টানা ২৩ দিন ধরে করোনা আইসোলেশনে থাকার পর একই দিনে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন আলম হোসেন (৪০) ও তার ছেলে আল-আমিন (১০)। দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার সীমান্তঘেঁষা আয়ড়া গ্রামের এই দুই করোনাজয়ী জানালেন, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার গল্প।
জীবিকার তাগিদে মেয়ে আয়েশাকে বাড়িতে দাদির কাছে রেখে স্ত্রী লেবু আরা ও ছেলেকে আল-আমিনকে নিয়ে চার বছর পূর্বে গ্রাম থেকে গাজীপুর জেলার সখিপুরে চলে যান দরিদ্র আলম হোসেন। সেখানে পূর্বপরিচিত এক ব্যক্তির সহযোগিতায় পোশাক শ্রমিক হিসেবে কাজ পান তার স্ত্রী। তিনিও পোশাকশিল্পের একটি কারখানায় খণ্ডকালীন শ্রমিক হিসেবে কাজ পেয়ে যান। কখনও কারো বাড়িতে দিনমজুর আবার কখনো শহরের অদূরে কৃষি জমিতে শ্রমিকের কাজ থাকেন তিনি। একমাত্র ছেলেকে ভর্তি করে দেন একটি কওমি মাদ্রাসায়। তবে দেশে করোনা মহামারী শুরু হলে পোশাক কারখানা বন্ধ হওয়ায় এপ্রিলের মাঝামাঝিতে কর্মহীন হয়ে পড়েন তারা। উপায়ন্তর না পেয়ে গ্রামে বোরোধানের মাঠে শ্রমিকের কাজ করবেন ভেবে ১৭ মে নিজ গ্রামে সপরিবারে ফেরেন আলম হোসেন।
এরপর গ্রামের করোনা প্রতিরোধ কমিটির সিদ্ধান্তে পরিবারের চারজনকে গ্রামের আয়ড়া দাখিল মাদ্রাসায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। পরদিন আলম হোসেনের নমুনা নেওয়া হয়। ২২ মে আসা প্রতিবেদনে তার করোনা শনাক্ত হয়। ওইদিনই তাকে উপজেলার আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। এপর তার পরিবারের বাকিদের নমুনা নেওয়া হয়। পরে ২৮ মে আসা প্রতিবেদনে ছেলে আল-আমিনের করোনা শনাক্ত হলে তাকেও উপজেলার আইসোলেশনে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে গত ১৪ জুন সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে করোনামুক্ত ঘোষিত হয়ে সেখান থেকে উপহার সামগ্রী নিয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফেরেন তারা।
আলম হোসেন বলেন, ‘আমার করোনা শনাক্তের পর ম খুব আতঙ্কে ছিলাম। কিন্তু চিকিৎসকরা নিয়মিত খোঁজখবর নেন এবং সাহস দেন। তার আমাকে সবসময় হাসিখুশি থাকতে ও সবার সঙ্গে খোশগল্প করার পরামর্শ দেন। পরের সপ্তাহে আমার দশ বছরের ছেলে করোনায় আক্রান্ত হয়। ওকে আমার পাশের বেডে রাখা হয়। আমি অনেকটাই ভেঙে পড়েছিলাম। কিন্তু এসময় আমাকে অবাক করে ছেলের দেওয়া সাহস। আল-আমিন বলত, আব্বু, তুমি আমাদের পরিবারের সব, তুমি ভয় পাবে না, তুমি ভয় পেলে আমাদের পরিবারের ক্ষতি হবে। এরপর ছেলের কথা চিন্তা করে নিজের মনকে শক্ত করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হবার পরে গ্রামের করোনা প্রতিরোধ কমিটি ও গ্রামের অনেক মানুষ আমার পরিবারকে সহযোগিতাও করেছেন।’
শিশু আল-আমিন জানায়, ‘আমার করোনা হয়েছে জানার পর প্রথমে একটু মন খারাপ হয়েছিল। তবে যখন হাসপাতালে আব্বুর কাছে আমাকে রাখা হয় এবং ডাক্তার আংকেলরা ও আব্বু আমাকে সাহস দেন, তখন আর ভয় পাই নাই। হাসপাতালে ডাক্তার আংকেলরা সবসময় বলতেন, তুমি একটুও চিন্তা করবে না, তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে।’
এ বিষয়ে কথা হলে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশন ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহরিয়ার ফেরদৌস হিমেল বলেন, ‘করোনা আক্রান্তদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে আমাদের চিকিৎসক ও নার্সরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। রোগীরা এখান থেকে সুস্থ হয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরছেন এটি আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় গর্ব।’
তিনি আরও জানান, এ পর্যন্ত বিরামপুর উপজেলায় ৪১ জন ব্যক্তি করোনায় শনাক্ত হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্টাফদের আন্তরিক সেবায় ১৯ জন সুস্থ হয়েছেন।