ছাত্রীদের কৌশলে ফাঁদে ফেলে শারীরিক সম্পর্ক এবং এর ভিডিওচিত্র ধারণ করে সেটি দেখিয়ে ওই ছাত্রীদের মায়েদের সঙ্গেও একইভাবে যৌনাচার এবং মোটা অংকের অর্থ আদায় করেছেন একটি স্কুলের এক শিক্ষক। এ অভিযোগে নারায়ণঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকার অক্সফোর্ড হাইস্কুলের শিক্ষক আশরাফুল আরিফকে আটক করেছে র্যাব। একইসঙ্গে ওই শিক্ষককে মদত দেওয়ার অভিযোগে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষককেও আটক করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে স্কুলটিতে অভিযান চালিয়ে র্যাব ওই দুই শিক্ষককে আটক করে। এসময় তাদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন স্কুলটির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, মিজমিজি এলাকার অক্সফোর্ড হাইস্কুলের শিক্ষক আশরাফুল আরিফ প্রায় তিন-চার বছর ধরে পঞ্চম শ্রেণি থেকে শুরু করে দশম শ্রেণির ছাত্রীদের নানা কৌশলে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করে আসছেন। ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে সেগুলো দেখিয়ে ছাত্রীদের পরিবারকে ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়ের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমনকি ধর্ষণের ভিডিও দেখিয়ে ওই ছাত্রীদের মায়েদের সঙ্গেও একইভাবে যৌনাচার এবং মোটা অংকের অর্থ আদায় করেন। গত কয়েকদিন ধরে এ বিষয়টি স্কুলে ছড়িয়ে পড়লে অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয়রা বলছেন, এ ঘটনা জানাজানি হলে স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে তারা স্কুলে গিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক আশরাফুল আরিফের মোবাইল ফোনে ছাত্রীদের ধর্ষণের ভিডিও দেখতে পান। পরে তারা পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ ও র্যাব অক্সফোর্ড হাইস্কুলে উপস্থিত হয়। সেখান থেকে অভিযুক্ত শিক্ষকসহ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জুলফিকারকেও আটক করে। ওই স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, স্কুলের এক ছাত্রীকে ওই শিক্ষক কুপ্রস্তাব দিয়েছিলেন। মেয়েটি এ অভিযোগ করলে আমরা জানতে পারি, ওই শিক্ষক অনেক ছাত্রীকে কৌশলে ধর্ষণ করেছে এবং সেগুলো ভিডিও করেছে। ওই শিক্ষককে ধরা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। তার মোবাইল ফোনেও আপত্তিকর কোনো ছবি বা ভিডিও পাওয়া যায়নি। পরে ওই মোবাইল দোকানে নিয়ে গিয়ে ডিলিট করা ভিডিও উদ্ধার করা হয়। এসব ভিডিও ফাইলে কমপক্ষে ২০ ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ধারণ করা আছে।
এক অভিভাবক জানান, এই স্কুলে তো আমাদের সন্তানদের কোনো নিরাপত্তাই নেই। প্রশাসন যদি আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়, আমরা এই স্কুলে সন্তানদের পাঠাব না।
অন্য এক অভিভাবক বলেন, একজন শিক্ষকের কাছে শিশুদের সঙ্গে এমন আচরণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। শিক্ষকই যদি এমন অমানবিক কাজ করে বসে, তাহলে শিক্ষা দেবে কারা?
সিদ্দিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াছিন মিয়া বলেন, কয়েকজন অভিভাবক এসে আমার কাছে অভিযোগ করেন, ওই শিক্ষক তার ছাত্রীদের সঙ্গে অমানবিক কাজ করেছে। আমি তাদের আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা যেন আর না ঘটে, সে জন্য অভিযুদ্ধের বিচার ও ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবি জানান এই আওয়ামী লীগ নেতাসহ এলাকাবাসী।
র্যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আপেল উদ্দিন জানান, আটককৃত শিক্ষক আশরাফুল আরিফের মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপসহ বিভিন্ন ডিভাইস জব্দ করে কমপক্ষে ২০ জন ছাত্রীকে ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাকে মদদ দেওয়ার অভিযোগে প্রধান শিক্ষককেও আটক করা হয়েছে। ছাত্রীদের সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অনেক ছবি ও ভিডিও উদ্ধার করেছি। আরিফ একজন শিক্ষক হয়েও কৌশলে ছাত্রীদের ধর্ষণ করেছে, সে ঘটনা ভিডিও করেছে এবং তাদের ব্ল্যাকমেইল করেছে। একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি যেটা করেছেন, সেটা রীতিমতো ভয়াবহ।
আশরাফুল আরিফের মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপসহ বিভিন্ন ডিভাইস জব্দ করা হয়েছে বলে জানান র্যাব-১১-এর এই কর্মকর্তা।