দোজখে পোড়ার ভয় দেখিয়ে ধ’র্ষণ করতেন মাওলানা

নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় গ্রেপ্তার মাদ্রাসা শিক্ষক তার ছাত্রীদের ধর্ষণ করেছেন দোজখের আগুনে পোড়ানোর ভয় দেখিয়ে। পুলিশের কাছে তিনি এই কথা স্বীকারও করেছেন। সন্দেহভাজন মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা আবুল খায়ের বেলালী। একটি মহিলা মাদ্রাসার মোহতামিম। এক বছর ধরে উপজেলার বাদে আঠারবাড়ি এলাকার মা হাওয়া (আ.) কওমি মহিলা মাদ্রাসার দায়িত্বে আছেন। এ এক বছরে নিজ মাদ্রাসার আট ছাত্রীকে দোজখের আগুনে পোড়ার ভয় দেখিয়ে ‘দুনিয়ার আগুনে’ পুড়িয়েছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহজাহান মিয়া এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এই মাওলানা শুক্রবার রাতে পুলিশের কাছে এসব কথা স্বীকার করেছেন। শনিবার তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মাওলানা বেলালী সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের সোণাকানী গ্রামের বাসিন্দা। শুক্রবার ওই মাদ্রাসার দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে থানায় এক ছাত্রীর বাবা ও এক ছাত্রীর চাচা ধর্ষণের দুইটি আলাদা মামলা করেন বলে জানান ওসি রাশেদুজ্জামান।

ওসি জানান, মেডিকেল পরীক্ষার জন্যে দুই ছাত্রীকে নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও ২২ ধারায় জবানবন্দির জন্যে দুইজন ছাত্রীকে হাকিমের কাছে নেয়া হবে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহজাহান মিয়া জানান, প্রথমে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে উঠে। পরে আমরা ওই ছাত্রীটির সাথে নিবিড়ভাবে কথা বলে জানতে পারি ধর্ষণের কথা। থানায় জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য দিয়েছেন আবুল খায়ের।

তিনি জানান, গত এক বছর ধরে এই মাদ্রাসায় আছেন আবুল খায়ের। মাদ্রাসাটিতে প্রায় অপ্রাপ্ত বয়স্ক ৩৫ জন ছাত্রী রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ জন ছাত্রী মাদ্রাসার আবাসিকে থেকে লেখাপড়া করে। শিক্ষক বেলালীও থাকেন মাদ্রাসার আবাসিকে। এই এক বছরে তিনি মাদ্রাসার আট ছাত্রীকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন।

মাওলানা বেলালীর যৌন নির্যাতনের বিবরণ দিতে গিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, সময় সুযোগ বুঝে নিজের কক্ষে কলিংবেল চেপে পছন্দ মতো একেকজন কোমলমতি ছাত্রীকে ডেকে নেন। পরে তার হাত-পা টিপে দিতে বলেন। এরই এক পর্যায়ে শিশুদের উপর ঝাপিয়ে পড়েন। শেষে তিনি কোরআন শরিফে হাত দিয়ে কাউকে কিছু না বলতে শপথ করান। এ সময় তিনি ভয় দেখিয়ে বলেন, ‘এই কথা বললে আল্লাহ তোমাকে দোজখের আগুনে পোড়াবেন।’

শাহজাহান মিয়া আরো জানান, বয়ানে সুবক্তা এই মাওলানার শিকার হওয়া শিশুদের সবার বয়স ৮ থেকে ১১ বছরের মধ্যে। থানায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুইটি ধর্ষণ মামলা হওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। থানায় জিজ্ঞাসাবাদে ওই শিক্ষক মোট ৮ শিশু ছাত্রীকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের কথা স্বীকার করারও ভাষ্য পুলিশের।

মাদ্রাসার শিক্ষককে স্থানীয়রা পিটুনি দিয়ে পুলিশে দেয়ার পর দ্বিতীয় শ্রেণীর এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগের কথা বললেও পরে পুলিশ বলেছে এটি ধর্ষণের ঘটনা। থানায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুইটি ধর্ষণ মামলা হওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। থানায় জিজ্ঞাসাবাদে ওই শিক্ষক মোট ৮ শিশু ছাত্রীকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের কথা স্বীকার করারও ভাষ্য পুলিশের।

পুলিশ জানায়, শুক্রবার ধর্ষণের শিকার আট বছর বয়সী মেয়েটি মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। তার মা চট্টগ্রামে গৃহকর্মীর কাজ করেন। মাদ্রাসাটির ছাত্রীনিবাসে থেকে লেখাপড়া করে সে। সকালে খায়ের মেয়েটিকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে। মেয়েটির চিৎকারে আশপাশের লোকজন গিয়ে তাকে আটক করে পিটুনি দেয়। পরে থানায় খবর দেয়া হলে পুলিশ গিয়ে খায়েরকে গ্রেপ্তার করে।