাতে পুলিশি অভিযানের নামে পুরো গ্রামটাই তসনস করতে থাকে ওসি। পুলিশি হয়রানি থেকে বাঁচতে শুরু হয় টাকার বাণিজ্য। অথচ গ্রামটির কারো বিরুদ্ধে থানায় নেই কোনো মামলা।

রাত হলেই পুলিশি অভিযানের নামে হানা দিয়ে ভাঙচুর করে বসতিদের ঘরের আসবাবপত্র নগদ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও উঠেছে। তাই রাত হলেই পুলিশি আতঙ্কে পুরুষশূন্য হয় গ্রামটি। ওসিসহ থানা পুলিশের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ পুরো বেতবাড়ী গ্রামের সাধারণ মানুষের। শুধু বেতবাড়ী গ্রাম নয় পুরো উপজেলা জুড়েই চলছে ওসির গ্রেফতার বাণিজ্য।

একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগ, আমাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই, তারপরও আমাদের থানায় আটকে রেখে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছে। টাকা না দিলে যাকে পাবে তাকেই আটক করেন ওসি।

বেতবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা মৃত মোতালেব আলী সরকারের ছেলে সাইফুদ্দিন (৭০) জানান, ওসি নিজে তার পুলিশ বাহিনী নিয়ে প্রতিদিন রাতে হানা দেয়। এসময় গ্রামের মানুষ দিকবিদিক পালাতে থাকে।

রাতের অন্ধকারে পালানোর সময় অনেকে আহতও হয়েছে। আমি বৃদ্ধ হয়েও আমাকে দৌড়ে পালাতে হয়েছে কয়েকবার। আমরা এ থেকে মুক্তি চাই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই গ্রামের বাসিন্দা ও ছুটিতে আসা র‌্যাব সদস্য ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ থেকে একটি সমাধান হওয়া দরকার।

উল্লাপাড়া সরকারি আকবর আলী কলেজের অনার্স পড়ুয়া ছাত্র আলমগীর হোসেন বলেন, প্রতিদিন রাতে পুলিশের অভিযানে আমরা বাড়িতে থাকতে পারি না। এতে একদিকে লেখাপড়া অন্যদিকে পরিবার থাকছে দুশ্চিন্তায়। আর যাকে ধরতে পারছে তাকে টাকার বিনিময়ে ছাড়াতে হবে। কিন্তু আমরা টাকা পাবো কোথায়।