হোটেল ও ফাস্টফুডের দোকানে খাওয়ানো হচ্ছে মরা মুরগি!

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর অনেক হোটেল ও ফাস্টফুডের দোকানে খাওয়ানো হচ্ছে মরা মুরগি। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে কয়েকটি অসাধু চক্র নগরজুড়ে গড়ে তুলেছে মরা মুরগির বাজার। ব্যবসায়ী, খুচরা বিক্রেতা থেকে শুরু করে হোটেল, বাসা-বাড়িতে গড়ে ওঠা মেসের বুয়ারাও জড়িত চক্রের সঙ্গে।

প্রতিদিন সারা দেশ থেকে রাজধানীতে আসা মুরগির গাড়িগুলোতে মারা যাওয়া শতশত মুরগি কোথায় যায়? নগরীর ডাস্টবিনগুলোতে-তো কখনো এগুলোকে পাওয়া যায় না!

নাকি ফাস্টফুডের দোকান, হোটেলগুলোতে মুখরোচক সুস্বাদু যে খাবার খাওয়ানো হচ্ছে, সেগুলো তৈরি হচ্ছে এসব মুরগি দিয়ে-ই?

সম্প্রতি সারাদেশেই চলমান রয়েছে খাদ্যে ভেজাল বিরোধী অভিযান। ঠিক তখনই এক অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এলো রোমহর্ষক ব্যপারটি।

রাজধানীর ৮০ ভাগ হোটেল রেষ্টুরেন্টেই মরা মুরগি বিক্রির পাশাপাশি অভিজাত শপিংমল গুলোতেও ফ্রিজিং প্রক্রিয়ায় বিক্রি হচ্ছে এই মৃত মুরগি। হাত ঘুরে রাজধানীর বিভিন্ন মুখরোচক ফাস্ট ফুডের দোকান গুলোতেও পৌছে যাচ্ছে কম দামে। শহরের বিভিন্ন মেসবাড়িতেও একটি সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্রের মাধ্যমে পৌছে যাচ্ছে এই মরা মুরগি।

কাওরানবাজার, মোহাম্মদপুর, কাপ্তানবাজারসহ বিভিন্ন বাজারে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন কয়েক লাখ মুরগি আসে। নানা রোগব্যাধি, পরিবহণ এবং নিয়ন্ত্রণহীন তাপমাত্রার কারণে প্রতিদিনই মারা যায় কয়েক হাজার মুরগি। মৃত মুরগিগুলো ফেলে দেয়ার কথা থাকলেও সেগুলো ফেলে না দিয়ে গোপনে কমদামে বিভিন্ন মেসবাড়ি, ফাস্টফুডের দোকান, অভিজাত শপিংমল, হোটেল রেষ্টুরেন্টে সাপ্লাই দিয়ে আসছে একটি ভয়ানক সিন্ডিকেট।

একটি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন এক একটি দোকানে গড়ে ৫টি করে মুরগি মারা গেলে শুধুমাত্র কাওরানবাজারেই প্রতিদিন মারা যায় প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ মুরগি। রাজধানীর সব বাজার মিলিয়ে এই মৃত মুরগীর পরিমাণ দাঁড়ায় কয়েক হাজারে।

কিন্ত কোথায় যায় এই মৃত মুরগিগুলো? ডাস্টবিনগুলোতে ফেলার কথা থাকলেও সেখানে একটি মৃত মুরগির চিহ্নমাত্র মিললো না। ডাষ্টবিন তদারককারিদের ভাষ্যমতে, এখানে কোনো মরা মুরগী আসে না। আসে শুধুমাত্র মরা মুরগির পা-চামড়া।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাজার থেকে সংগ্রহ করা মৃত মুরগিগুলোর একাংশ বিভিন্ন মৎস্য খামারে মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এর বেশিরভাগই ব্যবহার হচ্ছে রাজধানীর বেশ কিছু অভিজাত ফাস্ট ফুড,শপিংমল ও হোটেল-রেষ্টুরেন্টে। ফাস্ট ফুড ও রেস্টুরেন্টের চিকেন গ্রিল এবং শর্মা খাওয়ার আগে অতিরিক্ত শক্ত, অতিরিক্ত ঝাঁল, জিরার ঘ্রাণ এবং হাড়ের ভিতরে মজ্জগুলো কালো। এগুলো লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে খাওয়ানো হচ্ছে মৃত মুরগি।

