বিয়ের পর প্রত্যেক দম্পতির পরম আকাঙ্ক্ষা থাকে সন্তান নেয়ার। অনেকেই অনেক পরিকল্পনা করেন। কারও বাস্তবায়ন হয়, কারও ‘পরী’ উড়ে গিয়ে শুধু কল্পনা থেকে যায়। অনেক চেষ্টার পরও সন্তান হচ্ছে না। আবার অনেকেই সন্তান নিতে চাচ্ছেন, কিন্তু ঠিক কিভাবে, বুঝে উঠতে পারছেন না। সন্তান নেয়ার আগে কোন বিষয়ে জানা জরুরি, আজ সে বিষয়ে আলোচনা করা হলো—
> আমাদের দেশে বাল্যবিয়ের হার এখনো অনেক বেশি। তাই নারীদের ক্ষেত্রে প্রথম যেটা লক্ষ্য রাখতে হবে তা হলো বিয়ে যেন ১৮ বছরের পর এবং সন্তান যেন কখনই ২০ বছরের আগে না হয়। ২০ বছরের আগে নারীর শারীরিক বৃদ্ধি সম্পূর্ণ হয় না। ফলে এর আগে সন্তান নিলে বাচ্চার নানা ধরনের অপুষ্টিজনিত রোগ ও সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় অ্যাবরসন হয়ে যায়। বাচ্চার বডি স্ট্রাকচার ঠিক মতো হয় না।
> আবার উল্টোটাও আছে। অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে চাকরি শুরুর পর বিয়ে করতে গিয়ে অনেক মেয়ের বয়স ২৫ পেরিয়ে যায়। তাই ২৬ বছরের পর দেরি না করে সন্তান নিয়ে নেয়া উচিত। দুই সন্তান নেয়ার ক্ষেত্রে তাদের মাঝে দুই থেকে তিন বছর পার্থক্য রাখা উচিত, যা মায়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য দরকার।
> অনেক ক্ষেত্রে ৩৫ বছর পেরিয়ে গেলে দেখা যায় সন্তান আর হতে চায় না। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন এসব নানা রোগ দেখা যায়, আর বাচ্চা অ্যাবনরমাল হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। তাই প্রথম সন্তান নেয়ার ক্ষেত্রে মায়ের বয়স কত, সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মেয়েদের বয়স ২০ বা ২১ বছর হলে তার কিছুদিন অপেক্ষা করে সন্তান নেয়া উচিত। কিন্তু, মেয়েদের বয়স ২৮ হয়ে গেলে ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে দেরি করা উচিত না।
> যারা দেরিতে মা হতে চান অর্থাৎ ৪০ বছরের বেশি বয়স হলে আপনার গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে মাত্র ৫ ভাগ। আর ৪০ বছরের বেশি বয়স্ক নারীদের প্রতি পাঁচজনের ভেতর মাত্র একজনের স্বাভাবিকভাবে মা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
> এছাড়া ৪০-৪৪ বছরের ভেতরে নারীদের গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে ৩৪ ভাগ। তবে ৪০ বছরের নিচে যারা ৬ মাস ধরে চেষ্টা করেও মা হতে পারছেন না তারা ফার্টিলিটি এক্সপার্ট দেখালে ফল পেতে পারেন।
> বেশি বয়সে সন্তান হলে মা এবং সন্তান উভয়েরই সমস্যা হতে পারে। সাধারণত ৩৫ বছরের বেশি বয়সে সন্তান জন্ম দেয়াটাই বিপজ্জনক। এতে করে শিশু নানা প্রকারের শারীরিক সমস্যা নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে। আর মায়ের ক্ষেত্রে, তার ডায়াবেটিকস হয়ে যেতে পারে। ব্লাড প্রেশার বেড়ে যেতে পারে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে সময়ের আগেও পানি ভেঙে যেতে পারে। এতে করে ব্লিডিং হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
> জন্ম নিয়ন্ত্রণের অনেক পদ্ধতি রয়েছে। কেউ কেউ জন্ম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পিল খেয়ে থাকেন। আবার কেউবা কনডম ব্যবহার করেন। জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিলগুলো সাধারণত এক ধরনের সিনথেটিক হরমোনের মাধ্যমে কাজ করে। তাই কেউ দীর্ঘদিন পিল সেবন করলে একটা আস্তর পড়ে যেতে পারে, যা পিল নেয়া বন্ধ করলেও সন্তান জন্ম দিতে অসহযোগিতা করতে পারে। তবে কনডম ব্যবহারের ফলে এ আশঙ্কা নেই বললেই চলে।
> প্রথম সন্তান নেয়ার জন্য মেয়েদের ২৫ বছর উপযুক্ত সময়। আর ৩৫ বছর বয়সের পরে সন্তান না নেয়াটাই ভালো। সাধারণত ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত ঝুঁকিহীন হয়ে সন্তান জন্ম দেয়া যায়।