সোরিয়াসিস চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি

মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে-প্রত্যঙ্গে বিশেষ করে ত্বকে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যা মানুষের শরীরের ত্বক বা স্কিনের সৌন্দর্যকে বিকৃত ও বিনষ্ট করে। আরোগ্যের জন্যও সুন্দর চিকিৎসা আছে। যিনি রোগ দিয়েছেন তিনি আরোগ্যর সুন্দর ব্যবস্থাও দান করেছেন। বিজ্ঞানভিত্তিক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় সোরিয়াসিস ও চর্ম জাতীয় রোগের আরোগ্য সম্ভব। সোরিয়াসিস চর্মের একটি জটিল ও কঠিন সমস্যা। এটি অনেকটা একজিমা সাদৃশ্য। চর্মের ওপর শুষ্ক ক্ষত হয় এর ওপর আঁইশের মতো হয়, শুকিয়ে ভুসির ন্যায় খসে পড়ে, কড়াই চটকার ন্যায় ছাল ওঠে।

অনেক ক্ষেত্রে সোরিয়াসিসে চুলকানী থাকে চুলকালে মধুর মতো ঘন রস বের হয়। লাল বর্ণের চ্যাপটা উদ্ভেদ বের হয়ে তা হতে খোলস ওঠতে থাকে। যা খুব পাতলা আঁইশের মতো বা খুশকির মতো একেই সোরাইসিস বলে।

সোরিয়াসিসের কারণ:

১) সঠিক কারণ এখনো অজানা

২) জীবানু সংক্রামন

৩) লিভার ক্রিয়ার গোলযোগ থাকলে

৪) হোমিওপ্যাথিক দৃষ্টিকোন থেকে সোরা ধাতু দোষই হলো মূল কারণ,

৫) শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব

৬) খাদ্যাখাদ্য

৭) পুষ্টির অভাব

৮) শীত প্রধান অঞ্চল

৯) কালো লোকদের তুলনায় সাদা-ফর্সা লোকদের বেশি হয়

লক্ষণ:

১) ছোট-বড় নানা আকারে লাল বর্ণের একটি-অনেক গুলো ম্যাকুল-প্যাঁচ দেহের নানা স্থানে প্রকাশ পায়

২) ঈষৎ ধূসর বর্ণের চকচকে প্রচুর আঁশ ওঠে

৩) কোনো প্রকার ফুশকুড়ি হয় না, রস পড়ে না

৪) প্যাঁচ মিলিয়ে গিয়ে আবারও আসে, কোনো কোনো প্যাঁচ দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়। অতিরিক্তি চুলকালে ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে মধুর ন্যায় আঠালো রস বের হয়

৫) ক্ষত মিলিয়ে যাওয়ার পর কোনো দাগ থাকে না

৬) আঁইশ ওঠিয়ে দিলে তার নীচটা মসৃণ ও শুষ্ক দেখায়

৭) শরীরের প্রায় সবখানেই হয়ে থাকে, অত্যাধিক বেশি হলে পুরো শরীরে হয়ে থাকে

৮) নখ আক্তান্ত হলে নখের চারপাশে ও নখের নীচে ঘন আঁশ জমে নখ মোটা, ভেঙে যায় ও বিকৃত হয়ে যায়, বিবর্ণ দেখায়, নখ ফাংগাস ইনফেকশনের মতো দেখায়

৯) যাদের সোরিয়াসিসের সঙ্গে রিউমেটিক আর্থাইটিস থাকে তাদের ভয়ানক কষ্ট ভোগ করতে হয়। গায়ে সামান্য সূর্যতাপ লাগলে বা কোনো উত্তেজক বস্তুর সংস্পর্শে গেলে রোগী অস্বস্তিবোধ করে

১০) কদাচিৎ কোনো কোনো রোগীতে সর্বাঙ্গের ত্বক আক্রান্ত হয়ে লাল প্রদাহ জন্মায় এবং তাহার ওপর পাতলা আঁশ স্তরে স্তরে জমা হয়।

সোরিয়াসিস রোগ নির্ণয় :

প্রথম দর্শনে এ রোগ নির্ণয় করা কঠিন, কারণ অন্য চর্ম রোগের সাথে ভুল হওয়া খুব স্বাভাবিক।

মাথার সোরিয়াসিসের সাথে মাথার খুশকি পার্থক্য করতে হবে।

অন্য চর্ম রোগের আঁশের সাথে এর পার্থক্য করতে হলে এর আঁইশ খুবই পাতলা, চকচকে, রুপালি কালারের ন্যায় হয়।

এতে মাথার চুল নষ্ট হয় না, জট হয় না।

সোরিয়াসিসের সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকতে পারে, সিফিলিস, একজিমা, নখের ফাংগাস ইনফেকশন, ক্যান্সারের সাথে পার্থক্য করে জেনে নিতে হবে। সোরিয়াসিস থেকেও স্কিন ক্যান্সার হতে পারে।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা : পাঠক ও সোরিয়াসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে মনে রাখতে হবে যে, সর্বদায় হোমিওপ্যাথি ওষুধ লক্ষণভিত্তিক নির্বাচিত। আর ওষুধ, মাত্রা ও শক্তি একজন চিকিৎসকের পক্ষেই নির্বাচন করা সম্ভব।

চিকিৎসকের পরামর্শ : রোগীকে সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে

*পরিষ্কার নরম জামা পড়তে হবে।

*রৌদ্রে, গরমে ও উত্তেজক স্থানে যাওয়া যাবে না।

*নিমপাতার গরম পানিতে গোসল করতে হবে

*পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে

*টাটকা সবুজ শাকসবজি খেতে হবে। ফাস্ট ফুড ও এলার্জি জাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে।