শি’শুদের ক্যা’ন্সার সনাক্তে যেসব লক্ষণ এড়িয়ে যাবেন না

বিশ্ব স্বা’স্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বে অ’ন্তত তিন লাখ শি’শু ক্যা’ন্সারে আক্রা’ন্ত হয়। এদের মধ্যে ৮০% শি’শুকেই চিকিৎ’সার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব। তবে স্বা’স্থ্য সেবার সুযোগের অভাবে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে ৯০ ভাগ ক্যা’ন্সার আক্রা’ন্ত শি’শুই মা’রা যায়।

বিশ্ব স্বা’স্থ্য সংস্থা বলছে, শি’শুদের ক্যা’ন্সার বা চাইল্ডহুড ক্যা’ন্সার বলতে ১৮ বছরের কম বয়সীদের ক্যা’ন্সারে আক্রা’ন্ত হওয়াকে বোঝায়। শি’শুদের ক্যা’ন্সারে আক্রা’ন্ত হওয়ার হারও কম। বিশ্বে ক্যা’ন্সার আক্রা’ন্তদের মধ্যে ০.৫% থেকে ৪.৬% আক্রা’ন্তরা শি’শু।

শি’শু বয়সে কোন ক্যা’ন্সার গুলো বেশি হয়?

প্রাপ্ত বয়স্কদের তুলনায় শি’শুদের ক্যা’ন্সার কিছুটা ভিন্ন। বিশ্ব স্বা’স্থ্য সংস্থা বলছে, শি’শুদের মধ্যে সাধারণত লিউকেমিয়া বা র’ক্তের ক্যা’ন্সার বেশি হয়। ক্যা’ন্সার আক্রা’ন্ত শি’শুদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই লিউকেমিয়ায় আক্রা’ন্ত। এছাড়া আরো

যে ধ’রণের ক্যা’ন্সার হয় সেগুলো হচ্ছে, লিম্ফোমাস এবং কে’ন্দ্রীয় স্নায়ু ব্যব’স্থায় বিভিন্ন ধ’রণের টিউমা’র। কিছু ক্যা’ন্সার রয়েছে যা শুধু শি’শুদেরই হয়। যেমন নিউরোব্লাস্টোমা, নেফ্রোব্লাস্টোমা, মেডুলোব্লাস্টোমা, এবং রেটিনোব্লাস্টোমা।

স্ত’ন ক্যা’ন্সার, ফু’সফুস, কোলন বা মলদ্বারের ক্যা’ন্সার সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদেরই হয়ে থাকে। শি’শুদের এ ধ’রণের ক্যা’ন্সার হবার ঘ’টনা খুবই বিরল।

বঙ্গব’ন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারজা’না রহমান বলেন, শি’শুদের কিডনি ক্যা’ন্সার, মস্তিষ্কের কিছু ক্যা’ন্সার এবং র’ক্তের কিছু ক্যা’ন্সার হতে পারে।

শি’শুদের ক্যা’ন্সার কেন হয়?

শি’শুদের ক্যা’ন্সার আক্রা’ন্তের ঝুঁ’কি এমনিতেই কম থাকে। তবে কিছু কারণ রয়েছে যার জন্য শি’শুরা ক্যা’ন্সারে আক্রা’ন্ত হয়। এরমধ্যে ক্ষ’তিকর রশ্মি বা বিকিরণের সংস্প’র্শে আসাটা অন্যতম।

বিশ্ব স্বা’স্থ্য সংস্থা বলছে, অনেক সময় জীনগত কারণে অনেক শি’শু ক্যা’ন্সারে আক্রা’ন্ত হতে পারে। এ ধ’রণের উদাহরণ সাধারণত জাতিগতভাবে বি’চ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে দেখা যায়। জে’নেটিক্সের উপর ভিত্তি করে ব্য’ক্তিভেদে সংবেদনশীলতা ভিন্ন হওয়ার কারণেও এটি হতে পারে।

কিছু গবেষণায় জা’না যায় যে, এপস্টেইন-বার নামে ভা’ইরাস ছাড়াও, হেপাটাইটিস বি, হিউম্যান হার্পিস এবং এইচআইভি ভা’ইরাসও শি’শুদের মধ্যে ক্যা’ন্সারের ঝুঁ’কি বাড়াতে পারে।

শি’শুদের ক্যা’ন্সার কি প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্ত করা যায়?

