দেশজুড়ে এখন শুধু একটাই আলোচনা। স্ত্রীর সামনে স্বামীকে মারা। আর তাও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল শ খানেক লোক। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসল না। এ নিয়ে এরই মধ্যে উত্তাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। রিফাত শরীফের (২২) মৃত্যুর ঘটনায় বরগুনা জেলা জুড়ে চলছে শোকের মাতম। রিফাতকে এক নজড় দেখতে তার বাড়িতে বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছিল হাজারো মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বিকাল সাড়ে ৫ টায় রিফাতের বাড়িতে জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এদিকে যখন রিফাতকে মারার বিচারের দাবিতে সারাদেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে সারাদেশ। এ ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে নানা রকম কথা বলছে লোকজন। কেউ বলছেন- রিফাত শরীফের স্ত্রী মিন্নির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল খুনি নয়ন বন্ডের। আবার কেউ বলছেন- রিফাত শরীফের আগে মিন্নির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল নয়ন বন্ডের। ফেসবুকে মিন্নির সঙ্গে নয়ন বন্ডের কয়েকটি ছবি ছড়িয়ে পড়ায় এ বিতর্ক চলছে।
এ ব্যাপারে আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি গণমাধ্যমকে বলেন, নয়ন আমাকে খুব উত্ত্যক্ত করতো। আমাকে হুমকি দিত ভয় দেখাত। আমার ভাই কলেজ রোড এলাকার একটি স্কুলে পড়ে। নয়ন আমার স্কুল পড়ুয়া ভাই এবং বোনকে মারার হুমকি দেয়। আমার বাবাকেও বিভিন্ন সময়ে হুমকি দিত। একদিন বাধ্য করে একটি বাসায় নিয়ে যায় নয়ন। পরে সেখানে বসে একটি কাগজে আমার স্বাক্ষর নেয় সে। তবে সেই স্বাক্ষর দিয়ে নয়ন কিছু করেছে কি-না আমি জানি না।
তিনি আরও বলেন, যারা আমার নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নোংরা মন্তব্য করেছে, আমি তাদের শাস্তি চাই।
মিন্নি বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে একমাত্র রিফাত শরীফের সঙ্গে। এছাড়া আমার আর কখনো কারও সঙ্গে বিয়ে হয়নি। যেহেতু বিয়েই হয়নি, ডিভোর্স হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। রিফাতই আমার স্বামী এবং এটাই সত্য। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটাই দাবি করি, যারা আমার স্বামীকে মেরেছে আমি তাদের ফাঁসি চাই।
এদিকে রিফাত শরীফের স্ত্রী মিন্নির সঙ্গে প্রধান অভিযুক্ত সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে নয়ন বন্ডের বিয়ে হয়েছিল বলে নিশ্চিত করেছেন কাজী মো. আনিসুর রহমান ভূঁইয়া। তিনি বরগুনা পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্টার। বরগুনা পৌরসভার ডিকেপি রোডের কেজি স্কুল নামক স্ট্যান্ডে তার অফিস।
নয়ন বন্ডের ও আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির বিয়ের প্রথম স্বাক্ষী রিফাত শরীফ কাণ্ডের দ্বিতীয় আসামি বাকিবুল হাসান রিফাত ওরফে রিফাত ফরাজি। গত বছরের ১৫ অক্টোবর আছরের নামাজের পর তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের দেনমোহর হয়েছিল ৫ লাখ টাকা। তবে দেনমোহরের কোনো নগদ পরিশোধ ছিল না।
কাজী মো. আনিসুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, বিয়ে করার জন্য নয়ন ও মিন্নিসহ ১৫ থেকে ২০ জন লোক আসে আমার অফিসে। এসময় নয়ন ও মিন্নি তাদের ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার প্রমাণস্বরূপ এসএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট নিয়ে আসে। এরপর আমি মেয়ের বাবার সঙ্গে কথা জানতে চাইলে তারা বলে, মেয়ের বাবা আসবে না, আপনি মেয়ের মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর মিন্নির মা পরিচয়ে একজন আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।
তিনি আমাকে বলেন, বিয়ের বিষয়টি আমরাতো জানি। মিন্নির বাবা বিয়েটা এখন মানবে না। আপনি বিয়ে সম্পন্ন করেন। বিয়ের কিছুদিন পর ঠিকই মেনে নেবেন। এরপর আমি পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে নয়ন ও মিন্নির বিয়ে সম্পন্ন করি। এ বিয়ের উকিল ছিলেন শাওন নামের একজন। শাওন ডিকেপি রোডের মো. জালাল আহমেদের ছেলে।