গরম পড়েছে বেশ। শরীরটা ঘেমেনেয়ে একাকার। বিরক্ত লাগছে, আবার খানিকটা দুর্বলও। ঘাম কিন্তু স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া।
ঘামের মাধ্যমে শরীর বাড়তি তাপ হারিয়ে শীতল হয়। তাই ঘাম উপকারী। তবে কারও কারও স্বাভাবিক তাপমাত্রায় বা সামান্য পরিশ্রমেও অতিরিক্ত ঘাম
হতে দেখা যায়। মানসিক উত্তেজনা, রাগ, ভয়, উদ্বেগের কারণে ঘাম বেড়ে যেতে পারে। অতি উদ্বেগের রোগীদের হাত-পায়ের তালু বেশি ঘামে।
রাতে ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখে ঘেমে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে প্রতি রাতে ঘুমের মধ্যে ঘেমে বিছানা ভিজে যাওয়া, জ্বর জ্বর ভাব, গা ম্যাজম্যাজ থাকলে সাবধান হওয়া উচিত।
যক্ষ্মা বা লসিকাগ্রন্থির ক্যানসারে রাতে ঘাম হয়। ডায়াবেটিস রোগীরা হঠাৎ বিন্দু বিন্দু শীতল ঘামে ঘেমে উঠলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে শর্করা
কমে গেছে কি না সতর্ক হোন। এ ক্ষেত্রে তার সঙ্গে বুক ধড়ফড়, মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, হাত কাঁপুনি থাকতে পারে। এমনটি হলে দ্রুত সহজ শর্করা যেমন চিনির শরবত খেয়ে নিলে সমস্যা মিটে যাবে। দীর্ঘমেয়াদি ডায়াবেটিসের রোগীদের স্নায়ুজনিত সমস্যা হলে খাবার সময় বা পরে মাথা, কপাল, ঘাড় বেশি ঘামতে পারে।
ঘামের সঙ্গে মাঝে মাঝে বুকব্যথা, বুকে চাপ ধরার মতো সমস্যা হলে অবশ্যই হৃদ্রোগ আছে কি না নিশ্চিত হওয়া চাই। আবার থাইরয়েডগ্রন্থির সমস্যায় বেশি ঘাম হয়, তবে এর সঙ্গে ওজন হ্রাস, ডায়রিয়া, বুক ধড়ফড় ইত্যাদি আরও উপসর্গ থাকে। নারীদের মেনোপজ-পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত
ঘামতে দেখা যায়। একে হটফ্লাশ বলা হয়। হটফ্লাশের সুচিকিৎসা আছে, তাই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া ভালো। অনেক সময় কিছু ওষুধের প্রভাবেও ঘাম হয় বেশি। কারও কারও হতে পারে কফি-চা পান করার পরও।
: অতিরিক্ত গরমে বা রোদে বেশি ঘেমে গেলে মাথা ঘোরে, শরীর দুর্বল লাগে, ঝিমঝিম করে। পানি ও লবণ বেরিয়ে যায় বলে এমন লাগে। তাই বেশি ঘামলে যথেষ্ট পানি, স্যালাইন পানি, ডাবের পানি পান করুন।
: উদ্বেগজনিত সমস্যা থাকলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন। পরীক্ষা বা কোনো দুশ্চিন্তায় বেশি ঘামা, হাত-পায়ের তালু ঘামা উদ্বেগের লক্ষণ। সঙ্গে বুক ধড়ফড়ানি থাকতে পারে। মনে রাখবেন থাইরয়েড সমস্যায় প্রায় একই ধরনের উপসর্গ হয়। তাই থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা করে নিতে পারেন।
: ওজন কমান। স্থূল ও আনফিট ব্যক্তিরা সহজেই অল্প পরিশ্রমে ঘেমে ওঠেন। ফিট থাকার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
: যারা বেশি ঘামেন তাঁরা চা-কফি কম পান করবেন। অ্যালকোহলও। কোনো ওষুধ থেকে হচ্ছে কি না খেয়াল করুন।
: ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে—এটা অনেকেই খেয়াল করেন না। জ্বর আছে কি না তাই মেপে দেখুন। অতি গরমে হালকা সুতির কাপড় পরুন।
বেশি মসলা ও চর্বিযুক্ত খাবার খাবেন না। শিশুরা একটু বেশিই ঘামে। তাদের বেশি জবরজং কাপড় পরাবেন না। ঘামে ভেজা কাপড় দ্রুত পাল্টে দেবেন।