ডব্লিউএইচও এর তথ্য মতে, শি’শুদের বেশিরভাগ ক্যা’ন্সারেই তেমন কোন লক্ষণ বা উ’পসর্গ থাকে না। যার কারণে দেরিতে সনাক্ত হয়। উন্নত বিশ্বে যেহেতু শি’শুদের বাবা-মায়ের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকে এবং চিকিৎ’সার সুযোগও বেশি – তাই তাদের মধ্যে প্রাথমিক অবস্থায় ক্যা’ন্সার সনাক্ত করাটা সম্ভব হয়। নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে স্বা’স্থ্য সেবা এবং পরীক্ষার সুযোগ কম থাকায় প্রাথমিক অবস্থাতে ধ’রা পড়ে না।

কী কী লক্ষণ এড়িয়ে যাবেন না?

ডা. ফারজা’না রহমান বলেন, যেকোন বয়সের শি’শুর মধ্যেই ক্যা’ন্সার দেখা দিতে পারে। তবে র’ক্তের ক্যা’ন্সারটি সাধারণত এক বছরে বয়সের পর থেকে হয়। এক থেকে পাঁচ বছর বয়সী শি’শুদের এটি বেশি হয়। লিউকোমা নামেও একটা ক্যা’ন্সার হয়, সেটা যেকোন বয়সের শি’শুদেরই হতে পারে।

তিনি বলেন, শি’শুরা সাধারণত নিজে’র রো’গ স’স্পর্কে সচে’তন থাকে না এবং বেশিরভাগ সময় তারা বুঝতেও পারে না যে, তার আ’সলে কেমন লাগছে।

এ বিষয়ে বাবা-মা কেই উদ্যো’গী হতে হবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

শি’শুদের মধ্যে নিম্নলিখিত উ’পসর্গগুলো থাকলে দেরী না করে চিকি’ৎসকের প’রামর্শ নেয়া উচিত। তবে এসব লক্ষণ থাকার মানে এই নয় যে তারা ক্যা’ন্সারে আক্রা’ন্ত। তবে লক্ষণগুলো থাকলে চিকি’ৎসকের প’রামর্শ নিয়ে স্বা’স্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত।

যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বা’স্থ্য সেবা বিভাগ ক্যা’ন্সারের কিছু লক্ষণের তথ্য দিয়েছে যেগুলো বেশিদিন ধ’রে স্থায়ী হলে চিকি’ৎসকের প’রামর্শ নেয়ার কথা বলা হয়েছে।

ডা. ফারজা’না রহমান বলেন, ক্যা’ন্সারের আ’সলে আ’লাদা করে কোন লক্ষণ বা উ’পসর্গ নেই। অন্যান্য রো’গের মতোই সাধারণ উ’পসর্গ থাকে। তবে অন্যান্য রো’গে যেমন চিকিৎ’সা করানো হলে উ’পসর্গগুলো ভাল হয়ে যায়, ক্যা’ন্সারের ক্ষেত্রে সেটা হয় না। বরং উ’পসর্গগুলো থেকে যায় এবং ধীরে ধীরে আরো বাড়তে থাকে।

তিনি যে উ’পসর্গগুলোর কথা বলেছেন সেগুলো হচ্ছে-

শ’রীরে ব্য’থা

শ’রীরের কোথাও যদি অনেক দিন ধ’রে ব্য’থা থাকে এবং সেটি না সেরে যায় তাহলে অবশ্যই চিকি’ৎসকের প’রামর্শ নিতে হবে। এ বিষয়ে বঙ্গব’ন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারজা’না

রহমান বলেন, যদি কোন শি’শু অনেক দিন ধ’রেই তার শ’রীরে ব্য’থা করছে বলে জা’নায় তাহলে সেটি গু’রুত্ব সহকারে নিতে হবে। হয়তো সে বলতে পারবে না কিন্তু বোঝাবে যে তার শ’রীরটা ভাল নেই, গায়ে ধ’রতে দিচ্ছে না, শ’রীরে খুব বেশি ব্য’থা

ফোলা বা ফোলা ভাব

শ’রীরের কোন অংশ যদি হ’ঠাৎ ফুলে ওঠে এবং দীর্ঘদিনেও ভাল না হয় – তাহলে অবশ্যই চিকি’ৎসকের প’রামর্শ নিতে হবে। এ বিষয়ে ডা. ফারজা’না রহমান বলেন, গলার ভেতরে কোন গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া বা শ’রীরের কোথায় কোন অংশ ফুলে যাওয়া,

পে’টের ভেতরে চাকার মতো অনুভূত হওয়া, শ’রীরের জয়েন্ট বা কোন সংযোগস্থলে ফুলে যাওয়া ভাল লক্ষণ নয়। এ ধ’রণের উ’পসর্গ দীর্ঘদিন থাকলে চিকি’ৎসকের প’রামর্শ নেয়ার কথা বলেছেন তিনি।

