সকালে খালি পেটে- অনেকেই পেট ঠান্ডা রাখতে মেথি ভেজানো পানি পান করেন। তবে সত্যিই কি মেথি ভেজানো পানি উপকারী?
কয়েক দশক ধরে দেশ-বিদেশে হওয়া একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, মেথি বীজে রয়েছে একাধিক উপকারি উপাদান, যা নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে।
তাই যারা নিয়মিত মেথি ভেজানো পানি খান, তারা তা অব্যাহত রাখতে পারেন।
নিয়মিত মেথি ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারিতাঃ
কোলেস্টেরল কমে
মেথির শরীরে থাকা স্টেরিওডাল সেপোনিনস নামক একটি উপাদান কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
তাই মেথি ভেজানো পানি পান করলে হার্টের আর্টারি আটকে গিয়ে হঠাৎ করে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমে পায়।
এছাড়া গ্লেকটোম্যানান নামক একটি উপাদানের খোঁজ পাওয়া যায় মেথির শরীরে।
এই উপাদানটি হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
সেই সঙ্গে এই উপদানে উপস্থিত পটাশিয়াম, রক্তে লবনের পরিমাণ কমায়।
ফলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে হার্ট অ্যাটাক এবং অন্যান্য হার্টের রোগ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে শূন্যে এসে দাঁড়ায়।
সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে
কম বয়সেই ব্লাড সুগার যদি ঊর্ধমুখি থাকে তাহলে নিয়মিত মেথি ভেজানো পানি খাওয়া উচিত। এমনটা করলে শরীরে গ্লেকটোমেনানের পরিমাণ বাড়তে থাকে, যা শর্করার শোষণের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। ফলে সুগার লেভেল বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
মেথিতে উপস্থিত অ্যামাইনো অ্যাসিড ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
এই কারণেও ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না।
হজমের উন্নতি
ভোজন-রসিক বাঙালি অল্প-বিস্তর পেটের রোগে আক্রান্ত…এটা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই গ্যাস-অম্বল রোজের বন্ধু হবে, এ আর নতুন কথা কী!
কিন্তু একটা সহজ উপায়ে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটাতে পারেন। মেথি বীজ গ্রহণ করলে বাওয়েল মুভমেন্টে উন্নতি ঘটে।
ফলে পেট সংক্রান্ত আর কোনো সমস্যাই থাকে না। আসলে মেথিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা
হজমের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। নিয়মিত সকালে খালি পেটে মেথি ভেজানো পানি খেলে কনস্টিপেশনের সমস্যাও অনেকাংশে দূর হয়।
ওজন কমায়
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে, পানিতে ভেজানো মেথি বীজ খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীরে ফাইবারের মাত্রা বাড়তে শুরু করে।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষিদে কমে যায়। এমনটা হওয়ার কারণে খাওয়ার পরিমাণেও লাগাম পরে। ফলে ওজন কমতে শুরু করে।
জ্বরের প্রকোপ কমায়
আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে শরীর ভেঙেছে? সেই সঙ্গে জ্বরের এমন ঠেলা যে বিছানা ছাড়তে পারছেন না?
তাহলে এক গ্লাস করে মেথি বীজের পানি পান করা শুরু করুন, দেখবেন দারুন উপকার মিলবে। মেথিতে থাকা বেশ কিছু উপকারি উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এতটাই শক্তিশালী করে তোলে যে জ্বরের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না।
সর্দি-কাশি সারাতেও এই ঘরোয়া চিকিৎসাটির কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে।
ক্যান্সার রোগ দূরে থাকে
রক্তে জমতে থাকা টক্সিক উপাদানের মাত্রা বাড়তে থাকলে শরীরের অন্দরে ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
আর এখানেই মেথি বীজের ভূমিকাকে অস্বীকার করা যায় না।
এই প্রকৃতিক উপাদানটি রক্তে ভেসে বেরানো টক্সিক উপাদানগুলোকে শরীর থেকে বার করে দেয়।ফলে ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনাই থাকে না। সূত্র : বোল্ড স্কাই।
রক্তে চিনি কমাতে কীভাবে ব্যবহার করবেন মেথি?
