শরীরের রক্তকে বিশুদ্ধকরণের জন্য কিডনি হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তাই কিডনি সবসময় স্বাভাবিক ভাবে কাজ করে কিনা তা জানার জন্য কিডনির বিভিন্ন লক্ষণগুলোর উপর আমাদের নজর রাখা এবং সজাগ থাকা অত্যন্ত জরুরি।
কিডনির অস্বাভাবিক ক্রিয়া
কিডনির অস্বাভাবিকতা গুরুত্বর স্বাস্থ্য সমস্যার কারন হতে পারে। এখানে কিছু সূচক এবং লক্ষণ বা উপসর্গ উল্লেখ করা হলো যেগুলো দেখা দিলে কিডনিকে সুস্থ রাখার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
ঘাম : কিডনি ও মূত্রনালী শরীরের পানির ভারসাম্য রক্ষার কাজ করে তাই যদি দেখা যায় খুব বেশি ঘাম হচ্ছে বা একেবারেই হচ্ছেনা তখন বুঝতে হবে যে কিডনির কাজে কোন ব্যাঘাত ঘটছে। যারা সাধারণত বেশি ঘামেন তারা সৌন্দর্যবোধ সংক্রান্ত কারনে অস্বস্থিবোধ করেন। তাই অত্যাধিক ঘামের জন্য একটি প্রাকৃতিক সমাধান বের করতে হবে এবং সেই সাথে কিডনির কার্যকারিতা ঠিক আছে কিনা তা দেখার জন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
দেহে শক্তির অভাব দেখা দিলে : অত্যাধিক শারীরিক ও মানসিক কাজের পর ক্লান্ত লাগা স্বাভাবিক।তবে যদি এই অবস্থার সময়টা খুব বেশি বাড়তে থাকে তবে অবশ্যই তা স্বাভাবিক নয়। আবার যদি দেখা যায় কোন কারন ছাড়াই দীর্ঘ সময় ক্লান্ত লাগে সেটাও স্বাভাবিক নয়। অলসতা ও ক্লান্ত লাগাও কিডনি ও লিভারের কাজের অস্বাভাবিকতাই প্রকাশ করে। তাই কিডনির ক্ষতিকর পদার্থ দূর করতে প্রাকৃতিকভাবে শরীরকে পরিষ্কার করা ও বিষাক্ততা দূর করার ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে তা নাহলে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
শরীরে তরল জমে ফুলে যাওয়া : আমরা জানি যে কিডনি শরীরের তরল পদার্থকে নিয়ন্ত্রিত করে। তাই কিডনির ত্রুটিপূর্ণ কাজের ফলে শরীরের এক অংশের তরল অন্য অংশে গিয়ে জমা হতে পারে। বিশেষ করে পা, পাকস্থলী, চোখের কোল ও চোখের পাতায় তরল জমা হয়ে ফুলে যেতে পারে। এই উপসর্গগুলো দেখা দিলে বুঝতে হবে যে কিডনি ভালো ভাবে কাজ করছে না এবং দেরী না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
শ্রবণশক্তির সমস্যা: শুনে যদিও অবাক লাগতে পারে তবুও কিছু ব্যাপার রয়েছে যেমন কানে শুনতে সমস্যা হওয়াও কিডনির কাজের অপ্রতুলতা প্রকাশ করে। এই ব্যাপারটি তাদের জন্যই জরুরি যাদের মাঝে মাঝে শ্রবণশক্তি কমে যায়। তাই এই অবস্থায় কিডনির কার্যকারিতা প্রাকৃতিকভাবে উন্নত হবে এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত।
কোমরের নিচে কটিদেশে ব্যাথা
সাধারণত কোমরের নিচের দিকে যেখানে কিডনি থাকে সেখানে চাপ দিলে যদি ব্যাথা বা কোন ধরনের অস্বস্থি অনুভূত হয় তাহলে তাহলে বুঝতে হবে যে কিডনি যততুকু ভালো কাজ করা উচিত ততটা ভালো কাজ করছেনা। তাই কোমরের নিচের দিকের ব্যাথা হলে তা উপেক্ষা না করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
হাঁটুতে ব্যাথা : কিডনি সাধারণত জয়েন্টগুলোর বিশেষ করে হাঁটুর সুস্থতার সাথে যুক্ত। যদি সাধারণ কোনো কারন ছাড়াই হাঁটুতে ব্যাথা অনুভব করেন তাহলে বুঝতে হবে কিডনিতে কোন সমস্যা হতে পারে। তাই হাঁটু ব্যাথা হলে দ্রুত ব্যাথার কারন খুঁজে বের করা এবং তা চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে।
লবনাক্ত খাবারের ইচ্ছা বেড়ে যাওয়া: মাঝে মাঝে দেখা যায় যে নির্দিষ্ট কিছু খাবার যেমন মিষ্টি, ঝাল, লবনাক্ত, মশলাযুক্ত ইত্যাদি খাবারের ইচ্ছা হঠাৎ বেড়ে যায়। শরীরে নির্দিষ্ট কিছু ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থের অভাবের কারনে এমন হতে পারে। তাই যদি লবনাক্ত খাবারের ইচ্ছে হঠাৎ করে বেড়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে কিডনির কাজ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় শক্তির অভাবে এমন হয়ে থাকে। তাই এসব পরিস্থিতিতে এর কারন জানা খুবই প্রয়োজন তা নাহলে শরীরের অবস্থা গুরুতরভাবে খারাপ হতে পারে।
কিভাবে রক্ষা করবেন কিডনি
যদি কারো কিডনির গুরুত্বর সমস্যা থাকে তবে প্রাকৃতিক চিকিৎসা শুরু করার আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ এর পরামর্শ নিতে হবে। তবে কারো যদি তেমন গুরুত্বর সমস্যা না থাকে তাহলে প্রাকৃতিক উপায়ে কিডনিকে বছরে একবার পরিষ্কার করা উচিত। বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপায় রয়েছে কিডনির বিষাক্ততা দূর করার জন্য যেমন-
-কিডনির জন্য বিশেষ চা।
-কিডনির প্রদাহের জন্য জুস এবং পেঁয়াজের স্যুপ।
-বিষাক্ততা দূর করার জন্য ফল ও সবজির প্রাকৃতিক জুস।
-কোমরের নিচের দিকে যেখানে কিডনির অবস্থান সেখানে গরম সেঁক দেয়া।
-কিডনিতে পাথরের চিকিৎসার জন্য বিশেষ চা।
ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে কোন উপায় কার জন্য সঠিক তা জেনে কিডনির বিষাক্ততা দূর করার ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। আর গুরুত্বর অবস্থায় অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।