যেভাবে পানি বাহিত- “মনে হয় কেয়ামত চলে আসলো” আমার একজন সহকর্মী দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল। আমি তার সাথে একমত হতে পারলাম না। উপরে “সূয্যিমামা” এবং নীচে পানি বাহিত রোগ, উপর নিচ ‘কড়াই’ এর মত। ডায়ারিয়ার ৪ মিলিয়ন ঘটনার ক্ষেত্রে ৮৮ ভাগই অনিরাপদ পানি পান করার জন্য, অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যের জন্য হয়ে থাকে।
আমরা বাসায় যে পানি সাধারনত ব্যবহার করে থাকি তা নলকূপের অথবা টিউবওয়েলের মাধ্যমে আসে মাটির নিচ থেকে। বেশীরভাগ পানিই পরিবেশ দূষন এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল জনিত কারনে নিরাপদ নয় বরং দূষিত, এবং প্রচুর মাইক্রোবায়াল জীবানু থাকে (ব্যাকটেরিয়া , ভাইরাস) এবং কিছু রাসায়নিক (লিড, নাইট্রেট, আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম, এবং ফ্লোড়াইড) থাকে।
বিষাক্ত ব্যাকটেরিয়া , রাসায়নিক, এবং ভারী জিনিস আমাদের প্রাকৃতিক উৎস গুলোকে দূষিত করে। তাই নিরাপদ থাকার জন্য আমাদের পানিকে বিশুদ্ধ করতে হবে। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাঝে সিদ্ধ করার প্রক্রিয়াটি সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত কিন্তু সবচেয়ে উন্নত হচ্ছে পরিস্রবন বা রিভার্স অসমোসিস। অন্যান্য গুলোর মাঝে আছে ফিল্টার, পিউরিফিকেশন বা বিশুদ্ধকরন, হ্যালোট্যাব, ফিটকিরি চিকিৎসা ইত্যাদি।
সিদ্ধ: সিদ্ধ বেশীরভাগ জীবানু ধ্বংস করে কিন্তু কঠিন পানি (স্থায়ী কঠোরতা) সিদ্ধ করার মাধ্যমে ঠিক করা যায়না। কার্যকরী সিদ্ধের জন্য আপনার ৩০ মিনিট সিদ্ধ করতে হবে (অথবা যতক্ষন না পর্যন্ত বুদবুদ উঠার পর ১৫ মিনিট হয়) তারপর এটাকে ঠান্ডা হতে দিন এবং একটি পরিষ্কার পাত্রে রেখে ঢেকে দিন। আপনি একটি ঠান্ডা করার জন্য একটি বাকেট কিনতে পারেন। এটা পানিকে ঠান্ডা রাখবে সর্বনিম্ন কম জীবানু রেখে। সিদ্ধ পানি একদিনের মাঝে খেয়ে ফেলতে।
ফিল্টার: ফিল্টারের সবচেয়ে আধুনিক হচ্ছে UV চিকিৎসা । চিকিৎসার আধুনিক পদ্ধতি, বিখ্যাত অভিনেত্রীদের দ্বারা তৈরী, পানি বাহিত রোগের বিরুদ্ধে খুব কার্যকরী। অন্যান্য ফিল্টার গুলোর মাঝে হচ্ছে সিরামিক ফিল্টার অথবা সিরামিকের তৈরী ফিল্টার। তাদেরও খুব উচ্চ কার্যকরী ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাকটেরিয়া এবং জীবানু ধ্বংস করার ক্ষমতা আছে। সিরামিক ফিল্টার সম্পর্কে CDC ওয়েবসাইটে পড়ুন।
রাসায়নিক বিশুদ্ধকরন: আমরা হ্যালোট্যাব ব্যবহার করতে পারি, ক্লোরট্যাব ট্যাবলেট, ব্লিচিং পাউডার, অথবা ফিটকিরি ব্যবহার করতে পারি ছোট স্কেল এর জন্য যেখানে ফিল্টার করা অথবা সিদ্ধ করা প্রায় অসম্ভব।এটা কীভাবে ব্যাবহার করতে হয় তা বাংলা এবং ইংরেজী দুভাবেই আছে। ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ঠিক করতে প্রথমেই ৪মিলিলিটারের একটি দ্রবন তৈরী হয় এক চা চামচ ব্লিচিং পাউডার দেওয়ার মাধ্যমে। এই দ্রবন ১০০ গ্যালন পানি বিশুদ্ধ করতে পারে। কর্দমাক্ত পানি বিশুদ্ধ করায় অ্যালাম ব্যাবহৃত হয়। ২-৫ গ্রাম অ্যালাম দিয়ে ১ গ্যালন পানি বিশুদ্ধ করা যায়।