রক্তে চিনি বাড়ছে? ডায়াবেটিসের জন্য মিষ্টি বন্ধ? দিনদিন বুড়িয়ে যাচ্ছেন?
হাতের নাগালেই মুশকিলে আসান। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একগ্লাস মেথির পানি খেলে শরীরে ফিরবে শক্তি।
হার্টও থাকবে ভালো। এছাড়া স্বাদ যতই তেতো হোক, ডায়াবেটিসের জম মেথি।
মশলা, খাবার, পথ্য। থ্রি ইন ওয়ান। কী এই থ্রি ইন ওয়ান? শাক হোক বা বীজ, ম্যাজিকের একটাই নাম। মেথি।
সকালে খালি পেটে একগ্লাস মেথির জল বা রান্নায় মেথি বা মেথি শাক। খান, আর চমক দেখুন। স্বাদ যতই তেতো হোক,
ডায়াবেটিসের যম মেথি। রক্তে চিনি কমাতে কীভাবে ব্যবহার করবেন মেথি?
মেথি খাওয়ার আগে প্রথমে ডাক্তারের পরামর্শ নিতেই হবে। দিনে দুবার ২.৫-১৫ গ্রাম মেথি খেতে হবে। তেতো মেথি পছন্দ না করলে মেথি সাপ্লিমেন্ট খাওয়া যেতে পারে।
ক্যাপসুল আকারে পাওয়া যায় মেথি। সেটি খাওয়া যেতে পারে। খাবারের সঙ্গে মেথি মিশিয়ে খেতে হবে। খাওয়া যেতে পারে মেথির চা। হালকা গরম পানিতে মেথি
মিশিয়ে ভালোই খাওয়া যেতে পারে। তবে শুধু মেথি খেলেই হবে না। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
৬ মাসের বেশি মেথি খাওয়া যাবে না। কারণ, বেশি মেথি খেলে কিছু সাইড এফেক্ট
হতে পারে। ডায়ারিয়া, গ্যাস বা পেটের গন্ডগোল। অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুদের মেথি না খাওয়াই ভাল।
শুধু ডায়াবেটিস নয়। মেথি মহৌষধ। মেথির রসে সাপোনিস ও ডায়োজেনিন নামে যৌগ
পদার্থ আছে। মানুষের শরীরে হরমোনের পরিমাণ বাড়ায়। প্রতিদিন পরিমিত মেথির রস খেলে পুরুষের যৌনক্ষমতা বাড়ে।
মেথিতে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, ফাইবার, আয়রন, পটাসিয়াম, ভিটামিন সি ও
নিয়াসিন। ত্বককে রাখে সতেজ, টানটান বার্ধক্য দূরে ঠেলে তারুণ্যকে দীর্ঘস্থায়ী করে।
ভেজা পরিষ্কার কাপড়ে মেথিদানা গুঁড়ো করে ফোড়া, পোড়া ও বিভিন্ন চর্মরোগে ব্যবহার
করলে উপকার মেলে। মুখের ব্রণ, কালো দাগ, ফুসকুড়ি উধাও হয়।
মেথি স্ট্রোকের প্রবণতা অনেকটা কমে যায়। সকালে খালি পেটে মেথিদানা চিবিয়ে খেলে ওজন কমে।
লেবু ও মধুর সঙ্গে মেথিদানা গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে গলাব্যথা ও কাশি কমে।
দেহের বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে।
মেথি বেঁটে চুলে লাগালে চুল পড়া কমায়, চুল ঘন হয়। খুসকি কমায়, চুল হয় আরও উজ্জ্বল।
তবে মেথি ভিজিয়ে পিষলে পুষ্টি নষ্ট হয়ে যায়। রোদে শুকিয়ে নিয়ে খেলে মচমচে
লাগবে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি চিবিয়ে বা একগ্লাস পানিতে মেথি মিশিয়ে খান আজ থেকেই। উপকার পাবেন হাতেনাতে।