বর্ষায় প্রকৃতিতে জলীয়বাষ্প বেশি থাকে। ঠাণ্ডা-গরম ও গুমোট, স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় ভাইরাসজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় তারাই বেশি ভুক্তভোগী। বর্ষার রোগবালাই থেকে নিরাপদ থাকতে শিকদার মেডিক্যাল কলেজের প্রধান পুষ্টিবিদ আশফি মোহাম্মদের পরামর্শ তুলে ধরেছেন ফাতিমা জান্নাত
জ্বর, সর্দি, কাশির মতো ভাইরাসজনিত অসুখ সাধারণত ছোঁয়াচে হয়। পরিবারের একজনের হলে অন্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই পরিবারের কারো সর্দি, কাশি বা জ্বর হলে শিশুকে তার কাছ থেকে দূরে রাখুন। শিশুর ঠাণ্ডা-জ্বর হলে তরল ও সহজপাচ্য খাবার খেতে দিন। লেবুর শরবত বা মৌসুমি টক ফলের জুস খাওয়ান। সাধারণত তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে জ্বর কমে যায়। পাঁচ দিনের বেশি জ্বর থাকলে অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে। ডায়রিয়া, আমাশয়ের মতো পেটের অসুখ বর্ষাকালে খুব বেশি দেখা দেয়। এসব পেটের অসুখের জীবাণু পানি থেকে ছড়ায়। তাই শিশুসহ পরিবারের সবাইকে সচেতনভাবে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। এ ছাড়া খাবার প্লেট, গ্লাস, বাটি ইত্যাদি বাসন পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিন। বাইরের সব ধরনের খাবার ও পানীয় পরিহার করতে হবে। স্কুলগামী শিশুরা যেন বাইরের খাবার না খায় সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। খাবার আগে শিশুকে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করানো খুব জরুরি। এর পরও শিশু ডায়রিয়া বা আমাশয়ে আক্রান্ত হলে বেশি করে খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি ভাতের মাড়, চিড়ার পানি, স্যুপ, ডাবের পানি, জাউভাতের মতো তরল ও সহজপাচ্য খাবার দিতে হবে। তিন দিনের বেশি ডায়রিয়া স্থায়ী হলে ডাক্তারের পরামর্শমতো ওষুধ খাওয়াতে হবে। জন্ডিস, টাইফয়েডের মতো অসুখগুলো শিশুস্বাস্থ্যের জন্য বেশ ক্ষতিকর। এসব রোগও পানিবাহিত, তাই নিরাপদ পানি ব্যবহারে বর্ষার বেশির ভাগ রোগ দূরে রাখা সম্ভব। বর্ষার ক্ষতিকারক রোগের তালিকায় আরো আছে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু। জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে মশা জন্মায় বলে মশাবাহিত এসব রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় এই মৌসুমে। এই রোগ থেকে শিশুকে বাঁচাতে রাতের বেলায় মশারি টানিয়ে ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে। দিনের বেলা ঘুমালেও শিশুকে মশারির ভেতর রাখুন। মশার বংশবিস্তার রোধে বাড়ির আশপাশের জলাধার, ফুলের টব অথবা বৃষ্টির পানি জমে থাকতে পারে—এমন জায়গা পরিষ্কার রাখতে হবে।
সারা বছর কৃমির সমস্যা থাকলেও বর্ষায় এর প্রাদুর্ভাব বেশি। পানি আর কাদামাটিতে মিশে থাকে কৃমির পরজীবী জীবাণু। তাই অন্য যেকোনো ঋতুর তুলনায় বর্ষায় খুব সহজেই কৃমির সংক্রমণ ঘটে। এ সময় পরিবারের শিশুসহ সবাইকে কৃমির ওষুধ সেবন করা উচিত।
বৃষ্টির পানি ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় ঘামাচি, র্যাশ, একজিমা, চুলকানিসহ ত্বকের বিভিন্ন অসুখ হতে পারে। ঘামে শরীর দীর্ঘক্ষণ ভেজা থাকলে, ভিজা কাপড় ভালোভাবে না শুকিয়ে ব্যবহার করলে কিংবা স্যাঁতসেঁতে ঘরের কারণে ত্বকের বিভিন্ন অসুখ হতে পারে। তাই বর্ষার এই অসুখ থেকে নিরাপদ রাখতে শিশুর শরীর সব সময় শুকনা রাখুন। ঘামে ভেজা পোশাক যত দ্রুত সম্ভব বদলে দিন। শিশুর পোশাক, তোয়ালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও শুকনা রাখতে হবে। বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেলে কিংবা গোসলের পর শরীর ও মাথা ভালোভাবে মুছে দিন। এ ছাড়া হাত-পায়ের আঙুল ও আঙুলের ফাঁকে ভালোভাবে ধুয়ে দিতে হবে। রাস্তার জমে থাকা বৃষ্টির পানি এড়িয়ে চলতে হবে। শিশুর প্রতিদিন ব্যবহারের স্যান্ডেল বা জুতা ভালোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে রাখতে হবে। এর পরও ত্বকের যেকোনো সমস্যায় যত দ্রুত সম্ভব চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।
সতর্কতা
♦ এই মৌসুমে খাদ্য তালিকায় ভিটামিন ‘সি’র পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। শিশুকে মৌসুমি ফলমূল বেশি করে খেতে দিন। ভিটামিন ‘সি’ শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। জ্বর ও সর্দি-কাশির প্রকোপ কমায়।
♦ বৃষ্টিতে ভিজে গেলে যত দ্রুত সম্ভব বাড়ি ফিরে শিশুকে কুসুম গরম পানিতে গোসল করিয়ে দিন। গোসলের পর শুকনা পোশাক পরিয়ে কুসুম গরম দুধ খেতে দিন। শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা দ্রুত ফিরে আসবে।
♦ প্রচুর পানি খেতে দিতে হবে। শিশুকে দিনে দেড় থেকে দুই লিটার পানি ও পানীয় খাওয়াতে হবে।
♦ রাতে শোবার আগে এক গ্লাস কুসুম গরম দুধে এক চিমচি হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে শিশুকে খাওয়ান। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
♦ শিশুর স্কুলব্যাগে ছাতা ও রেইনকোট দিন। শিশুকে রেইনকোটের ব্যবহার শিখিয়ে দিন।