কথায় বলে মাথা থাকলে মাথার ব্যথাও থাকবে। অথার্ৎ মাথাব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা। প্রতিটি মানুষেরই জীবনে কখনো না কখনো মাথাব্যথা হয়েছে। আমরা অনেক সময় এ মাথাব্যথা নিয়ে ভাবি না। কিন্তু যদি ব্যথাটা হয় তীব্র, যা সাধারণত আমরা অতীতে কখনো বোধ করিনি অথবা সামান্য দীঘর্স্থায়ী যা অনেকদিন ধরে আমাদের যন্ত্রণা দিচ্ছেÑ তখন আমাদের কাছে মাথাব্যথাটা আর মামুলি থাকে নাÑ হয়ে ওঠে মাথাব্যথার কারণ। এ মাথাব্যথা নিয়েই আজ আমাদের মাথাব্যথা। মাথাব্যথার অনেক কারণ লিখতে গেলে কলম-কাগজ সব ফেল মেরে যাবে। আজ আমরা শুধু দেখব এ মাথাব্যথার পেছনে চোখের কী ভূমিকা আছে। চোখের যেসব সমস্যায় মাথাব্যথা হয়Ñ তা সাধারণত নিম্নরূপÑ
চক্ষু গোলকের নিজস্ব রোগ বলতে বুঝি সাধারণত বিভিন্ন রকম প্রদাহ। এসব প্রদাহ সাধারণত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাক সংক্রমণে সৃষ্ট। এসব ক্ষেত্রে মাথাব্যথার সঙ্গে চোখের ব্যথা থাকবে। কখনো কখনো চোখের ব্যথার তীব্রতা মাথাব্যথাকে ছাড়িয়ে যায়। আর মাথা এবং চোখ ব্যথার পাশাপাশি চোখ লাল হওয়া, চোখ ফুলে যাওয়া বা চোখ থেকে পানি পড়া ইত্যাদি অবশ্যই থাকবে। কয়েকটি উদাহরণ দেয়া হলো যেমনÑ চোখের পাতার রোমক‚পের প্রদাহ কনির্য়ার প্রদাহ বা কনির্য়ায় ঘা, নেত্রনালির ইনফেকশন; চোখের কোনো বস্তু ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে চোখের ব্যথা। ওইদিকের মাথাব্যথা থাকতে পারেÑ তবে চোখের উপসগর্গুলোই প্রধান।
চোখের উচ্চচাপ বা গøুকোমা
গøুকোমা অনেক রকমের হয়। কিছু কিছু গøুকোমার ধরন রয়েছে সেখানে চোখ প্রচÐ ব্যথা হয়, চোখ লাল হয়ে যায়, ঝাপসা হয়ে যায় ইত্যাদি। এসব গøুকোমার আক্রমণে চোখের দিকের মাথার অংশেও ব্যথা হয়। ব্যথাটা প্রচÐ, সঙ্গে বমিও হয় সাধারণত অনেক সময় এ ধরনের গøুকোমার রোগী মেডিসিন বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হয়ে মাথাব্যথা আর বমি নিয়ে বিচক্ষণ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ নিজেই চোখের সমস্যা ধরে ফেলতে পারেন, তখন তিনি রোগীকে পাঠিয়ে দেন চক্ষু চিকিৎসকের কাছে।
আরেক ধরনের গøুকোমা আছে যেখানে চোখে ঝাপসা, লাল বা ব্যথা কিছুই হয় নাÑ শুধু চশমার প্রতি অসহনশীলতা। দেখা যায়, নতুন চশমা নিলে কিছুদিন ভালো চলেÑ পরে ওই চশমায় আর চলছে নাÑ একটু ঝাপসা হয়ে আসছে আর একটু একটু মাথাও ব্যথা হচ্ছেÑ ব্যথাটা হচ্ছে মাথার সামনের দিকে, কপালের ওপরেÑ বিশেষ করে কোনোকিছু মনোযোগ দিয়ে পড়ার সময়। রোগী চক্ষু চিকিৎসকের কাছে যান চিকিৎসক চশমা পাল্টে দেনÑ আর কিছুদিন ভালো আবার তথৈবচ। এমন অবস্থায় চোখের উচ্চচাপের কথাটি বিশেষজ্ঞের মাথায় থাকা উচিত।
চোখের আঘাত
চোখের যে কোনো ধরনের আঘাত তা সে ধারালো বস্তু দিয়েই হোক বা ভেঁাতা শক্ত বস্তু শক্তি দিয়েই হোক চোখ এবং চোখের দিকে মাথার অংশে ব্যথা হবে। চোখে কোনো বস্তু (ফরেন বডি) পড়লে তা থেকেও চোখ এবং মাথাব্যথা হয়।
চোখের পাওয়ারজনিত সমস্যা
অনেক ক্ষেত্রে চোখের পাওয়ারের সমস্যা প্রকাশ পায় মাথাব্যথা দিয়ে। সাধারণত মাথার সামনের দিকে কপালের উপরিভাগে এবং দুদিকে ব্যথা হয়। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ভালো- আস্তে আস্তে সকাল পেরিয়ে দিন যত গড়ায়, কাজের ব্যস্ততা যত বাড়ে মাথাব্যথা আস্তে আস্তে তত মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে। সঙ্গে একটু বমি বমি ভাব অথবা মাথা ঘুরানো থাকতে পারে। এসব উপসগর্ দিনের শেষভাগে বাড়ে রাতে ঘুমিয়ে সকালে উঠে আবার ভালো। আবার দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাথাব্যথাও জেগে ওঠে। তবে সপ্তাহান্তে ছুটির দিন স্কুলে পড়া নেই, অফিসের ফাইলে নেই মাথাব্যথা। এসব ক্ষেত্রে একটু একটু আন্তরিকতার সঙ্গে ধৈযর্ ধরে রোগীর সমস্যা শুনলে যে কোনো ডাক্তার বিষয়টি ধরে ফেলতে পারবেন। রোগীকে প্রয়োজনীয় চশমার পরামশর্ দিলে অনেক ক্ষেত্রেই এ ধরনের মাথাব্যথা সরে যায়।
অনেক চোখে ঝাপসা বা কম দেখেন এবং বিশেষ করে চল্লিশোধ্বর্রা কাছের কোনো লেখাপড়ার সময় ঝাপসা দেখেনÑ কিছুক্ষণ পড়ার পর আস্তে আস্তে মাথা ধরে যায়। চশমাই এসব মাথাব্যথার মোক্ষম অস্ত্র। শিশুরা অনেক সময় মাথাব্যথা বলে, স্কুলে যেতে চায় না, পড়তে বসে মাথাব্যথায় কঁাদেÑ অভিভাবকরা প্রথমেই বাচ্চার পড়ার ফঁাকি দেয়ার কথা না ভেবে চোখের সমস্যার কথা ভাবুনÑ ঘুরে আসেন একবার কাছের চক্ষু ডাক্তারের কাছ থেকেÑ কোনো কিছু না পাওয়া গেলে আপনি ভাবতে পারেন যা ভেবেছিলেন।