পান খাওয়াতে যে – পান পাতায় উপস্থিত একাধিক উপাদান নানাবিধ রোগের প্রকোপ হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে নানা রোগের চিকিৎসায় এই পাতাটির ব্যবহার করা হয়। জেনে নেয়া যাক কী কী রোগের চিকিৎসায় এই প্রকৃতিক উপাদানটি কাজে আসে:
১. নিমেষে মাথা যন্ত্রণা কমিয়ে ফেলে: শুনতে আজব লাগলেও একথার মধ্যে কোনও ভুল নেই যে নিয়মিত পান পাতা খাওয়া শুরু করলে শরীরের ভেতরে “কুলিং প্রপাটির” মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যার প্রভাবে মাথা যন্ত্রণা কমে যেতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, মাথা যন্ত্রণা কমাতে আরেক ভাবেও পান পাতাকে কাজে লাগানো যেতে পারে। কীভাবে? এবার থেকে যখনই মাথা যন্ত্রণা করবে, তখনই ১-২ টো পান পাতা নিয়ে কপালে লাগিয়ে ফেলবেন। দেখবেন কষ্ট কমতে সময় লাগবে না।
২. কনস্টিপেশনের মতো রোগ দূরে পালায়: বেশ কিছু গবেষনায় দেখা গেছে পান পাতায় উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে “পি এইচ লেভেল” স্বাভাবিত হতে সময় লাগে না। ফলে কোষ্টকাঠিন্য়ের মতো রোগের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না।
৩. ব্রণর প্রকোপ কমায়: পান পাতার অন্দরে উপস্থিত অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রপাটিজ একদিকে যেমন ব্রণর প্রকোপ কমায়, তেমনি স্কিন অ্যালার্জি এবং চুলকানির মতো সমস্যা দূর করতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখন প্রশ্ন হল, ত্বকের পরিচর্যায় কীভাবে কাজে লাগাতে হবে পান পাতাকে? এক্ষেত্রে কয়েকটি পান পাতা নিয়ে প্রথমে ভাল করে বেটে নিতে হবে। তারপর অল্প পরিমাণ হলুদ, পান পাতার সঙ্গে মিশিয়ে সারা মুখে ভাল করে লাগিয়ে কম করে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। সময় হয়ে গেলে ধুয়ে ফেলতে হবে মুখটা।
৪. ওজন হ্রাসে সাহায্য করে: যে কোনও অনুষ্টান বাড়িতে মহাভোজের পর পান পরিবেশন করার রেওয়াজ রয়েছে কেন জানেন? কারণ পান পাতায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আমাদের বিপাক প্রক্রিয়াকে জোরদার করে। সেই সঙ্গে হজমে সহায়ক রসের ক্ষরণ বাড়িয়ে দিয়ে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। এখানেই শেষ নয়, পান পাতায় উপস্থিত ফাইবার, কনস্টিপেশন দূর করে এবং শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বিকে গলিয়ে দেয়। ফলে একাধারে যেমন ওজন হ্রাস পায়, তেমনি নানাবিধ শারীরিক সমস্যাও কমতে শুরু করে।
৫. ক্ষত সারাতে কাজে দেয়: পান পাতায় রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এই উপাদানটি যে কোনও ক্ষত সারিয়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে ক্ষতস্থানে প্রথমে অল্প করে পান পাতার রস দিয়ে দিন। তারপর তার উপর কয়েকটি পান পাতা রেখে ব্য়ান্ডেজ দিয়ে বেঁধে দিন। এমনভাবে ১-২ দিন থাকলেই দেখবেন ক্ষত একেবারে সেরে গেছে।
৬. অবসাদ কমাতে এবং মন ভাল করতে কাজে আসে: যারা মারাত্মক মানসিক চাপে ভুগছেন তারা আজ থেকেই পান পাতা খাওয়া শুরু করুন। কারণ এতে উপস্থিত বেশ কিছু প্রাকৃতিক উপাদান নিমেষে মন ভাল করে দেয়। সেই সঙ্গে ডিপ্রেশন কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে রাতের খাবার শেষ করে ১-২ টো পান পাতা চিবোলেই দারুন উপকার পাওয়া যায়।
৭. জয়েন্ট পেন: পলিফেনাল নামে এক ধরনের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে পান পাতায়, যা প্রদাহ বা যন্ত্রণা কমাতে দারুন কাজে আসে। সেই কারণেই তো আর্থ্রাইটিস রোগীদের পান পাতার রস লাগানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
৮. মুখের গন্ধ দূর করে: মুখ গহ্বরে উপস্থিত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াদের মেরে ফেলে মুখের বদ গন্ধ দূর করতে পান পাতার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে পান পাতা চেবানোর সময় প্রচুর মাত্রায় স্যালাইভা তৈরি হয়, যা গন্ধ সৃষ্টিকারি ব্যাকটেরিয়াদের মেরে ফেলে। সেই সঙ্গে পি এইচ লেভেলকে স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসে। ফলে গন্ধ একেবারে গায়েব হয়ে যায়।
৯. গলা ব্যথা কমায়: অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকার কারণে গলা ব্যথা এবং ঠান্ডা লাগার মতো সমস্যা কমাতে পান পাতা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন পান পাতার সঙ্গে অল্প করে মধু খেলে গলার সংক্রমণও দূর হয়। তাই আবহাওয়া বদলের সময় যারা খুব রোগে ভুগে থাকেন, তারা এমন সময় সঙ্গে পান পাতা রাখতে ভুলবেন না।
১০. বদ হজমের সমস্যা দূর করে: যারা প্রায়শই বদ হজমে ভুগে থাকেন, তারা আজ থেকেই পান পাতা খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন দারুন উপকার পাবেন। কারণ এতে রয়েছে গ্য়াস্ট্রো প্রটেকটিভ এজেন্ট। সেই সঙ্গে রয়েছে অ্যান্টি-ফ্লটুলেন্ট এবং কার্মিনেটিভ এজেন্ট, যা স্যালিভারি জুসের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে হজম ক্ষমতার যেমন উন্নতি ঘটে, তেমনি খাবারে উপস্থিত খনিজ এবং বাকি পুষ্টিকর যাতে ঠিক মতো শরীর দ্বারা শোষিত হয় সেদিকেও খেয়াল রাখে। ফলে সার্বিকবাবে শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে একাধিক রোগও দূরে পালায়।