কৌতুকীয় ব্যাপার: আমরা WASA থেকে যে পানি পাই তা ক্লোরিন দিয়ে বিশুদ্ধ করন হয়ে থাকে। কিন্তু সমস্যা হল এই নদীর পানি বিশুদ্ধ করতে প্রচুর পরিমান ক্লোরিন দিতে হয় যা চুল পরার কারন হয়ে থাকে। এখানে আরো পড়ুন: এই মৌসুমি বায়ুতে চুলের সমস্যা।
পানি বিশুদ্ধকরনের সবচেয়ে আধুনিক যা মানুষের হৃদয়ে যায়গা করে নিয়েছে তা হল রিভার্স অসমোসিস বা পরিস্রবন। এটা ছোট স্কেল এবং বড় স্কেল উভয় ক্ষেত্রেই কার্যকরী। পরিস্রবনে ব্যবহৃত মেমব্রেনে যে পরিমানে ছিদ্র থাকে তা সহজেই খনিজকে ধরে ফেলতে পারে। তারা উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এবং ৯৯ শতাংশ জীবানু তারা ধরে ফেলতে পারে।
কিছু ব্যাসিক পরামর্শ: আপনার চারপাশে স্বাস্থ্যকর এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা পালন করুন। আপনার হাত সাবান দিয়ে ধৌত করুন যেন ব্যাকটেরিয়া এবং জীবানু না থাকে জীবানুর ছড়িয়ে পরা কে নিয়ন্ত্রনে রাখতে বিশেষ করে টয়লেটের পর। অন্য মানুষের গ্লাস দিয়ে পানি পান করা পরিহার করুন।
পাবলিক পুকুরে গোসল করা , সাঁতার কাটা উপেক্ষা করুন।
ধরে নিবেন না যে বোতলের সব পানিই ভাল এবং ট্যাপের পানির চেয়ে নিরাপদ। বোতলের পানির মেয়াদের তারিখ চলে যেতে পারে, তাই পান করার পূর্বে সবসময় লেভেলিং দেখে নিবেন। যদি আপনার অভিযোজন ক্ষমতায় কোন সমস্যা থাকে তবে পানি পান করার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সচেতনতা পালন করবেন। যদি আপনি এমন কোন ঔষধ নিয়ে থাকেন যা আপনার অভিযোজন ক্ষমতাকে দূর্বল করবে (স্টেরয়েড) অথবা যদি যদি আপনার অঙ্গ প্রতিস্থাপন হয় তবে পানি বাহিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী হবে।
আপনি ধারাবাহিকভাবে ICDDR,B অথবা DGHS ওয়েবসাইটে চোখ রাখতে পারেন চিকিৎসা এবং পরামর্শের জন্য (যদি কখনো DGHS ওয়েবসাইটকে আধুনিক করে) যদি আপনি হঠাত করে নিরাপদ পানির সরবারহ না পান তবে কমপক্ষে ২০ মিনিট পানি ফুটিয়ে খান।
পশু-পাখির খাচা এবং মুরগীকে পানির উৎস থেকে দূরে রাখুন। এইসব প্রানি থেকে দূষিত পদার্থ পানির সাথে মিশে পানিকে দূষিত করতে পারে যা পরবর্তীতে মানুষের শরীরে বিভিন্ন জীবানু দ্বারা আক্রমন করবে যার ফলে ডায়ারিয়া এবং লেপ্টোস্পিরোসিস, টক্সোপ্লাজমোসিস, গরম জীবানু ( টেপওর্ম, হুকওর্ম), সিস্টিসারকোসিস, সালমোনেল্লা, এবং গিয়ারডায়াসিস হতে পারে। আপনার পানিতে কঠিন রাসায়নিক, ডিটারজেন্ট, অথবা কীটনাশক দিবেন না। যেসব পদার্থ পানি বাহিত রোগ এবং অন্যান্য অসুস্থ্যতা সৃষ্টি করে। ভ্রমনের পূর্বে নিশ্চিত হন যে আপনার খাবার পানি আছে, একটি বহনযোগ্য ফিল্টার নিয়ে যাবার চেষ্টা করুন । আপনি ক্লোরিন ট্যাবলেটও নিয়ে যেতে পারেন।