বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার দেশগুলোতে বেশ জনপ্রিয় ছোট আকারের গাঢ় বেগুনি ফল জাম। সুস্বাদু এই জামের কদর ছোট বড় সবার কাছে। লবণ মরিচে পাকা জাম ভর্তার অতুলনীয় স্বাদ যেকারো জিভে জল এনে দেয়। খাওয়ার মজা জাম শুধু স্বাদেই ভরপর নয় আছে অসাধারণ পুষ্টিগুণ।
প্রাকৃতিকভাবে পাকা প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যউপযোগী জামে আছে ৬০ কিলো ক্যালরি, কার্বোহাইড্রেটস ১৫.৬ গ্রাম, ফ্যাট .২৩ গ্রাম, আমিষ .৭২ গ্রাম, জলীয় অংশ ৮৩.১৩ গ্রাম, ভিটামিন এ ৩ আইইউ, ভিটামিন সি ১৪.৩ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৯ মিলিগ্রাম, লৌহ .১৯ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১৭ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৭৯ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ১৪ মিলিগ্রাম। এসব উপাদান আপনার শরীরকে সুরক্ষা দেয় নানা রোগ থেকে। উপরন্তু রোগপ্রতিরোধে শক্তিশালী করে তোলে।
১. জাম ডায়বেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। প্রতি মৌসুমে পর্যাপ্ত পরিমাণে জাম খেলে ৩০% পর্যন্ত রক্তে চিনিরপরিমাণ কমিয়ে আনে।
২. লিভারকে ক্ষতির হাত ধেকে রক্ষা করতে জাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩. জামে পর্যাপ্ত পরিমাণে বেগুণী রঞ্জকের উপস্থিতি থাকায় মানব দেহে ক্যানসার প্রতিরোধে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪. জামে থাকা উপকারী উপাদান রক্তের বিষাক্ত উপাদান বের করে দিতে সাহায্য করে।
৫. ভিটামিন ‘সি’ গরমে ঠান্ডাজনিত জ্বর, কাশি ও টনসিল ফুলে যাওয়া প্রতিরোধ করে। দূর করে জ্বর জ্বর ভাব। আর দাঁত, চুল ও ত্বক সুন্দর করতেও এর অবদান অপরিসীম।
৬. জামের ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তিকে করে শক্তিশালী।
৭. ক্যানসারের জীবাণু ধ্বংস করার জন্য জামে রয়েছে চমকপ্রদ শক্তি। জাম মুখের ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
৮. বৃদ্ধ বয়সে চোখের অঙ্গ ও স্নায়ুগুলোকে কর্মময় করতে সাহায্য করে। গর্ভবতী মা, বাড়ন্ত শিশুদের জন্যও এই ফল ভীষণ উপকারী।
৯. জামে গ্লুকোজ, ডেক্সট্রোজ ও ফ্রুকটোজ রয়েছে, যা মানুষকে জোগায় কাজ করার শক্তি।
১০. বয়স যত বাড়তে থাকে, মানুষ ততই হারাতে থাকে স্মৃতিশক্তি। জাম স্মৃতিশক্তি প্রখর রাখতে সাহায্য করে।
১১. উচ্চ রক্তচাপ বা হাইব্লাড প্রেসার ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য জাম ভীষণ উপকারী। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ও রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে জাম।
১২. দীর্ঘ দিন কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে মলদ্বারে টিউমার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। জামের বাইরের আবরণে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ। আঁশজাতীয় খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। জাম মলদ্বার বা কোলনের ক্যানসার প্রতিরোধ করে।
১৩. জামে মধ্যে পাওয়া গেছে ইলাজিক এসিড নামের এক ধরনের এসিডের উপস্থিতি, যা ত্বককে করে শক্তিশালী। ক্ষতিকর আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মির প্রভাব থেকে ত্বক ও চুলকে রা করে। এই ইলাজিক এসিড ক্ষতিকর ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। জাম লড়াই করে হৃৎপিণ্ডের অসুখ, জরায়ু, ডিম্বাশয়, মলদ্বার ও মুখের ক্যানসারের বিরুদ্ধে।
১৪. জামের কচিপাতা পেটের পীড়া নিরাময়ে সাহায্য করে। জামের বীজ থেকে প্রাপ্ত পাউডার বহুমুত্র রোগের ওষুধ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। পাকা জাম বিট লবন মাখিয়ে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা রেখে হাত দিয়ে মেখে নরম কাপড়ে ছেঁকে যে রস বের হয় তা পাতলা পায়খানা, অরুচি ও বমিভাব দূর করে।