রাজধানীর কাওরানবাজার। প্রতিরাতেই এই বাজার দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কাঁচামালের বিকিকিনি চলে গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত। রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটা থেকে চারটা। হঠাৎ চোখে পড়লো, মূল বাজার সংলগ্ন সড়কে দূর-দূরান্ত থেকে মুরগি নিয়ে আসা গাড়ি থেকে মুরগী নামিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর পড়ে থাকা মৃত মুরগিগুলো সংগ্রহ করছে এক যুবক। কৌতুহল নিয়ে এগিয়ে গিয়ে এসব মৃত মুরগি কোথায় ফেলা হয় জানতে চাইলে যুবকের চোখে-মুখে কেমন যেন আতংকের ছাপ পরিলক্ষিত হলো। তোতলা মুখে হকচকিয়ে যাওয়া যুবকের মুখে অস্পষ্ট উত্তর, এগুলো ডাষ্টবিনে ফেলা হবে। আর পরিচ্ছন্নতাকর্মী এসে নিয়ে যাবে। প্রতিদিন প্রায় ২০-৩০টি মুরগি ডাষ্টবিনে ফেলা হয়। চলো তো দেখি, কোন ডাস্টবিনে মরা মুরগি ফেলা হয়? এমন জোরদাবি করে কিছু বুঝে উঠতে না উঠতেই হাতের কয়েকটি মরা মুরগি সেখানে ফেলেই ভোঁ-দৌড় যুবকের।

রাজধানীর অপর একটি বাজারের চিত্রে দেখা গেছে, মৃত মুরগির সন্ধানে ঘুরছে দুই-তিনজন লোক। এগিয়ে গেলো একটি মুরগির দোকানে। বিষয়টি বুঝতে তাদের পিছু পিছু অগত্যা যদি কিছু মেলে?

ঝুঁড়ি থেকে মুরগি বের করে বিক্রি করছে এক যুবক। জীবিত মুরগির দাম যেখানে দেড়’শ টাকা, সেখানে এই মুরগির দাম শুনলেই বোঝা যায় জীবিত নাকি মৃত মুরগি। তারা ৮০ টাকা দরে প্রায় শতকেজি মুরগি কিনে নিয়ে একটি ভ্যানে চাপিয়ে রওয়ানা দিতেই জিজ্ঞেস করলাম, ভাই এই মুরগিগুলো কি কাজে লাগবে? কিন্ত কোন সদুত্তর না দিয়েই ভ্যানগাড়িটি ঠেলে স্থান ত্যাগ করলেন তারা।

চোখে পড়লো নোংরা বৎসলা মধ্যবয়সী হতদরিদ্র মৃত মুরগি সংগ্রহকারি এক নারী। তবে এই মরা মুরগি দিয়ে কি করেন? তাকে জিজ্ঞেস করতেই অবলীলায় বললো, কাকা এগুলো নিয়ে বিক্রি করি। মানুষ এগুলো খায় ১০ টাকা ২০ টাকা ভাগা দিয়ে বিক্রি করি। তাছাড়া মাঝে মধ্যে কিছু লোকজন এসে কিনে নিয়ে যায়। তারা হোটেলে এগুলো রান্না করে বিক্রি করে।

বিশেষজ্ঞ মহলের দাবি, ধর্মীয়ভাবে কোন মৃত পশু-পাখির মাংস খাওয়া সম্পুর্ন হারাম। মরা মুরগির মাংস মানবদেহের জন্য বিরাট ক্ষতিকর। এ মুরগিগুলো সাধারণত নানা রোগে আক্রান্ত হয়েই মারা যায়। এই মৃত মুরগির মাংসে মারাত্মক রোগজীবাণু থাকে। ফলে এই মৃত মুরগির খেলে নানা রোগব্যাধি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।