নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়া সেই লোকের নাম জানা গেল

বোরকা পরে ফেনীর আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির গায়ে আ*গুন ধরিয়ে দেয় সাইফুল ইসলাম মো. জোবায়ের। এমনটিই জানিয়েছেন সোনাগাজী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুহম্মদ মহিউদ্দিন চৌধুরী। আজ বুধবার জবানবন্দিতে এসব তথ্য জানান নুসরাত হ*ত্যা মামলার এই সাক্ষী।

নারী ও শিশু নি*র্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে আজ বুধবার এ জবানবন্দি দেন প্রফেসর মুহম্মদ মহিউদ্দিন চৌধুরী। এ ছাড়া আজ আরও পাঁচজনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে।

জবাবন্দিতে মহিউদ্দিন চৌধুরী জানান, ‘নুসরাত হ*ত্যা মামলার আসামি সাইফুল ইসলাম মো. জোবায়েরকে নিয়ে সোনাগাজী সরকারি কলেজের পাশে ডাঙ্গি খালের কাছে যায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

আমি খবর পেয়ে আমার কলেজের উপাধ্যক্ষকে নিয়ে সেখানে যাই। তখন নুসরাতের গায়ে আগুন লাগানোর সময় জোবায়েরের ব্যবহৃত বোরকা উদ্ধারের জন্য তল্লাশি চলছিল। এ সময় আমিসহ সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলাম। তল্লাশির একপর্যায়ে সোনাগাজী টু দাশের হাট সড়কের একটি বাড়ির দক্ষিণ পাশে খালের ভেতর থেকে একটি কালো বোরকা উদ্ধার করা হয়।’

উক্ত বোরকাটি গত ২০ এপ্রিল জব্দ করা হয়। এ সময় আমিসহ উপস্থিতিরা জব্দ তালিকায় স্বাক্ষর করি। আসামি জোবায়ের আমার সম্মুখে জানায়, নুসরাত জাহান রাফির গায়ে আগুন দেওয়ার সময় পরিচয় গোপন করার জন্য উক্ত বোরকাটি পরিধান করেছিল এবং আগুন দিয়ে পালানোর সময় বোরকাটি খালে ফেলে যায় বলেও জবানবন্দিতে জানান তিনি।

জবানবন্দি দেওয়া অন্য পাঁচজন ব্যক্তি হলেন- মোবারক হোসেন, মো. ইব্রাহীম, রেজা মো. এনামুল হক,মো. নুর উদ্দিন ও আকরাম হোসেন। সাক্ষীরা শুরুতে আদালতে তাদের সাক্ষ্য উপস্থাপন করেন। এরপর আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তাদের জেরা করেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার আরও চারজনের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

এ মামলার ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। গত ২৭ জুন থেকে এ মামলার সাক্ষী কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে প্রতি কর্মদিবসে আদালত সাক্ষ্যগ্রহণ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এর আগে গত ২৭ জুন মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। পরে রাফির বান্ধবী নিশাত সুলতানা ও সহপাঠী নাসরিন সুলতানা, মাদ্রাসার পিয়ন নুরুল আমিন, নৈশ প্রহরী মো. মোস্তফা, কেরোসিন বিক্রেতা লোকমান হোসেন লিটন,

বোরকা দোকানদার জসিম উদ্দিন, দোকানের কর্মচারী হেলাল উদ্দিন ফরহাদ, নুসরাতের ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান, জহিরুল ইসলাম, হল পরিদর্শক বেলায়েত হোসেন, নুসরাতের মা শিরিন আখতার, শিক্ষক আবুল খায়ের, মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটি সাবেক সদস্য শেখ আবদুল হালিম মামুন, সোনাগাজী মাদ্রাসার দপ্তরী মো. ইউসুফ ও সোনাগাজী মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. হোসাইনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।

এ ছাড়া সোনাগাজী পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইয়াছিন, অ্যাম্বুলেন্স চালক নুরুল করিম, সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসার পরীক্ষার কেন্দ্র সচিব মাওলানা নুরুল আফসার ফারুকী, সোনাগাজী মাদ্রাসার ছাত্রী তানজিনা বেগম সাথী, মাদ্রাসা ছাত্রী বিবি জাহেদা বেগম তামান্না,

মাদ্রাসার বাংলা বিভাগের প্রভাষক খুজিস্তা খানম, আয়া বেবী রাণী দাস, সহপাঠী আকলিমা আক্তার, কায়সার মাহমুদ, মাদ্রাসার ছাত্রী ফাহমিদা আক্তার হামদুনা, নাসরিন সুলতানা, হল পরিদর্শক কবির আহম্মদ,

তাহমিনা আক্তার, বিবি হাজেরা, আবু বকর সিদ্দিক ও স্থানীয় বাসিন্দা মো. আকবর হোসেন, ফজলুল করিম, রাবেয়া আক্তার, মোয়াজ্জেম হোসেন, জাফর ইকবাল, প্রফেসর মুহাম্মদ মহিউদ্দিন চৌধুরী, হাফেজ মোবারক হোসেন, মো. ইব্রাহীম, রেজা মো.এনামুল হক, মো. নুর উদ্দিন ও আকরাম হোসেরে সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে।

চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌ*ন নিপীড়নের দায়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে টানা পাঁচদিন মৃ*ত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ১০ এপ্রিল মা*রা যান নুসরাত।