মাদারীপুরের সেই কাকলীর পাশে এমপি ও জেলা প্রশাসক

গত ১৯ জুলাই এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। ফলে এবারও পরীক্ষা শেষ হওয়ার দুমাসের মধ্যেই প্রকাশিত হলো এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল।এ বছর এইচএসসিতে পাসের হার ৬৬.৬৪ শতাংশ।গতবারের তুলনায় কম। ফেলের সংখ্যা অনেক বেশি। চলতি বছর এইচএসসিতে শিবচর উপজেলার একমাত্র জিপিএ-৫ প্রাপ্ত অতি দরিদ্র পরিবারের অদম্য মেধাবী কাকলী আক্তারের ভবিষ্যত লেখাপড়া চালিয়ে যেতে আবারো পাশে দাড়িয়েছেন আওয়ামী লীগ সংসদীয় পার্টির সেক্রেটারী ও অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি নূর-ই আলম চৌধুরী এমপি।

লেখাপড়া চালিয়ে যেতে শিক্ষা অনুদান ছাড়াও কাকলীর ঘর সংস্কার,সৌর বিদ্যুৎ স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনকে। সংসদ সদস্যে নূর-ই-আলম চৌধুরীর ছোটবোন নিপা চৌধুরীর পরিচালিত তারেক হায়দার ট্রাস্ট ঘোষনা দিয়েছেন অব্যাহত শিক্ষা বৃত্তির। উপজেলা ও জেলা প্রশাসনও বৃত্তির ঘোষণা দিয়েছেন।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইমরান আহমেদ জানান, অদম্য মেধাবী কাকলী শিবচর উপজেলা থেকে এবছর এইচএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ৫.০০ পেয়েছে। তাই কাকলীর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে তাকে সবধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য নূর-ই-আলম চৌধুরী।

এছাড়াও দরিদ্র এই মেধাবী মেয়েটিকে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক জনাব মো: ওয়াহিদুল ইসলাম তাৎক্ষনিকভাবে ১৫হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য প্রদান করেন এবং উচ্চতর পড়া-শুনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এছাড়া মাদারীপুর জেলা পরিষদ হতে ৫ হাজার টাকা ও শিবচর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পক্ষ থেকে ১০হাজার টাকা শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাসহ ভর্তির সকল খরচ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও এ সংবাদ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর দেশের সরকারী-বেসরকারী চাকুরীজীবি ও ব্যবসায়ীরা কাকলীকে আর্থিক অনুদানের আশ্বাস দিয়েছেন। সংসদ সদস্য জনাব নূর-ই-আলম চৌধুরী মহোদয় তার নিজস্ব তহবিল থেকে আর্থিক সাহায্য ও গৃহ নির্মানের জন্য টিন প্রদান করেন এবং সোলার লাইট ও ফ্যান প্রদানের ব্যবস্থা করেন।

এছাড়া এমপি মহোদয়ের বোন নিপা চৌধুরীর শিক্ষা কল্যান ট্রাস্টের মাধ্যমে শিক্ষার যাবতীয় খরচ বহন করা হবে।

রোববার দুপুরে মাদারীপুর জেলা পরিষদের সদস্য আয়শা সিদ্দিকা কাকলীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং এমপি পক্ষ থেকে তাঁর পক্ষে ফুলের তোড়া তুলে দেন।

উল্লেখ্য, কাকলীকে উপজেলা পরিষদ শিক্ষা তহবিল হতে এসএসসি ও এইচ.এস.সি পর্যায়ে শিক্ষা বৃত্তি প্রদান করা হয়েছিলো। এছাড়াও র‌্যাবের ডিজি বেনজির আহমেদের পক্ষ থেকে মাদারীপুর ক্যাম্পের অধিনায়ক কাকলীর বাড়িতে এসে ফুল দিয়ে স্বাগত জানিয়ে নগদ অর্থ,মিষ্টি ও নতুন পোশাক দেন।

র‌্যাবের ডিজির পক্ষ থেকে বাড়িতে এসে ফুলের তোড়া দিয়ে কাকলীকে শুভেচ্ছা জানান, র‌্যাব -৮ মাদারীপুর ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন মোঃ খালেদ মাহমুদ। এসময় নগদ ১০ হাজার টাকা, মিষ্টি ও নতুন পোশাক তুলে দেন কাকলীর হাতে। আগামীতেও র‌্যাবের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ^াস করেন। এছাড়াও কাকলী ও অধ্যক্ষর মুঠোফোনে দেশ বিদেশের অসংখ্য পাঠক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

অদম্য মেধাবী কাকলী আক্তার বলেন, কলেজে ভর্তি -পরীক্ষা ফি, বেতন কিছুই নেয়নি। কলেজ কর্ত্তৃপক্ষ, এমপি সাহেব ও তাঁর বোনের বৃত্তিতে এ পর্যন্ত এসেছি। উপজেলা থেকেও অনুদান পেয়েছি। তবে ফলাফলের পর টাকার অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্ততি নিয়ে খুবই দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম। সংবাদটি প্রচার হওয়ার পর অনেক মানুষ পাশে দাড়িয়েছে।

ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ হাফিজুল্লাহ মিয়া বলেন, সংসদ সদস্য নিজে আমাকে ফোন দিয়ে কাকলীর খোজখবর নিয়েছে। সে নিজে ও তার বোন পরিচালিত তারেক হায়দার ট্রাস্ট কাকলীর শিক্ষা জীবন নির্বিঘ্ন করতে সব পদক্ষেপ আগেও নিয়েছে আরো নেবে।

এছাড়া বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পর যে সাড়া পড়েছে তা এক কথায় অবিশ্বাস্য । সংবাদ প্রকাশের পর থেকে এ পর্যন্ত শুধু ফোন আর ফোন। প্রায় ২শতাধিক মানুষ ফোনে কাকলীকে সাহায্য করবে এ আশ্বাস দিয়েছেন। সকলেই চান, অদম্য এই মেধাবী যেন জীবন সংগ্রামে জয়ী হয়।

এর আগে কান্নাজরিত কন্ঠে কাকলি বলেছিলেন, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খুব ইচ্ছা। কিন্তু আমার বাবা -মাতো পারে না আমার পড়ার খরচ বহন করতে। তাই জানি না কি আছে আমার ভাগ্যে। তবে আমি পড়তে চাই।’অনেকদূর এগোতে চাই। অামার পরিবারের অভাব অনাটন দূর করতে চাই বড় হয়ে।আমি পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে চাই।