খুবই প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার বা সংগ্রহের জন্য কেউ কেউ বাইরে বের হচ্ছেন, যাচ্ছেন বাজারেও। এমন পরিস্থিতিতে বাজারে যাওয়া কতটা ঝুঁকিপূর্ণ- এ বিষয়ে তথ্য তুলে ধরেছে বিবিসি বাংলা।
বাজারে কী ধরনের ঝুঁকি আছে?
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে বারবার বলা হচ্ছে, জনসমাবেশ এড়িয়ে চলতে। তাই বাজারে গিয়ে অন্য লোকের কাছাকাছি আসলে করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়বে। এ কারণেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাটা খুবই জরুরি। অন্য মানুষের থেকে অন্তত দুই মিটার (প্রায় ছয় ফুট) দূরত্বে থাকা উচিৎ। বাজারে আসা মানুষজনের মধ্যে কে করোনায় আক্রান্ত তা কি আপনি জানেন?
এছাড়াও আমরা জানি, করোনা আক্রান্ত মানুষের হাঁচি কাশির সঙ্গে বের হওয়া সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম থুতুকণার মধ্যে ভাইরাসের জীবণু থাকে। হাঁচি কাশির মাধ্যমে সেগুলো শরীর থেকে বেরিয়ে বাতাসে মেশে। আর সেই বাতাস যদি কেউ নিশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করে কিংবা সেই ভাইরাস ভরা কণাগুলো যেসব জায়গায় পড়ছে, সেগুলো হাত দিয়ে স্পর্শ করেন এবং সেই হাত আবার মুখে দেন তাহলে সংক্রমিত হবেন।
বাজারে বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী খালি হাতে অনেকেই নাড়াচাড়া করেন। এগুলোর মাধ্যমেও ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। বিবিসি বাংলার বরাত দিয়ে লন্ডনের স্কুল ফর হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক স্যালি ব্লুমফিল্ড বলছেন, ভাইরাস ছড়ানোর একটা উর্বর ক্ষেত্র হলো বাজার। বাজারে আপনি যেসব জিনিস কিনছেন সেগুলো আপনার আগে আরও অনেক মানুষ হয়তো হাত দিয়ে ধরেছে, নাড়াচাড়াও করেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘যেখানে পয়সা দিচ্ছেন, সেখানে আরও লোকের হাত পড়েছে। আপনি নগদ অর্থে দাম দেওয়ার পর যে খুচরা আপনাকে ফেরত দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোও কিছুক্ষণ আগে হয়তো অনেক হাত ঘুরেছে। এমন কি আপনি যদি এটিএম মেশিন থেকে পয়সা তোলেন, সেখানেও মেশিনের বোতামে আপনার আগে হয়তো আরও কারও হাত পড়েছে।
ঝুঁকিগুলো এড়াবেন কীভাবে?
বাজারে যাওয়ার আগে এবং বাজার থেকে ফিরে সাবান-পানি দিয়ে ভালো করে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোবেন অথবা অ্যালকোহল ভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নেবেন। ধরে নেবেন আপনি যেসব জায়গা হাত দিয়েছেন বা কিনেছেন সেগুলো খুব সম্ভবত সংক্রমিত। কাজেই বাজার থেকে আসার পর হাত না ধোয়া পর্যন্ত ভুলেও মুখে হাত দেবেন না।
সুযোগ থাকলে নগদ অর্থ ব্যবহার না করে কার্ড ব্যবহার করে বাজার করুন। তবে কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কিছুটা ঝুঁকি আছে। পশ্চিমের দেশগুলোতে কন্টাক্টলেস কার্ড ব্যবহারের সময় কিছু সই করতে বা পিন নম্বর পাঞ্চ করতে হয় না। তাই কার্ড ব্যবহারের সময় দোকানের কলম ব্যবহার বা পিন নম্বর দেবার জন্য বোতাম চাপতে হলে পাওনা চুকিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
কেনা পণ্যগুলো নিয়ে কতটা দুশ্চিন্তা করার আছে?
রান্না খাবারের মাধ্যমে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হবার কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, খাবার রান্না করা হলে এই ভাইরাস মরে যায়। তবে কাঁচা শাকসবজি, ফলমূলে ঝুঁকি আছে। কারণ অন্য ক্রেতারা বা বিক্রেতারাও সেগুলো ধরছে। তাই এটি জীবাণুমুক্ত এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।
অধ্যাপক ব্লুমফিল্ডের পরামর্শ হলো, শাকসবজি বা ফলমূল সবকিছুই ভালো করে ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে এরপর শুকিয়ে সেগুলো তুলে রাখবেন বা ব্যবহার করবেন।
আর প্লাস্টিকের প্যাক, টিনের বা কাঁচের পাত্রে বিক্রি হওয়ার পণ্যগুলো ৭২ ঘণ্টা সরিয়ে রাখবেন। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহার করতে চাইলে অবশ্যই সেগুলো জীবাণুমুক্ত করার তরল পদার্থ (ব্লিচ জাতীয় ডিসইনফেকটেন্ট) দিয়ে মুছে নিন। তবে কড়া ব্লিচ ব্যবহার করবেন না। বোতলের গায়ে পানি মেশানোর পরিমাণটা দেখে নিতে হবে।