অনেক দিন ধ’রে জ্বর

শ’রীরের রো’গ প্র’তিরো’ধ ব্যব’স্থা তেমন ভালভাবে কাজ ক’রতে পারে না বলে অনেক সময় জ্বর আ’সলেও সেটি আর ভাল হয় না। ফলে অনেক দিন ধ’রে জ্বরে ভুগতে থাকে রো’গী। এটি র’ক্তের ক্যা’ন্সারের একটি লক্ষণ বলে জা’নান ডা. ফারজা’না রহমান।

সেক্ষেত্রে পরীক্ষা করে দে’খতে হবে যে সে আ’সলেই ক্যা’ন্সারে আক্রা’ন্ত, নাকি অন্য কোন স’মস্যা রয়েছে। এছাড়া শ’রীর হ’ঠাৎ করে ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া বা জন্ডিস হওয়ার পর অনেক দিন ধ’রে চলতে থাকে,

ওষুধ খাওয়ার পরও জন্ডিস ভাল না হওয়া, শ’রীর হলুদ হয়ে যাওয়া- এসব লক্ষণ থাকলেও শি’শুকে চিকি’ৎসকের প’রামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষার করার প’রামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

হ’ঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া

শি’শু যদি খাবারের প্রতি অরুচি দেখায়, কোন কিছুই খেতে চায় না এবং এই স’মস্যা যদি দীর্ঘদিন ধ’রে চলে, তার পর এক পর্যায়ে হ’ঠাৎ করে দে’হের ওজন কমে যায় – তাহলে অবশ্যই চিকি’ৎসকের সাথে প’রামর্শ করে পরীক্ষা করাতে হবে।

তিনি বলেন, অনেক সময় লক্ষণ ছাড়াও কিছু লুক্কায়িত ক্যা’ন্সার থাকে। সেক্ষেত্রে আ’লাদা কোন লক্ষণ থাকে না, শুধু শি’শু খাওয়া দাওয়া করে না, ওজন কমে যাচ্ছে, কান্নাকাটি করছে, খেলাধুলা বা অন্য কোন কাজ করছে না – এরকম হলে চিকি’ৎসকের কাছে গিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাতে হবে।

ক্লান্তি ও স্বা’ভাবিকের তুলনায় অতিরি’ক্ত ঘাম

কোন কাজ না করেও যদি শি’শু সারাক্ষণই ক্লান্তি বোধ করে, বিশ্রাম নেয়ার পরও ক্লান্তিভাব না যায় এবং স্বা’ভাবিকের তুলনায় অতিরি’ক্ত ঘাম হতে থাকে – তাহলে সেটি অবশ্যই চিকি’ৎসকের প’রামর্শ অনুযায়ী ব্যব’স্থা নিতে হবে।

হ’ঠাৎ র’ক্তপাত

শ’রীরের কোন অংশ থেকে যদি হ’ঠাৎ করে অস্বা’ভাবিকভাবে র’ক্তক্ষরণ শুর হয় তাহলে অবশ্যই দেরী না করে চিকি’ৎসকের প’রামর্শ নিতে হবে। ডা. ফারজা’না রহমান বলেন, কোন কারণ ছাড়াই বা কোন আঘা’ত ও ব্য’থা পাওয়া ছাড়াই র’ক্তক্ষরণ হচ্ছে তাহলে ভয় না পেয়ে চিকি’ৎসকের প’রামর্শ নিতে হবে।

র’ক্তরো’গ এই বিশেষজ্ঞ বলেন, বোন ম্যারো বা হাড়ের মজ্জা থেকে যে র’ক্ত তৈরি হয় সেটি যদি কোনভাবে বা’ধাগ্রস্ত হয়, বা র’ক্ত জমাট বাঁ’ধার উপাদান তৈরি না হয় তাহলে শ’রীরের কোন একটি অংশ থেকে যেমন নাক, পায়খানার রাস্তা কিংবা প্রস্রাবের সাথে হ’ঠাৎ করেই র’ক্তক্ষরণ হতে থাকে। র’ক্ত জমাট বাঁধতে পারে না বলে এই উ’পসর্গ দেখা দেয় বলে জা’নান তিনি।

এছাড়া শ’রীরের চামড়ার ভেতরেও র’ক্তক্ষরণ হতে পারে। তখন চামড়ায় কালো বা লাল লাল ছোপ দেখা যায় তখন শি’শুরা অনেক অসু’স্থ হয়ে পড়ে। তখন অবশ্যই চিকি’ৎসকের প’রামর্শ নিতে হবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।