বরিশালে পাসপোর্ট করতে গিয়ে গত ১৫ জানুয়ারি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন চার রোহিঙ্গা। সৌদি আরবে পাঠানোর জন্য পাসপোর্ট করাতে তাদের কক্সবাজার থেকে বরিশাল নিয়ে যান দালালেরা। নড়াইল পাসপোর্ট অফিস থেকে গত ১০ এপ্রিল এক দালাল ও দুই রোহিঙ্গা নারীকে আটক করে পুলিশ। ৩৫ হাজার টাকায় দালালের মাধ্যমে তারা পাসপোর্ট করতে চেয়েছিলেন। রাজশাহী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে গত ৪ এপ্রিল এক রোহিঙ্গা তরুণীকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় পাসপোর্ট অফিসের তিন দালালকেও আটক করা হয়। ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গা তরুণীকে পাসপোর্ট করিয়ে দিতে চেয়েছিলেন দালালেরা।
পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রের বরাতে প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে এসব বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট করিয়ে দিতে দেশব্যাপী একটি চক্র গড়ে উঠেছে। এই চক্রে পাসপোর্ট অফিসের কিছু কর্মচারী-কর্মকর্তা, দালাল ও পুলিশের মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা জনপ্রতি ৩০-৩৫ হাজার টাকা নিয়ে রোহিঙ্গাদের হাতে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ধরিয়ে দিচ্ছেন।
বিষয়টি স্বীকার করে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাসুদ রিজওয়ান বলেছেন, ‘ভুল তথ্য দিয়ে রোহিঙ্গারা হরহামেশা পাসপোর্ট নিচ্ছে। এটা ঠেকানো যাচ্ছে না।’
বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দর্শনায় আটক হওয়া পাঁচ রোহিঙ্গার মধ্যে চারজন পুলিশের সুপারিশ ছাড়া এবং একজন সুপারিশের ভিত্তিতে পাসপোর্ট পেয়েছেন। তারা নিজেদের চুয়াডাঙ্গা, মুন্সিগঞ্জ ও ফেনী জেলার স্থায়ী বাসিন্দা দেখিয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কুমিল্লার আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছিলেন। রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশি হিসেবে দেখিয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহের আবেদনের ফরমে সুপারিশ (স্বাক্ষর) রয়েছে ফেনী জেলার চার পুলিশ কর্মকর্তার। আর কোনো রকম ঠিকানা যাচাই-বাছাই ছাড়াই রোহিঙ্গাদের এমআরপি পাসপোর্ট দিয়েছেন অধিদপ্তরের কুমিল্লা কার্যালয়ের তৎকালীন উপসহকারী পরিচালক মহের উদ্দিন শেখ।
অন্যদিকে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক মহের উদ্দিন শেখ কুমিল্লা থেকে বদলি হয়ে এখন ময়মনসিংহ আঞ্চলিক কার্যালয়ে কর্মরত। রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেওয়ার বিষয়ে জানতে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
বাংলাদেশি সেজে পাসপোর্ট পাওয়া রোহিঙ্গার আবেদন ফরমে সুপারিশ রয়েছে ফেনী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ শাহীনুজ্জামানের। তবে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন।
সম্প্রতি ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে দুই থেকে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বিদেশে চলে গেছে। সেখানে রোহিঙ্গারা নানা ধরনের অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়ছে, বাংলাদেশিদের কাজের পরিবেশ নষ্ট করছে।
ঠিকানা যাচাই না করে পাসপোর্ট দেওয়ার ব্যাপারে কড়াকড়ি করলেই ভুয়া ঠিকানায় পাসপোর্ট করার প্রবণতা কমে যাবে বলে মনে করেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘পাসপোর্ট নিয়ে যত দুর্নীতি হয়, তার মূলে থাকে পুলিশের ঠিকানা যাচাইয়ের ব্যাপারটি। তাই ঠিকানা যাচাইয়ে স্বচ্ছতা আনতে হবে।’
এদিকে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশেষ ক্ষেত্রে ঠিকানা যাচাই ছাড়াই পাসপোর্ট দেওয়ার যে নিয়ম রয়েছে, রোহিঙ্গারা তার সুযোগ নিচ্ছে।
অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় যাওয়া বেশির ভাগই বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজারের ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। তারা নিজেদের কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, রামু, মহেশখালী উপজেলার বাসিন্দা বলে দাবি করছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘পাসপোর্ট করতে গেলে আঙুলের ছাপ নেওয়ার সময়ই রোহিঙ্গাদের ধরা পড়ে যাওয়ার কথা। প্রথম দিকে তারা অবাধে পাসপোর্ট পেলেও এখন আর পাচ্ছে না।’